রাষ্ট্রচিন্তার দিদারুল ভূঁইয়াকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশে হস্তান্তর করেছে র্যাব।
Published : 06 May 2020, 09:02 PM
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে বাসা থেকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় বলে পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীরা জানিয়েছিল। তবে র্যাব তখন তা স্বীকার করেনি।
বুধবার রাতে দিদারুলকে (৩৯) র্যাব রমনা থানায় দিয়ে যায় বলে পুলিশ জানায়।
তার সঙ্গে ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমনকেও (৫২) গ্রেপ্তার করে পুলিশে হস্তান্তর করেছে র্যাব।
র্যাব-৩ এর কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার আবু জাফর মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মিনহাজ মান্নানকে বুধবার বনানী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মিনহাজ মান্নান বিএলআই সিকিউরিটিজের কর্ণধার।
রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাত পৌনে ৮টার দিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এই দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে থানায় হস্তান্তর করে র্যাব-৩।”
ইতোপূর্বে গ্রেপ্তার কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর এবং ব্যবসায়ী মুশতাক আহমদকে যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, দিদারুল ও ইমনকেও সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
র্যাব-৩ এর ডিএডি আবু বকর সিদ্দিকের করা এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ফেইসবুকে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় কিশোর ও মুশতাককে মূল আসামি করে মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে; তার মধ্যে বিদেশে থাকা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন ও সাংবাদিক তাসনিম খলিলের নামও রয়েছে।
অন্য আসামিরা হলেন- জুলকারনাইন, আসিফ ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ, সাহেদ আলম ও ফিলিপ শুমাখার।
কিশোর ও মুশতাককে গ্রেপ্তারের পর র্যাব-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার এএসপি আবু জাফর মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ বলেছিলেন, বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
কিশোরকে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যে মুশতাককে এবং মুশতাককে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে দিদারুলকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে র্যাবের করা মামলার এজহারে বলা হয়েছে।
তবে দিদারুলের পরিবার অভিযোগ করেছে, তাকে মঙ্গলবার ইফতারের আগে কয়েকজন ব্যক্তি কালো একটি মাইক্রোবাসে করে এসে র্যাব-৩ পরিচয়ে তার উত্তর বাড্ডার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়।
দিদারুলের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার আবু জাফর রহমতুল্লাহ বুধবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “গ্রেপ্তার করা হলে আপনারা জানতে পারবেন।”
দিদারুল জর্নালভিত্তিক সংগঠন রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য। তাকে ফেরত দেওয়ার দাবিতে বুধবার দুপুরে পুরানা পল্টনে ‘রাষ্ট্রচিন্তা’র কার্যালয়ে অনলাইন সংবাদ সম্মেলন করেন সহকর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলন থেকে ‘দিদার ভুঁইয়াকে ফেরত চাই’ স্লোগানে বুধবার রাত ১০টায় অনলাইন প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। রাতের মধ্যে ফেরত না পেলে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের ঘোষণাও দেওয়া হয়।
দিদারুলকে তুলে নেওয়ার পর কেউ স্বীকার না করায় বাড্ডা থানায় জিডি করেন তার ভাই।
এদিকে কার্টুনিস্ট কিশোর এবং ব্যবসায়ী মুশতাককে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করে থানায় হস্তান্তর করে র্যাব। বুধবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলায় যে অভিযোগ
র্যাবের করা এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ফেইসবুক ব্যবহার করে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনাভাইরাস মহামারী সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র/সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিপ্রায়ে অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি ছড়ানো, অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, ‘I am Bangladeshi’ পেইজ থেকে রাষ্ট্রের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে বিভিন্ন পোস্ট দেওয়া হয়। ওই পেইজের এডিটর সায়ের জুলকারনাইন, আহমেদ কবির কিশোর, আশিক ইমরান, ফিলিপ শুমাখার, মুশতাক আহমেদ, স্বপন ওয়াহিদ দীর্ঘদিন পেইজটি পরিচালনা করছেন।
কিশোরকে গ্রেপ্তারের বিবরণ দিয়ে এজহারে বলা হয়, আটকের সময় তার বাসা থেকে দুটি মোবাইল ফোন, একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক, একটি সিপিইউ, ২০০টি সিডি উদ্ধার করা হয়। জব্দ করা মোবাইল ফোনের একটিতে `আমি কিশোর্’ আইডি লগইন করা ছিল।
“আলামত পর্যালোচনা করে র্যাব রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, করোনাভাইরাস, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রমাণ পেয়েছে।”
এছাড়া হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুক মেসেঞ্জারে তাসনিম খলিল, সায়ের জুলকারনাইন, শাহেদ আলম, আসিফ মহিউদ্দিনের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ’ পাওয়ার কথাও বলা হয় এজাহারে।
র্যাব বলছে, “সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়, করোনাভাইরাস, জাতির জনক, সরকার প্রধান, বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিশোরের কার্টুন ভাইরাল করার জন্য তাসনিম খলিল ইন্ধন দেন।”
তাসনিম খলিলের সঙ্গে কিশোরের ‘দীর্ঘদিনের যোগাযোগ’ বলে র্যাবের দাবি।
এজহারে বলা হয়, “তাসনিম খলিলের ফেইসবুকে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনাভাইরাস, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী ও এর প্রধানদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যসহ গুজব ছড়ানোর উদ্দেশ্যে পোস্ট দেওয়া হয়।”
এজহারে বলা হয়, কিশোরের দেওয়া তথ্যে মুশতাক আহমেদকে লালমাটিয়া থেকে আটক করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে একটি শাওমি ফোন, অ্যাপলের ম্যাক মিনি জব্দ করে।
“মুশতাক ও শায়ের জুলকারনাইনের সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুক মেসেঞ্জারে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়।”
‘মাইকেল কুমির ঠাকুর’ নামে একটি বেনামী পেইজ থেকে রাষ্ট্রিবিরোধী গুজব ছড়ানো হয় বলে এজাহারে বলা হয়।
দিদারুল ও মিনহাজ ফেইসবুকে মুশতাকের ‘ফ্রেন্ড’ উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, “তাদের সাথে হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুক মেসেঞ্জারে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।”