সেবা নিতে আসা মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে পুলিশ বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
Published : 25 Jan 2022, 07:49 PM
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, “সাধারণ মানুষ বিপদে পড়েই আইনি সেবা পেতে পুলিশের কাছে আসে। আপনারা এসব বিপদাপন্ন মানুষের সমস্যা ও অভিযোগ মনযোগ দিয়ে শুনবেন, তাদেরকে আন্তরিকতার সাথে আইনি সেবা দিতে কখনো কুণ্ঠাবোধ করবেন না। সেবা প্রার্থীরা যেন হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে।”
করোনাভাইরাসের কারণে এক বছর বিরতির পর গত রোববার পুলিশ সপ্তাহ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয় আবদুল হামিদ।
জনগণকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “জনগণকে দ্রুততম সময়ে পুলিশি সেবা প্রদান আপনাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। জনগণের সেবা প্রাপ্তি সহজীকরণে আপনাদেরকে আরও তৎপর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
“সেবা প্রত্যাশী মানুষের সমস্যার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তাদেরকে দ্রুত আইনি সেবা প্রদানে আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া পুলিশের একার পক্ষে অপরাধ দমন সম্ভব নয়।”
আবদুল হামিদ বলেন, “কমিউনিটি পুলিশিং এবং বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে জনগণের সাথে আরও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে, তাদের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশকে ‘জনবান্ধব পুলিশ ও মানবিক পুলিশ’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আপনাদেরকে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট থাকতে হবে।”
মাদক সংক্রান্ত অপরাধে দোষীদের বিরদ্ধে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “মাদক একটি বড় সামাজিক ব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশের তরুণ সমাজের একটি অংশ মাদক সংক্রান্ত অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশ পুলিশের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, “প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্বমানের পর্যায়ে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন বিদেশি পুলিশ কর্মকর্তারাও বাংলাদেশে এসে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে আগ্রহী হন।”
সরকার যে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, গবেষণা ও উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে অগ্রগতি না হলে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম হবে না।
উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গবেষণা, উদ্ভাবন এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আত্মীকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশকেও এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, “নতুন নতুন গবেষণা ও উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশকে সমৃদ্ধ হতে হবে। আমি মনে করি, এ জন্য বাংলাদেশ পুলিশে একটি ‘থিংক ট্যাংক’ অত্যন্ত প্রয়োজন। এ ‘থিংক ট্যাংক’ বাংলাদেশ পুলিশের অপারেশনাল কার্যক্রম ও তদন্তে বৈজ্ঞানিক কৌশলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি তথা নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন, প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কার্যক্রমে উৎকর্ষ সাধনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। ”
সাইবার অপরাধ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপরও জোরে দেন রাষ্ট্রপতি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
‘দক্ষ পুলিশ, সমৃদ্ধ দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পাঁচ দিনের এ পুলিশ সপ্তাহ ২৭ জানুযারি শেষ হবে।