৬ ওভারে তখন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ৯৫ রান। এই ম্যাচ কী আর জেতা যায়! তবে প্রথম দুই ম্যাচে এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও জিতেছে তারা, এবারও মনে হচ্ছিল জয় বুঝি অসম্ভব নয়। আগের ম্যাচে বিধ্বংসী ইনিংস খেলে দলকে জেতানো হাইনরিখ ক্লাসেন তখনও ক্রিজে। এবার অবশ্য আর পারলেন না ক্লাসেন। তাকে ফিরিয়ে ভারতীয়রা মেতে উঠল বাঁধনহারা উল্লাসে। বোঝা গেল, অবশেষে তারাও এবার নিশ্চিন্ত!
Published : 15 Jun 2022, 12:33 AM
ক্লাসেনের বিদায়ের পর আর বেশিদূর এগোতেই পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের জয় তাই বেশ বড় ব্যবধানেই। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুটিতে হারের পর সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৪৮ রানের জয়ে ভারত টিকে রইল সিরিজে।
বিশাখাপত্নমে মঙ্গলবার দুই ওপেনার রুতুরাজ গায়কোয়াড় ও ইশান কিষানের ফিফটিতে ভারত ২০ ওভারে তোলে ১৭৯ রান। দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয় ১৩১ রানেই।
২৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ভারতের সফলতম বোলার হার্শাল প্যাটেল। তবে আঁটসাঁট বোলিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা যুজবেন্দ্র চেহেল।
সিরিজে টিকে থাকার লড়াইয়ে ভারত টস হারলেও ব্যাটিংয়ে দলকে দুর্দান্ত শুরু এনে দেন রুতুরাজ ও কিষান। শুরুতে আগ্রাসী ছিলেন রুতুরাজ। তৃতীয় ওভারে কাগিসো রাবাদার বলে চার ছক্কার পর এই ওপেনার পঞ্চম ওভারে তুলাধুনা করেন আনরিক নরকিয়াকে। এই ফাস্ট বোলারের ওভারে মারেন তিনি চারটি চার! বাই থেকে আরেকটি চারসহ ওই ওভার থেকে আসে ২২ রান।
পাওয়ার প্লেতে ভারত ৬ ওভারে তোলে ৫৭ রান। রুতুরাজের রান তখন ২৩ বলে ৪০, কিষানের মোটে ১৩ বলে ১৩। তবে কিষানও বাড়ান রানের গতি।
১০ ওভারে ৯৭ রানের জুটি ভাঙে রুতুরাজের বিদায়ে। ষষ্ঠ টি-টোয়েন্টি প্রথম ফিফটির স্বাদ পেয়ে তিনি থামেন ৩৫ বলে ৫৭ করে।
অমন শুরুর পর ২০০ রানের আশা করার কথা ভারতের। তবে মাঝে কিছুটা পথ হারায় তারা। কেশভ মহারাজের টানা তিন বলে দুই চার ও এক ছক্কায় কিষান ফিফটি পূর্ণ করেন মাত্র ৩১ বলে। তবে এর পরপরই আউট হয়ে যান ৩৫ বলে ৫৪ রান করে।
তিনে নেমে শ্রেয়াস আইয়ার বিদায় নেন দুই ছক্কায় ১৪ করে। অধিনায়ক রিশাভ পান্ত ফেরেন ৮ বলে ৬ করে। তাতে ভারতের রানের গতিও যায় কমে। যার ওপর ছিল ঝড় তোলার দায়িত্ব, সেই দিনেশ কার্তিকও ফেরেন ৮ বলে ৬ করে।
এই পুঁজি নিয়ে মাঝ বিরতিতে সন্তুষ্ট থাকার কথা নয় ভারতের। তবে বোলাররা এ দিন জ্বলে উঠে দলকে এগিয়ে নেন জয়ের পথে। ক্রমশ মন্থর হতে থাকা উইকেটে দুর্দান্ত বোলিং করেন যুজবেন্দ্র চেহেল। হার্শাল প্যাটেলের স্লোয়ারগুলোও কাজে লাগে দারুণভাবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ৬ ব্যাটসম্যানের ৪ জন ২০ স্পর্শ করলেও ৩০ ছুঁতে পারেননি কেউ। ওপেনিংয়ে রিজা হেনড্রিক্স ২৩ করেন ২০ বলে। তিনে নেমে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস ফেরেন ১৬ বলে ২০ করে।
প্রথম ম্যাচে অসাধারণ ব্যাটিংয়ে জয়ের দুই নায়ক রাসি ফন ডার ডাসেন (১) ও ডেভিড মিলার (৩) এ দিন পুরোপুরি ব্যর্থ।
আগের ম্যাচে ৪৬ বলে ৮১ রানের ইনিংস খেলে দকে জেতানো ক্লাসেন আবারও চেষ্টা করেন বটে। তবে চেহেলের বুদ্ধিদীপ্ত ডেলিভারিতে তিনি আউট হন ২৪ বলে ২৯ করে। শেষ হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার দারুণ কিছুর আশাও। ৩১ রানের মধ্যে হারায় তারা শেষ ৫ উইকেট।
সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ রাজকোটে, শুক্রবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৭৯/৫ (রুতুরাজ ৫৭, কিষান ৫৪, শ্রেয়াস ১৪, পান্ত ৬, পান্ডিয়া ৩১*, কার্তিক ৬, আকসার ৫*; রাবাদা ৪-০-৩১-১, পার্নেল ৪-০-৩২-০, নরকিয়া ২-০-২৩-০, প্রিটোরিয়াস ৪-০-২৯-২, শামসি ৪-০-৩৬-১, মহারাজ ২-০-২৪-১)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৯.১ ওভারে ১৩১ (বাভুমা ৮, হেনড্রিক্স ২৩, প্রিটোরিয়াস ২০, ফন ডার ডাসেন ১, ক্লাসেন ২৯, মিলার ৩, পার্নেল ২২*, রাবাদা ৯, মহারাজ ১১, নরকিয়া ০, শামসি ০; ভুবনেশ্বর ৪-০-২১-১, আভেশ ৪-০-৩৫-০, আকসার ৪-০-২৮-১, চেহেল ৪-০-২০-৩, হার্শাল ৩.১-০-২৫-৪)।
ফল: ভারত ৪৮ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজের ৩টি শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: যুজবেন্দ্র চেহেল।