মহামারীর ঢেউয়ে শিক্ষাজীবনের দীর্ঘ এক যুদ্ধ শেষে নিজেদের ‘প্রাণের ঠিকানায়’ ফিরে উচ্ছ্বাস আর আনন্দে মুখর হয়ে উঠেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা।
Published : 05 Oct 2021, 06:11 PM
মঙ্গলবার সকাল থেকে হলের গেইট খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ফুল আর চকলেট দিয়ে বরণ করে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রথমবর্ষের স্মৃতি জাগিয়ে দেওয়া এমন অভ্যর্থনাকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের নতুন অধ্যায়ের শুরু বলেও মনে হয়েছে শিক্ষার্থীদের অনেকের কাছে।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ বলেন, “সত্যিই আজকে অনেক আনন্দ লাগছে। মনে হচ্ছে দীর্ঘদিন পর স্বস্তির শ্বাস নিতে পারছি।
রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন মীম বলেন, “আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর হলটা হয়ে গিয়েছিল আমাদের সেকেন্ড হোম। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, গান-গল্প, একসঙ্গে পড়ালেখা নানা কর্মকাণ্ডে আমাদের জীবনটা ছিল প্রাণবন্ত।
“… ১৮ মাস পর আবারও সেই স্মৃতি জড়ানো প্রাণের ঠিকানায় ফিরেছি। নবীন শিক্ষার্থীদের মত আমাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়েছে। মনে হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আরও একটি নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে।”
“আগের চেয়ে হলের খাবারের মান ভালো হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে ক্যান্টিনের চেয়ারটেবিলে দাগ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভালো লাগছে হলের পরিবেশ।”
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী সিফাত তাসনিম বলেন, “আসলে পড়াখেলার জন্য হলের যে পরিবেশ, এর বিকল্প কোথাও পাওয়া যাবে না। মহামারীতে হল ছেড়ে অশান্তিতেই আমাদের দিন কেটেছে।
“অনেক দিন পর স্বস্তি পাচ্ছি। হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুল আর চকলেট দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে। সত্যিই সেই প্রথমবর্ষের দিনগুলোর স্মৃতিকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল দিনটি।”
তাদের পরীক্ষা শেষ হলে দ্বিতীয় ধাপে স্নাতক প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে তোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীদের পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন হলের প্রাধ্যক্ষরাও। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মো. মজিবুর রহমান বললেন, “আজকের দিনটি সত্যিই আমাদের জন্য আনন্দের। দীর্ঘদিন ধরে এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম আমরা।
“আজকে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, শিক্ষার্থীরা তাদের হলে ফিরে আসছে। শিক্ষার্থীদের প্রদাচারণায় আবারও প্রাণবন্ত হয়েছে হলের পরিবেশ। শিক্ষার্থীদের সুন্দর আবাসনের ব্যবস্থা করতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।”
রোকেয়ো হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, “ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে আমরা শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিচ্ছি। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা আমাদের এখন বড় দায়িত্ব। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।
“কোনো শিক্ষার্থীর করোনা সংক্রমণ দেখা দিলে বা কেউ কোনো কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে আলাদা টেক-কেয়ার করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমাদের হলে তিনটি ‘সিক রুম’ করা হয়েছে।”
কেউ আক্রান্ত হলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে সেখানে আইসোলেশনে রাখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা হলে কীভাবে থাকবে, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রণীত নির্দেশনা হলের বিভিন্ন জায়গায় সেঁটে দেওয়া হয়েছে।
“বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সচেতন। আশা করি, তাদের আন্তরিক সহযোহিতা ও আমাদের প্রচেষ্টায় সুন্দরভাবেই হল পরিচালনা করা যাবে।”
দেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ১৯টি হল ও চারটি হোস্টেলে ২৬ হাজারের মতো শিক্ষার্থী থাকছে, যদিও এগুলোর শিক্ষার্থী ধারণ ক্ষমতার প্রায় অর্ধেক।
স্মরণকালের সবচেয়ে দীর্ঘ ছুটিতে সেই শিক্ষার্থীদের আবাসন নিয়ে যে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল, হল খুলে দেওয়ায় তার অবসান ঘটতে যাচ্ছে।