বিরূপ আবহাওয়া কারণে চট্টগ্রামের শতবর্ষী জব্বারের বলী খেলা ঘিরে শুরু হওয়া বৈশাখী মেলায় কেনাবেচা নিয়ে ব্যবসায়ীরা শঙ্কায় রয়েছেন।
Published : 25 Apr 2017, 05:08 PM
বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী, প্রতি বছর বৈশাখের ১২ তারিখ (২৫ এপ্রিল) ঐতিহ্যবাহী ‘বলী খেলা’ ঘিরে আগে-পরেসহ তিন দিন চট্টগ্রামে বৈশাখী মেলা চলে।
এবার ১০৮তম জব্বারের বলী খেলার আয়োজনের আগের দিন বৃষ্টির কারণে মেলা শুরুই হতে পারেনি। মঙ্গলবার সকালে রোদ উঠার পর বিক্রেতারা পণ্য নিয়ে বসতে শুরু করেছেন।
মেলা পুরোদমে শুরু হলেও থেকে থেকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে স্বাভাবিক কেনাবেচাও হচ্ছে না বলে এসব ব্যবসায়ীরা জানান।
লালদিঘী মাঠের চারপাশ ঘিরে প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে এবারের মেলা। বিভিন্ন জেলার মানুষ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ‘স্বকীয়’ পণ্য নিয়ে হয়েছেন।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়া থেকে একতারা, ডুগডুগি ও প্রেমকুড়িসহ নানা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে মেলায় এসেছেন শেখ স্বপন।
তার স্টলের সামনে বেশ ভিড় দেখা গেলেও বেশি দাম চাওয়ার অভিযোগ করে ফিরে যাচ্ছিলেন ক্রেতারা।
প্রায় ১২ বছর ধরে এ মেলায় আসা শেখ স্বপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেলার প্রথম দিন বৃষ্টির কারণে বসতে পারিনি। আজ সকাল থেকে বসলেও কখন যে আবার বৃষ্টি শুরু হয় সেই ভয়ে আছি।”
গতবারের তুলনায় মেলায় বেচাকেনা কম বলে অনুযোগ করে তিনি বলেন, “আবহাওয়ার কারণে বিক্রি কম হলেও মেলা আরও একদিন চলবে। ঝড়বৃষ্টি না হলে আশা করি ভালোই বিক্রি করতে পারব।”
ছোটদের খেলনা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় গৃহস্থালি পণ্যের পসরা নিয়ে মেলায় এসেছেন ব্যবসায়ীরা। সকাল থেকে মেলায় আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীর মধ্যে নারীর সংখ্যাই ছিল বেশি।
নগরীর চাঁন্দগাও থেকে মেলায় আসা গৃহিণী নাহিদা খানম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বাড়ির নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস কিনতে প্রতিবছরই এই মেলায় আসেন।
“এবার মেলায় চমৎকার কারুকাজ আছে এমন ফুলদানি খুঁজছি। কিন্তু যেগুলো পাচ্ছি সেগুলোর দাম বেশি। আশা করছি নাগালের মধ্যে পেয়ে যাবো।”
প্রতিকূল আবহাওয়ায় কাঙ্খিত পরিমাণে বিক্রি হবে না বলে শঙ্কায় আছেন শরিয়তপুর থেকে ঢোলসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে প্রথমবারের মতো মেলায় আসা কাজী সজল।
তিনি বলেন, “বাপ-চাচারা আসত এতদিন। এইবার আমি আসছি। আমাদের ঢোল বানানোর কারখানা আছে।
প্রায় দশ বছর ধরে মেলায় আসা কুমিল্লার আবদুল মালেক বলেন, “বিক্রি হবে সে আশায় আছি। আজকের দিনটা ভালো যাবে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যে যদি আবার বৃষ্টি শুরু হয় তাহলে আসা-যাওয়ার খরচও তুলতে পারব না।”
বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ আর বাঙালি যুবকদের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা এবং শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আবদুল জব্বার এ বলী খেলার প্রবর্তন করেন।
তার মৃত্যুর পরে এ খেলা পরিচিতি পায় জব্বারের বলী খেলা নামে। সেই থেকে প্রতি বছর একই তারিখে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী এ বলী খেলা।