“পুলিশ হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠল। দেড়শ, দুইশ পুলিশের বাঁশির হুইসেল আর লাঠিচার্জ, চড় থাপ্পর। মুর্হূতের মধ্যে কী ঘটে গেল”, ফেইসবুকে লিখেছেন একজন সাংবাদিক।
Published : 15 Mar 2023, 05:05 PM
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট চলাকালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের উত্তেজনার মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের পিটুনির শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা।
গণমাধ্যকর্মীদের অভিযোগ, বাছ-বিচার না করে বেধড়ক পেটানো হয়েছে তাদের। পরে অভিযোগ নিয়ে তারা দেখা করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সঙ্গে, লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রারের দপ্তরেও। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশের দাবি, সাংবাদিকরা ঘটনার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। এখানে ইচ্ছাকৃত আক্রমণ হয়নি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের পুলিশের উপ কমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, “দুই পক্ষের একটা হট্টগোল হয়েছে। পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করতে গেলে সাংবাদিকরাও হুড়োহুড়ির মধ্যে পড়েছিল বলে শুনেছি। এটা ইচ্ছাকৃত নয়; তবুও বিষয়টা খোঁজ নিচ্ছি, দেখছি আমরা।”
যা ঘটেছে
বুধবার সকাল ১০টা থেকে ভোট শুরুর কথা থাকলেও দুই পক্ষের বিরোধে ভোট শুরু হতে দেরি হচ্ছিল। তাতে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়ে।
ল রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি আশুতোষ সরকার বলেন, আইনজীবীদের হট্টগোলের সংবাদ সংগ্রহে গেলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ১০ থেকে ১২ জন সাংবাদিক পুলিশের ‘হামলার’ শিকার হন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
“আমরা ইতোমধ্যে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। এ ধরনের ঘটনা কাম্য নয় বলে তিনি বলেছেন। সেই সঙ্গে লিখিত আবেদন দেওয়ার জন্য বলেছেন। বিষয়টি দেখার আশ্বাসও দিয়েছেন।”
সংগঠনের সভাপতি জানান, তারা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছেও ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে। তিনিও সাংবাদিকদের উপর হামলার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
‘এখন’ টিভির সাংবাদিক জাহিদ হাসান ফেইসবুকে ওই ঘটনার একটি বর্ণনা দিয়েছেন। লিখেছেন, এটিএন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার জাবেদ আখতারকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন ইনডিপেনডেন্ট টিভির সিনিয়র রিপোর্টার জান্নাতুল ফেরদৌস তানভী।
পুলিশের আচরণের বর্ণনা দিয়ে ফেইসবুকে তিনি লেখেন, “পুলিশ হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠল। দেড়শ, দুইশ পুলিশের বাঁশির হুইসেল আর লাঠিচার্জ, চড় থাপ্পর। মুহূর্তের মধ্যে কী ঘটে গেল, কিছু বোঝার আগেই আমার ক্যামেরাম্যানকে টান দিয়ে নিয়ে গেটের বাইরে নিয়ে আসি।
“একটু পর যার দিকে তাকাই সেই আহত৷ বৈশাখী টিভির ক্যামেরাম্যানের পুরো টি-শার্ট ছিড়ে ফেলছে মারতে মারতে। কারও আঙুল ফেটে গেছে, কারও পায়ে বুটের লাথি। আজকের পত্রিকার নুর মোহাম্মদ, কালবেলার কবির হোসেন, ঢাকা পোস্টের মেহেদি হাসান ডালিমের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। জাগো নিউজের ফজলুক হক মৃধাও আহত হন।”
নিন্দা ও পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তি দাবি
সাংবাদিকদের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি এবং ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ)।
গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. ইয়াহিয়া ও সাধারণ সম্পাদক হাসান তারিক চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেছেন, “নির্বাচনকে বানচাল ও অগ্রহণযোগ্য করার জন্য যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।“
অবিলম্বে আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানের আহ্বান জানান তারা।
অন্যদিকে সাংবাদিকদের সংগঠন এলআরএফ এর সভাপতি আশুতোষ সরকার ও সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ সরোয়ার হোসেন ভুঞা এক বিবৃতিতে হামলার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি ও আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানিয়েছেন।
ডিএমপির রমনা জোনের উপ কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ ও সহকারী কমিশনার হারুন অর রশিদের ‘নির্দেশে’ সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে অভিযোগ করে তাদের প্রত্যাহার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছেও আবেদন করেছে এলআরএফ।