ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে মনোযোগ দিতে চান ইংল্যান্ডের বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান।
Published : 04 Aug 2023, 07:51 PM
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল হয়ে থাকল ইংল্যান্ডের হয়ে অ্যালেক্স হেলসের শেষ ম্যাচ। ফ্রাঞ্চাইজি লিগে মনোযোগ দিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী হিসেবে অবসরে গেলেন ৩৪ বছর বয়সী হেলস। দেশের হয়ে তিনি সবশেষ খেলেন গত বছর নভম্বরে, পাকিস্তানের বিপক্ষে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে।
এক দিকে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের তুমুল ব্যস্ততা, অন্য দিকে জাতীয় দলের দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ। এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনতে গত নয় মাস ধরে অনিয়মিতভাবে ইংল্যান্ডের ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা চলছিল হেলসের। শেষ পর্যন্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটকেই বেছে নিলেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে শুক্রবার বিদায়ের ঘোষণা দেওয়ার সময় পেছন ফিরে চাইলেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।
“তিন সংস্করণ মিলিয়ে নিজের দেশকে ১৫৬ ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা আমার জন্য পরম পাওয়া। কিছু স্মৃতি, কিছু বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে যা আজীবন থাকবে। আমি মনে করি, সরে যাওয়ার এটাই সঠিক সময়।”
ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে হেলসের পথচলা সাবলীল ছিল না। বিতর্কে জড়ান কয়েকবার। বিশ্বজুড়ে পারফরম করার পরও উপেক্ষিত থাকেন জাতীয় দলে। বিদায় বেলায় সেই সব মনে পড়ছে তার।
“ইংল্যান্ডের হয়ে ক্যারিয়ারে আমার অনেক ভালো কিছুর অভিজ্ঞতা হয়েছে, পাশাপাশি খারাপ সময়ও কেটেছে। এটা ছিল অবিশ্বাস্য একটি অভিযান। এটা খুবই তৃপ্তির যে, ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জেতা ফাইনাল আমার শেষ ম্যাচ।”
চলতি বছরের শুরুতে জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ ছিল হেলসের। কিন্তু ইংল্যান্ডের হয়ে বাংলাদেশে টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলার বদলে তিনি বেছে নেন পিএসএলকে। এই মাসের শেষ দিকে আবারও সাংঘর্ষিক সূচির মধ্যে পড়তে পারতেন তিনি। সিপিএলে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে কথা চলছে। সেটি হয়ে গেলে দেশের মাটিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলা হতো না তার।
সাদা-বলের খেলোয়াড়দের দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ বাদ দেওয়া নিয়ে আপত্তি নেই ইংল্যান্ডের। কিন্তু নিয়মিত সাংঘর্ষিক সূচির মধ্যে পড়াটা হেলসের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভূমিকা রেখেছে। ইংল্যান্ডের পুরুষদের ক্রিকেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রব কিকে জানিয়েছিলেন, তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর কথা ভাবছেন। বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন তিনি।
চার বছর আগে শেষ ৫০ ওভারের ক্রিকেট খেলায় চলতি বছর অনুষ্ঠেয় ওয়ানডে বিশ্বকাপের জন্য সেভাবে বিবেচনায় নেই হেলস। তবে আগামী জুনে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে ভালোভাবেই থাকতে পারতেন তিনি।
তার অবসরের ঘোষণায় এখন ভাগ্য খুলে যেতে পারে উইল জ্যাকস, ফিল সল্টের মতো খেলোয়াড়দের।
জনি বেয়ারস্টো পা ভেঙে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর অনেকটা বিস্ময় জাগিয়ে তিন বছরের বেশি সময়ের নির্বাসনের সমাপ্তি ঘটিয়ে ইংল্যান্ড দলে ফেরেন হেলস। পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া সফর এবং বিশ্বকাপ মিলিয়ে খেলেন ১৫ ম্যাচ। রান করেন প্রায় ৩১ গড় ও ১৪৫ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে।
বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ড শেষ দুই ম্যাচে খেলেন গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে করেন ৫২, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৭। ভারতের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে ১০ উইকেটের জয়ের পথে খেলেন ৮৬ রানের ইনিংস। তখনই বলেছিলেন, এটা তার ক্যারিয়ারের সেরা দিনের একটি। ফাইনালে অবশ্য তেমন কিছু করতে পারেননি, ২ বলে করেন কেবল ১।
দলের ৫ উইকেটের জয়ে পান শিরোপা জয়ের স্বাদ। পরিবারের সদস্যদের সামনে মেলবোর্ন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তুলে ধরেন বিশ্বকাপ ট্রফি। ডোপ পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়ার পর শঙ্কায় ছিলেন, এমন কোনো স্মৃতি হয়তো তার কখনও হবে না।
সেই সময়ের অধিনায়ক ওয়েন মর্গ্যান প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, দলীয় মূল্যবোধকে বারবার অবজ্ঞা করেছেন হেলস এবং বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন ড্রেসিং রুমের। মর্গ্যান অধিনায়ক থাকা পর্যন্ত দলের বাইরেই ছিলেন হেলস।
সাদা বলের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের নব যাত্রার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল তার। জেসন রয়ের সঙ্গে গড়েছিলেন বিস্ফোরক এক উদ্বোধনী জুটি। ২০১৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৭১ রানের ইনিংস খেলেন হেলস। ইংল্যান্ড গড়ে সেই সময়ের বিশ্বরেকর্ড ৩ উইকেটে ৪৪৪ রান। দুই বছর পর সেই রেকর্ড ফের ভাঙে স্বাগতিকরা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলের ৬ উইকেটে ৪৮১ রানে হেলসের অবদান ১৪৭।
তবে এই পর্যায়ে এসে ইংল্যান্ডের বাড়তি ব্যাটসম্যান ছিলেন হেলস। ব্রিস্টলে নাইট ক্লাবের বাইরে মারামারিতে জড়িয়ে হারিয়েছিলেন ওপেনিংয়ে পাকা জায়গা। কোনো ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়নি, তবে ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা পান তিনি। তার জায়গায় ওপেনিংংয়ে বেয়ারস্টোর সঙ্গে ভয়ঙ্কর এক জুটি গড়েন রয়।
লাল বলে ওপেনিংয়ে অ্যালেস্টার কুকের দীর্ঘ মেয়াদি সঙ্গীর সন্ধানে ইংল্যান্ডের অসংখ্য চেষ্টার অংশ ছিলেন হেলসও। ২০১৫ ও ২০১৬ সালের দেশের হয়ে তিনি খেলেন ১১টি টেস্ট। পাঁচ ফিফটিতে কেবল ২৭.২৮ গড়ে রান করতে পারেন তিনি। টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ার পর ২০১৮ সালের কাউন্টি মৌসুমের আগে বিদায় বলে দেন লাল বলের ক্রিকেটকে।
“উত্থান-পতনের মধ্যে আমি স্বজন, বন্ধু এবং নিশ্চিতভাবেই বিশ্বের সেরা সমর্থকদের কাছ থেকে প্রচুর সমর্থন পেয়েছি। নটসের (নটিংহ্যামশায়ার) হয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। বিশ্বজুড়ে আরও বেশি ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা নেওয়ার দিকে আশায় আছি।”
৩৭.৭৯ গড়ে ২ হাজার ৪১৯ ওয়ানডে রান নিয়ে ইংল্যান্ডের ক্যারিয়ার শেষ করলেন হেলস। টি-টোয়েন্টিতে নিজ দেশের কেবল তিন ক্রিকেটারের একজন হিসেবে দুই হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়ে থামলেন তিনি।