প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছাড়াই হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ।
Published : 01 Jul 2023, 07:48 PM
মিডিয়াম পেসে প্রথমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ-অর্ডার গুঁড়িয়ে দিলেন ব্র্যান্ডন ম্যাকমুলান। পরে ব্যাটিংয়ে খেললেন কার্যকরী ইনিংস। তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে স্কটল্যান্ড পেল দারুণ এক জয়। আর শেষ হয়ে গেল ক্যারিবিয়ানদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার আশা।
হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে শনিবার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সুপার সিক্সের ম্যাচে ৭ উইকেটে জিতেছে স্কটল্যান্ড। ১৮২ রানের লক্ষ্য ৩৯ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলেছে তারা।
গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচ থেকে কোনো পয়েন্ট না নিয়েই সুপার সিক্সে আসে বিশ্বকাপের প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়নরা। যে কারণে ভারত বিশ্বকাপের টিকেট পেতে সুপার সিক্সের তিন ম্যাচের সবকয়টিই জিততে হতো তাদের। পাশাপাশি অপেক্ষায় থাকতে হতো অন্য ম্যাচগুলির ফল পক্ষে আসার।
কিন্তু প্রথম ম্যাচেইতারা হারল স্কটিশদের কাছে। ফলে ছিটকে গেল বিশ্বকাপের টিকেট পাওয়ার দৌড় থেকে। তিন ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ভারতে যাওয়ার আশা বাঁচিয়ে রাখল স্কটল্যান্ড।
২০১৯ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে ৫ রানে হেরে শেষ হয়েছিল স্কটল্যান্ডের বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা। এবার স্কটিশদের কাছে হেরে নিশ্চিত হলো বাছাইয়েই ক্যারিবিয়ানদের থেমে যাওয়া।
ওয়ানডে সংস্করণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে চারবারের দেখায় এটিই স্কটল্যান্ডের প্রথম জয়।
বল হাতে টানা ৯ ওভারে করে ৩২ রানে ৩ উইকেট নেওয়া ম্যাকমুলান ব্যাটিংয়ে খেলেন ৬৯ রানের ইনিংস। ২৩ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারের হাতে ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
এছাড়া অপরাজিত ইনিংসে ১০১ বলে ৬৯ রান করে বড় অবদান রাখেন কিপার-ব্যাটসম্যান ম্যাথু ক্রস।
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে ৭ ওভারের মধ্যে ৩০ রানে ৪ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিজের প্রথম তিন ওভারে জনসন চার্লস, শামার ব্রুকস, ব্র্যান্ডন কিংয়ের উইকেট নেন ম্যাকমুলান।
অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারি দূর থেকে তাড়া করতে গিয়ে কাভার পয়েন্টে ক্যাচ দেন চার্লস (০)। প্রায় একই ধরনের বল কাট করতে গিয়ে প্রথম স্লিপে ধরা পড়েন ব্রুকস (০)। দারুণ ক্যাচ নেন মার্ক ওয়াট।
ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে রানের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করেন কিং। তাকেও থামান ম্যাকমুলান। স্টাম্পের ওপর করা ফুল লেংথ ডেলিভারিতে ফিরতি ক্যাচ দেন ক্যারিবিয়ান ওপেনার। ৫ চারে তিনি করেন ২২ বলে ২২ রান।
কাইল মেয়ার্সের অফ স্টাম্প উড়িয়ে তাদের বিপদ আরও বাড়ান ক্রিস সোল।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৩০ রান যোগ করেন শেই হোপ ও নিকোলাস পুরান। দুজনের কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি। অধিনায়ক ১৬ বল থেকে করেন ১৩ রান। আগের ম্যাচগুলোতে ঝড়ো ব্যাটিং করা পুরান এদিন ২১ রান করতে খেলেন ৪৩ বল।
৮১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে গভীর বিপদে পড়া দলকে দুইশর কাছাকাছি নিয়ে যান জেসন হোল্ডার, রোমারিও শেফার্ড। দুজন মিলে সপ্তম উইকেটে নেন ৯৬ বলে ৭৭ রান। ৫ চারে ৪৩ বলে ৩৬ রান করে শেফার্ড আউট হলে ভাঙে এই জুটি।
সম্ভাবনা জাগালেও ফিফটি ছুঁতে পারেননিহোল্ডার। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৭৯ বলে করেন ৪৩ রান। শেষের ব্যাটসম্যানরা তেমন কিছু করতে না পারায় ৩৭ বল বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় তারা।
ম্যাকমুলানের ৩ উইকেট ছাড়াও সোল, ক্রিস গ্রিভস ও ওয়াট ধরেন ২টি করে শিকার।
রান তাড়ায় শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় স্কটল্যান্ড। হোল্ডারের নিচু ফুল টসে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ক্রিস্টোফার ম্যাকব্রাইড।
অবশ্য ক্যারিবিয়ানদের দারুণ এই শুরুর পথ ধরে এগোতে দেননি আরেক ওপেনার ম্যাথু ক্রস ও তিন নম্বরে নামা ম্যাকমুলান। দুজনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে চাপ সামলে জয়ের ভিত পেয়ে যায় স্কটিশরা।
এর মধ্যেইদ্বাদশ ওভারে আকিল হোসেনেরবলে মিড উইকেটে ম্যাকমুলানের সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন মেয়ার্স। তখন ২১ রানে খেলছিলেন তরুণ অলরাউন্ডার। জীবন পেয়ে আর ভুল করেননি তিনি।
হোল্ডারের অফ স্টাম্পের বাইরে ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারি এক পায়ে ভর করে সোজা দারুণ এক ছক্কা মারেন ম্যাকমুলান। দারুণ ব্যাটিংয়ে ৮৫ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় দ্বিতীয় ফিফটি করেন তিনি।
ক্রসের সঙ্গে তার জুটির শতরান আসে ১৫৬ বলে। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকা ক্রস দশম ফিফটি স্পর্শ করেন ৬৮ বলে।
ত্রিশতম ওভারে ম্যাকমুলান-ক্রসের ১২৫ রানের জুটি ভাঙেন শেফার্ড। স্টাম্পের ওপর লেংথ ডেলিভারি উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে আলজারি জোসেফের হাতে ধরা পড়েন ম্যাকমুলান। শেষ হয় তার ৮ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো ইনিংস।
পাঁচ নম্বরে নেমে ক্রসের সঙ্গে মিলে দলকে জয়ের পথে আরও একটু এগিয়ে দেন জর্জ মানজি। জয়ের জন্য ২০ রান বাকি থাকতে আকিলের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আউট হন ১৮ রান করা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
এরপর আর উইকেট পড়তে দেননি ক্রস ও রিচি বেরিংটন। শেফার্ডের খাট লেংথের বল ডিপ মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারি মেরে ম্যাচ শেষ করেন ক্রস।