দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক খাতকে আরও গতিশীল করতে বিমান ও সমুদ্র বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
Published : 14 Dec 2017, 05:22 PM
এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেছেন, “এই খাতকে (তৈরি পোশাক) ভবিষ্যতে নিয়ে যেতে আমাদের বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।”
“আমাদের বন্দর ও এনার্জি এখনও প্রস্তুত নয়। বর্তমানে আমরা বন্দর সমস্যা নিয়ে লড়ে যাচ্ছি, আমাদের বন্দরের ৩৯ হাজার কনটেইন্টার ধারণ ক্ষমতাও নেই। এতে আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে “ বলেন বিজিএমইএর সাবেক এই সভাপতি।
বিজিএমএইর বর্তমান সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন “তৈরি পোশাক শিল্পে বিশ্বে বাংলাদেশের মার্কেট শেয়ার ৬.৩ শতাংশ, যেখানে ৩৬-৩৭ শতাংশ চায়নার।
“আমি মনে করি, আমরা চায়নাকে অতিক্রম করার সক্ষমতা রাখি। কিন্তু এর আগে আমাদের সমুদ্র ও বিমান বন্দরের অবকাঠামো সমস্যা দূর করতে হবে।”
বৃহস্পতিবার ঢাকার গুলশানের হোটেল আমারিতে ‘সেন্টার অফ এক্সেলেন্স ফর বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রিজ (সিবাই)’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তৈরি পোশাক শিল্প খাতের নানা প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরতে গিয়ে বন্দর সমস্যার কথা বলেন এই দুই ব্যবসায়ী নেতা।
দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের কেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর আধুনিকায়নের কথা অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন ব্যবসায়ীরা।
নৌমন্ত্রী শাজাহান খান সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নের নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও সমস্যার কথা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, “বন্দরে যেভাবে সক্ষমতা বৃদ্ধি হওয়ার কথা ছিল, আমরা সেভাবে পারিনি। শতভাগ হয়ত পারিনি, তবে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।”
পটুয়াখালীতে আরেকটি সমুদ্র বন্দর নির্মিতও হয়েছে।
‘ব্র্যান্ড ফোরাম মিটিং’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিদেশি ক্রেতারা তৈরি পোশাকের মান অনুযায়ী দাম দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর।
‘চাই প্রশিক্ষিত শ্রমিক ও গবেষণা’
তৈরি পোশাক খাতের বিকাশ ঘটাতে সারা বাংলাদেশে ‘একটি নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম’ চালু ও এই খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা চালানোর পরামর্শ দিয়েছে পোশাক খাতের শ্রম পরিস্থিতি ও পণ্যের মান উন্নয়নে গঠিত প্রতিষ্ঠান সিবাই।
সিবাই সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, “সারা বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য এক কারিকুলামের প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম চালু করতে হবে, যাতে শ্রমিকদের মান উন্নয়ন করা যায় এবং একই মানের শ্রমিক তৈরি করা যায়। এছাড়া সব শ্রমিকদের একটি সার্টিফিকেট দেওয়া হবে, যাতে তাদের মান নিয়ে কোনো সংশয় না থাকে।”
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল গবেষণায় জোর দিয়ে বলেন, “এই খাতে ভবিষ্যৎ আমাদের অজানা, ব্যবসায় ভবিষ্যতে কী হতে যাচ্ছে তা আগে থেকে বোঝার জন্য গবেষণা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে উদ্ভূত যে কোনো সমস্যা ও পরিস্থিতি আমরা মোকাবেলা করতে পারি।”
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর বলেন, “পোশাক কারখানার মিড লেভেল শ্রমিকদের জন্য কোনো প্রশিক্ষণ এর আগে ছিল না, তাদের প্রশিক্ষিত করছে সিবাই। এছাড়াও এই প্রতিষ্ঠান দিয়ে আমরা বিদেশি কোম্পানিদের আকর্ষণ করতে চাই।”
বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সুইডেন, আইএলও, আন্তর্জাতিক ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএম, বিজিএমইএসহ পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অ্যাসোসিয়েশনগুলোর সমন্বিত উদ্যোগে ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে সিবাই। শ্রমিক প্রশিক্ষণ ও পোশাক খাত নিয়ে গবেষণা এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কর্মসূচি।
২০১৬ সালের জুলাইতে ঢাকার আশুলিয়ায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করে সিবাই। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের প্রশিক্ষণ নিয়ে ৫ হাজার ৭৬৩ জন শ্রমিক বিভিন্ন কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছে।
এছাড়া ইউসেপ, মুসলিম এইড এবং বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের পাশাপাশি এখন পর্যন্ত ১০টি পোশাক কারখানায় এন্টারপ্রাইজ বেইজড ট্রেইনিং বা ইবিটি সেন্টার স্থাপন করেছে সিবাই।