৯ মাস পর সভায় পুরনো সিদ্ধান্তই বহাল

চট্টগ্রাম বন্দর উপদেষ্টা কমিটির আগের সভায় নেওয়া একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নয় মাস পরের সভায় আবার দীর্ঘ আলোচনা শেষে পুরনো সিদ্ধান্তই বহাল রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2017, 02:06 PM
Updated : 10 Dec 2017, 02:06 PM

রোববার চট্টগ্রাম বন্দর উপদেষ্টা কমিটির দ্বাদশ সভায় বেসরকারি ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি) বন্দর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সরিয়ে নেওয়া নিয়ে উত্তাপ ছড়ায়।

এছাড়া বে টার্মিনালের জন্য জমি অধিগ্রহণ এবং কমিটির সভায় একই বিষয় নিয়ে বারবার আলোচনা করারও সমালোচনা করেন কয়েকজন।

গত ২৪ মার্চ উপদেষ্টা কমিটির একাদশ সভায় আলোচনা শেষে যানজট নিরসনে নগরীতে থাকা বেসরকারি আইসিডিগুলো দেড় বছরের মধ্যে নগরী থেকে ন্যূনতম ২০ কিলোমিটার দূরে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

ওই সভার কার্য বিবরণীতে ৪ নম্বর সিদ্ধান্ত হিসেবে সেটি লেখা রয়েছে।

রোববার সভায়ও এনিয়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, “আইসিডি নীতিমালা অনুযায়ী হবে। সরিয়ে নেওয়া আলোচনা অনুসারে যৌক্তিকভাবে হবে। অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের কিছু নেই।”

আলোচনার শুরুতে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল বলেন, যদি এক বছরের মধ্যে নতুন আইসিডি না হয়, তাহলে জট আরও বাড়বে। বন্দর আইসিডি করতে অনেক সময় লাগবে। দুটি প্রতিষ্ঠান নতুন আইসিডি করার প্রস্তাব করেছে।

এসময় সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, যদি কেউ না করে বন্দরই তো করতে পারে। ১০টা আইসিডি বন্দর নিজে করতে পারে। নগরী থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে সীতাকুণ্ড, মিরসরাই বা সাতকানিয়ায় করতে পারে।

সাংসদ দিদারুল আলম চৌধুরী বলেন, সাগরিকা এলাকায় আইসিডির প্রস্তাব দিয়েছে এটা করতে স্থানীয়রা আগ্রহী নয়। জনগণ চায় না।

“ইসহাক ব্রাদার্সের (আইসিডি) এখানে পার্কিং নেই। যানজট হয়। ২০ কিলোমিটারের বাইরে করা হোক।”

সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “আইসিডি অবশ্যই ২০ কিলোমিটারের বাইরে হতে হবে।”

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইসিডিএ) সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান বলেন, “একটা আইসিডি করতে পাঁচ বছর সময় এবং ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ লাগে। হুট করে তুলে দিলে ২০২১ সালের ভিশন অর্জন সম্ভব নয়।

“বন্দরে দৈনিক ৫ হাজার ৮০০ ট্রাক প্রবেশ করে। যদি ২০ কিলোমিটার থেকে আইসিডি তুলেও দেন তবু যানজট কমবে না।”

এসময় সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, আইসিডিতে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই।

জবাবে নুরুল কাইয়ুম বলেন, “ইকুইপমেন্ট না থাকলে কীভাবে ৩৭ ধরনের পণ্য হ্যান্ডলিং করছে? যদি মনে করেন, বন্ধ করে দিতে পারেন।”

উত্তরে সামশুল হক চৌধুরী বলেন, “বন্ধ করব কেন, চালু করতে চাচ্ছি।”

তখন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, “দয়া করে বির্তক না করি। আলোচনা করেই ঠিক করব।”

ব্যবসায়ী নেতা মাহফুজুল হক শাহ বলেন, “২০ কিলোমিটারের ওই দিকে, না এই দিকে, তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হচ্ছে। সমাধান এখনও হয়নি।”

উপদেষ্টা কমিটির সভায় একই বিষয়ে বারবার আলোচনা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান বলেন, “নয় মাস পর এই সভা হচ্ছে। অনেক সিদ্ধান্ত একসাথে নেওয়ার চেষ্টা হয়, একটিও বাস্তবায়ন হয় না। প্রয়োজনে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটি বাস্তবায়ন করুন।”

বন্দর চেয়ারম্যান এম খালেদ ইকবাল বলেন, বে টার্মিনালের জন্য ৯০৭ একর জমি প্রয়োজন। ছয় মাস ধরে এটি ভূমি মন্ত্রণালয়ে আছে।

এসময় সাংসদ ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, “গত সভায় ভূমি প্রতিমন্ত্রী জাবেদ এখানে ছিলেন। জমির দায়িত্ব তিনি নিয়েছিলেন। ছয় মাসেও অধিগ্রহণ হল না, এটা বিশ্বাস করতে রাজি না।”

জবাবে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, “আপনি বিশ্বাস করছেন না, এটা দুঃখজনক।”

বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান সভার শেষ দিকে বলেন, ৯০৭ একরের মধ্যে ৬৮ একর অধিগ্রহণ শেষ পর্যায়ে। বাকিগুলো বিভিন্ন সংস্থার, কিছু মামলাও আছে।

কাস্টমস কমিশনার এটিএম নুরুজ্জামান বলেন, “কন্টেইনারে ইলেকট্রিক লক অ্যান্ড সিল পদ্ধতি উদ্বোধনের কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হবে।”

সভায় কর্ণফুলী নদীতে ক্যাপিটেল ড্রেজিং, লাইটার জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন লাইটার জেটি নির্মাণ, পণ্যবাহী যানবাহনের ওজন নিয়ন্ত্রণ, কন্টেইনারে লক পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। 

সভায় উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাংসদ এম এ লতিফ, নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদ, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার, বিজিএমইএ প্রতিনিধি মঈন উদ্দিন আহমেদ মিন্টু, সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সভাপতি আকতার হোসেন, শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী।