তিন বছর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যার রায়ের অপেক্ষায় থাকা বন্ধু, স্বজন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করছেন।
Published : 30 Jan 2015, 12:20 PM
ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবিএম নিজামুল হক আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
জুবায়েরের বড় ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে আছি। জুবায়েরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি আদালতের কাছে আসামিদের ফাঁসির রায় প্রার্থনা করছি।”
নিহত জুবায়ের এবং ১৩ আসামির সবাই সরকার সমর্থক ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
ইংরেজি বিভাগের ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে পরদিন ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। এ হত্যার বিচারের দাবিতে সে সময় ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনর’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারাও যোগ দেন।
ওই আন্দোলনের সংগঠক, জুবায়েরের সহপাঠী ও ছাত্র ইউনিয়নের তখনকার সভাপতি সৌমিত জয়দ্বীপ বলেন, “দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। জুবায়ের, তার পরিবার ও বন্ধুরা ন্যায়বিচার পাক। রায়ে জয় হোক নিপীড়িতের।”
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত এই আসামিদের রাষ্ট্রীয় আইনেও সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এর সংগঠক সুজা-উদ-দোলা বলেন, “আদালতের কাছে প্রার্থনা থাকবে, রায়ে দোষীদের প্রতি কোনোভাবেই যেন সহানুভূতি দেখানো না হয়।”
জুবায়েরের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগও।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহমুদুর রহমান বলেন, “যারা এই হত্যায় জড়িত ছিল, তারা যে দলেরই হোক, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি তন্ময় ধর বলেন, “এই রায়ের মাধ্যমে দেশে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হত্যার প্রথম রায় হতে যাচ্ছে। আমরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
জুবায়ের হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার সহকারী নিবন্ধক হামিদুর রহমান আশুলিয়া থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১২ সালের ৮ এপ্রিল ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা মীর শাহীন শাহ পারভেজ। ৮ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তাদের বিচার শুরু হয়।
আর পলাতক আসামিরা হলেন- প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের আশিকুল ইসলাম আশিক, খান মোহাম্মদ রিয়াজ ওরফে সোহান, জাহিদ হাসান, দর্শন বিভাগের ইশতিয়াক মেহবুব অরূপ, রাশেদুল ইসলাম রাজু এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের মাহবুব আকরাম।
এদের মধ্যে মাহবুব আকরাম ও নাজমুস সাকিব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
রায়ে দোষীদের শাস্তি চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার হোক। যারা দোষী হিসেবে চিহ্নিত হবে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।”
দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলের শিক্ষকরাও।
বাম শিক্ষকদের সংগঠন ‘শিক্ষক মঞ্চ’ এর মুখপাত্র সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, “দোষীদের সর্বোচ্চ এবং যথাযথ শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে যে, বিশ্ববিদ্যালয় হত্যাকাণ্ড ঘটানোর স্থান নয়।”
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং আওয়ামীপন্থি শিক্ষক অধ্যাপক খবির উদ্দিন বলেন, “অবশ্যই সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত। তা না হলে দুর্বৃত্তরা প্রশ্রয় পেয়ে যাবে।”
জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সদস্য সচিব অধ্যাপক শরীফ উদ্দিন বলেন, “দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এ কারণে হওয়া উচিত যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মত স্থানে আর কোনো হত্যার ঘটনা না ঘটে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা মাহতাব উজ জাহিদ বলেন, “আদালতে সাক্ষ্য-প্রমাণের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি। আদালতের কাছে এখন দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করছি।”
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি তাছলিমা ইয়াসমিন দিপা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মোট ২৭ জন সাক্ষী আদালতে আসামিদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
“আমরা আদালতে দোষীদের অপরাধ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। একইসাথে আদালতের কাছে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আরজি জানিয়েছি।”