দুইভাগে বসন্ত উৎসব পালনের উদ্যোগের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হয়ে গেল চট্টগ্রামের প্রথম আবৃত্তি সংগঠন বোধন আবৃত্তি পরিষদ।
Published : 12 Feb 2019, 09:56 PM
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ডিসি হিল চত্বরে পহেলা ফালগুন বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে আসছিল বোধন। আর দিনব্যাপী উৎসবটি এ অঞ্চলের অন্যতম বড় উৎসবে পরিণত হয়।
‘অভ্যন্তরীণ বিরোধ’ বোধন আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হবার পর এবারে ডিসি হিলের বদলে একপক্ষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে ও অপরপক্ষ আমবাগান শেখ রাসেল মাঠে বসন্ত উৎসবের পৃথক আয়োজন করেছে।
বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে একটি পাণ্ডুলিপি পাঠকে কেন্দ্র করে আদর্শিকভাবে বিভক্তি শুরু হয় চট্টগ্রামের সর্বপ্রথম এই আবৃত্তি সংগঠনটি। যেটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে নগর পুলিশের বিষেশায়িত ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজম।
৯০’র দশকে যাত্রা শুরু হওয়া বোধন আবৃত্তি স্কুলের আমৃত্যু অধ্যক্ষ ছিলেন রণজিৎ রক্ষিত। গত বছরের অক্টোবরে তার মৃত্যুর পর সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে বিরোধ প্রকট হয়ে ওঠে।
গত ১৫ ডিসেম্বর বোধন আবৃত্তি পরিষদ আয়োজিত নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশের ঘটনাকে ‘নির্মম গণহত্যা’ উল্রেখ করে আবৃত্তি করা নিয়ে বিরোধ প্রকাশ্যে আসে।
বোধন আবৃত্তি পরিষদের সদ্য বিলুপ্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুজিত রায় একটিতে এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম আব্দুল আজিজ আছেন আরেক পক্ষের সাথে।
সুজিত রায়দের পক্ষের লোকজন স্থায়ী কমিটি ভেঙ্গে নিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি আবদুল হালিম দোভাষকে আহবায়ক করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করে। অপরপক্ষ কোন কমিটি না করলেও নিজেদের বোধন আবৃত্তি পরিষদ হিসেবে রেখে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
২০০৫ সাল থেকে শুরু হওয়া বসন্ত উৎসব এবছরই প্রথম আলাদাভাবে আয়োজন করছে বোধন আবৃত্তি পরিষদ।
শহীদ মিনার চত্ত্বরে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে আবদুল হালিম দোভাষ নেতৃত্বাধীন বোধন। আর আম বাগান শেখ রাসেল মাঠে আয়োজনকারীদের পক্ষে আছেন সাধারণ সম্পাদক এস এম আব্দুল আজিজ নেতৃত্বাধীন বোধন আবৃত্তি পরিষদ।
তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে কথামালা, আবৃত্তি, দলীয় সংগীত, নৃত্যসহ নানা আয়োজন রয়েছে, অনুষ্ঠান চলবে রাত আটটা পর্যন্ত।
বোধনের আমবাগান এলাকার বসন্ত উৎসবে বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় সমবেত আবৃত্তির মধ্য দিয়ে বসন্ত উৎসবের শুরু হবে। সকাল আটটা থেকে বেলা ১১টা এবং বেলা তিনটা থেকে রাত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলবে।
এ উৎসবের আয়োজকরা বলেন, ঢোল বাদন, গান, কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য ও বিশিষ্টজনদের কথামালার মধ্য দিয়ে রাঙানো হবে বসন্তের এ আয়োজন।
শহীদ মিনারের উৎসবের আয়োজকদের একজন ও বোধন স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রণব চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমরাই মূল পক্ষ এবং শহীদমিনারের অনুষ্ঠানই বোধনের মূল বসন্ত উৎসব।
‘‘বোধন আবৃত্তি পরিষদ থেকে বহিস্কৃত একটি পক্ষ আলাদা ভাবে আমবাগান শেখ রাসেল মাঠে উৎসব করছে। তাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।’’
শেখ রাসেল মাঠের বসন্ত উৎসবের আয়োজক ও অপরপক্ষের সংগঠক সোহেল আনোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধে চেতনার বিরোধীতাকারীদের সমর্থন দিয়েছে তারাই আলাদাভাবে অনুষ্ঠান করছেন।
তিনি বলেন, বোধনের গঠনতন্ত্রে আছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সদস্যরা আপোষহীন থাকবে। কিন্তু নির্বাচনের আগে গত ১৫ ডিসেম্বর ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী’ পান্ডুলিপি পাঠ করেছেন। আমরা বিরোধীতা করেছি সেটার। কিন্তু একটি পক্ষ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের পক্ষ নিয়েছেন।
সোহেল আনোয়ারের দাবি, বোধন পৃথক হয়নি। সভাপতিসহ কিছু সদস্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধীতাকারীদের পক্ষ নিয়েছেন।
এদিকে প্রনব চৌধুরী জানান, গত সপ্তাহে ‘সুধী সমাবেশ’ আয়োজন করে সেখানে বোধনের ১১ সদস্যের নতুন একটি আহবায়ক কমিটি ঘোষণা দেয়া হগয়েছে। এর দায়িত্বে আছেন আব্দুল হালিম দোভাষ।
সোহল আনোয়ার বলেন, আমাদের বহিস্কারের কোন সুযোগ নেই তাদের। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোন সদস্যকে বহিস্কার করতে হলে নির্বাহী পরিষদ, স্থায়ী কমিটির বৈঠক করে কাউন্সিল করতে হবে। কাউন্সিল না করে কমিটি বিলুপ্ত কিংবা কাউকে বহিস্কারের কোন সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, শুদ্ধ উচ্চারণ ও আবৃত্তিচর্চায় নিরলসভাবে বোধন কাজ করে যাচ্ছে নব্বই দশকের শুরু থেকেই। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বোধন আবৃত্তি পরিষদ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, বাঙালি জাতীয়বাদের চেতনা প্রতিষ্ঠায় তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভূমিকা রেখে আসছিল।
শুদ্ধ উচ্চারণ ও আবৃত্তি শিক্ষায় বোধনের রয়েছে নিয়মিত আবৃত্তি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও। বোধন আবৃত্তি স্কুলের ব্যানারে বর্তমানে ছয়মাসের এ প্রশিক্ষণ কর্মশালার ৫১তম আর্বতন চলছে।
সংগঠন ভাগ হবার পর আবৃত্তি স্কুলও পৃথকভাবে পরিচালিত হচ্ছে।