দলকে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন জো রুট। ব্যাটে ছিল রানের ফোয়ারা। তবুও দল ছিল না কক্ষপথে। ঘুরপাক খাচ্ছিল ব্যর্থতার চক্রে। নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর পর প্রথম টেস্টেই করলেন সেঞ্চুরি, ফিরলেন দলকে জিতিয়ে। অসাধারণ এক ইনিংসে উদযাপন করলেন ‘মুক্তির আনন্দ।’
Published : 05 Jun 2022, 11:15 PM
টেস্টে ইংল্যান্ডের টানা ব্যর্থতায় রুটের নেতৃত্ব নিয়ে হয়েছিল তীব্র সমালোচনা। তবু তার ওপরই ভরসা রেখেছিল দল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চারদিকের চাপ সহ্য করতে পারেননি রুট। বললেন, ওই সময়টায় অধিনায়কত্ব তার ওপর ফেলেছিল বাজে প্রভাব। তাই ছেড়েই দেন নেতৃত্ব।
২০১৭ সালে অ্যালেস্টার কুকের জায়গায় ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব পান রুট। লাল বলের ক্রিকেটে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৬৪ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেন তিনি। ইংলিশ অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ২৭ জয়ের রেকর্ডও তার। এই তালিকায় পেছনে ফেলেন মাইকেল ভন (২৬ ম্যাচ) এবং কুক ও অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসকে (দুজনেই ২৪ ম্যাচ করে)।
অধিনায়ক হিসেবে সাফল্য কম ধরা দেয়নি রুটের হাতে। তার নেতৃত্বে ২০১৮ সালে ঘরের মাঠে ভারতকে ৪-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয় ইংল্যান্ড। ওই বছরই ২০০১ সালের পর ইংল্যান্ডের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ জেতেন তিনি। দুই বছর পর আবারও লঙ্কানদের তাদেরই মাটিতে হারায় ইংলিশরা। ২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জেতে তার দল।
সাফল্য যেমন এসেছে, ব্যর্থতাও কম নেই রুটের। তার নেতৃত্বে সর্বোচ্চ ২৬ টেস্টে হেরেছে ইংল্যান্ড। অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি টেস্ট হারার দিকে তার ওপরে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ (২৯) ও নিউ জিল্যান্ডের স্টিভেন ফ্লেমিং (২৭)। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারা হেরেছেন রুটের সমান ম্যাচ।
রুটের অধিনায়কত্বে সবশেষ চার টেস্ট সিরিজই হেরেছে ইংল্যান্ড। তার নেতৃত্বের সবশেষ ১৭ টেস্টের মধ্যে জিততে পারে কেবল একটিতে। অ্যাশেজে ৪-০ তে হারার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েও তিন ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে হারে তারা।
রুট অবশ্য দলকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে প্রত্যয়ী ছিলেন। কিন্তু চারদিকের সমালোচনার জোয়ারে আর পারেননি তিনি কাজ চালিয়ে যেতে।
নতুন অধিনায়ক হিসেবে বেন স্টোকসকে দায়িত্ব দেয় ইংল্যান্ড। নেতৃত্বের শুরুটা ভালোই হলো এই অলরাউন্ডের। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে রোববার শেষ হওয়া টেস্টে তারা জেতে ৫ উইকেটে। জয়ের নায়ক অবশ্য সাবেক অধিনায়ক রুট। ১১৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জেতানোর সঙ্গে নাম লেখান তিনি ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ১০ হাজার রানের মাইলফলকে।
ম্যাচ শেষে রুট তুলে ধরলেন, নেতৃত্বের শেষটা কেমন ভুগিয়েছে তাকে।
“সত্যি বলতে, অধিনায়কত্ব ও আমার মধ্যে সম্পর্ক খুবই অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছিল। যা আমার ওপর বাজে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল। মাঠের বিষয় মাঠেই ফেলে আসতে পারতাম না, বাড়িতেও চলে আসত। যেটা আমার পরিবার, কাছের মানুষ এবং আমার নিজের জন্যও ঠিক ছিল না।”
“আমি নেতৃত্বে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিলাম। এই দলটিকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। কিন্তু সেই সময় যখন বাড়িতে ছিলাম, বুঝতে পেরেছিলাম যে, অন্যভাবে এটা করতে হবে। এখন সেটা (ইংল্যান্ডকে জেতাতে) করতে আমি মুখিয়ে আছি। এই দলটিকে পথে ফেরাতে বেন স্টোকসকে সহায়তা করতে সবকিছু করতে তৈরি আমি…।”