করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারে লকডাউন বাস্তবায়নে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় মাঠে নেমেছেন সেনা সদস্যরাও।
Published : 09 Jun 2020, 08:43 PM
মঙ্গলবার মধ্যরাত ১২টা থেকে ঢাকার প্রথম এলাকা হিসেবে সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে পুরোদমে লকডাউন কার্যকরের তৎপরতা শুরু হয়েছে।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বার্তায় বলা হয়, “এই লকডাউন নিশ্চিত কল্পে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সেনা সদস্যরাও উক্ত এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে। এজন্য উক্ত এলাকায় সেনা টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
“সেনা সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে লকডাউন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষপসমূহ গ্রহণ করবে।”
রাত ১২টার পর রাজাবাজারের গলিগুলোতে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় ওই এলাকায় সেনা সদস্যদেরও টহল দিতে দেখা যায়।
লকডাউনে পূর্ব রাজাবাজারের নাজনীন স্কুলের গলি, গীর্জা গলি, ইন্দিরা রোড মসজিদ গলি, বৌবাজার গলি, পূর্ব রাজাবাজারের সাথে পশ্চিম রাজাবাজারের সংযোগ গলি, আলিফ অ্যাম্বুলেন্স গলি, ডা. কবির চৌধুরী চেম্বার গলি এবং তেজগাঁও কলেজ ছাত্রাবাসের পাশের গলি বন্ধ থাকছে বলে শেরেবাংলা নগর থানার পরিদর্শক (তদ্ন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, জরুরি প্রয়োজনে শুধু নাজনীন স্কুলের গলি দিয়ে চলাচলের সুযোগ দেওয়া হবে। জরুরি প্রয়োজনে সাড়া দেওয়ার জন্য সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার ২০০ স্বেচ্ছাসেবক থাকছেন।
ঘোষণা অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে পূর্ব রাজাবাজার এলাকার বাসিন্দারা বাইরে যেতে পারবেন না এবং বাইরের কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন না। সব ধরনের দোকান-পাট এবং যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী অনলাইনের মাধ্যমে কেনা যাবে। যাদের অনলাইন সুবিধা নেই তাদের জন্য দুই-একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ভ্যান সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করে এলাকায় পাঠানো হবে।
মেয়র জানান, পূর্ব রাজাবাজার এলাকার নাজনীন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ডিএনসিসির ওয়ার্ড কাউন্সিলর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ডিএমপি, এটুআই, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
স্থানীয় কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান ইরান পূর্ব রাজাবাজার এলাকার কর্মহীন, অসহায় ও দুঃস্থ মানুষের একটি তালিকা করেছেন। ওই তালিকা অনুযায়ী ডিএনসিসি থেকে ত্রাণ দেওয়া হবে।
এই এলাকার অসুস্থ রোগীদের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টেলিমেডিসিন সার্ভিস চালু করা হবে।
জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য কয়েকটি নম্বর দেওয়া হয়েছে-
ত্রাণের জন্য: ৩৩৩
২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান ইরান: ০১৯১১৩৮০৬৩৩
আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন: ০১৭১৫৪০৭১৩৯
ওসি শেরে বাংলা নগর থানা: ০১৭১৩৩৯৮৩৩৫
ব্র্যাকের প্রতিনিধি ডা. ফারহানা: ০১৭১৩০৯৫২৭৯
আইইডিসিআর প্রতিনিধি ডা. ফারজানা: ০১৭১৯২১২৫৯১
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে দুই মাসের বেশি সময় সারা দেশে লকডাউন জারি রাখার পর ৩১ মে থেকে বেশিরভাগ বিধিনিষেধ তুলে নেয় সরকার।
তবে দেশে প্রতিদিন যেখানে সংক্রমণ বাড়ছে, সেখানে সব অফিস খোলার পাশাপাশি যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন অনেকে।
এই পরিস্থিতিতে ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এলাকা ধরে ধরে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অনুযায়ী লাল, সবুজ ও হলুদ জোনে ভাগ করে প্রয়োজন অনুযায়ী বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত ১ জুন ওই সিদ্ধান্ত জানানোর পর শুক্রবার কক্সবাজার পৌর এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে ফের অবরুদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
এরপর ঢাকায় প্রথম পূর্ব রাজাবাজার এলাকা পরীক্ষামূলকভাবে ‘লকড-ডাউন’ করা হচ্ছে।