কার্টুনিস্ট কিশোর রাজনৈতিক কার্টুন এঁকে থাকেন, আর ব্যবসায়ী মুশতাক অনলাইনে লেখালেখিতে সক্রিয়।
র্যাব মঙ্গলবার রাতে দুজনকে গ্রেপ্তার করে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে রমনা থানায় হস্তান্তর করে।
পুলিশ দুজনকে বুধবার ঢাকার আদালতে হাজির করলে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন মহানগর হাকিম বেগম মাহমুদা বেগম।
র্যাবের করা এই মামলায় কিশোর ও মুশতাককে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কোনো আবেদন পুলিশের পক্ষ থেকে করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট আদালত পুলিশের কর্মকর্তা এসআই প্রণয় কুমার সরকার ও নিজাম উদ্দিন ফকির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রিমান্ডের আবেদন না থাকায় অভিযুক্তদের কোর্ট হাজত থেকে এজলাসে তোলা হয়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই জামশেদুল ইসলাম আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে বলেন, কার্টুনিস্ট কিশোর তার ‘আমি কিশোর’ নামের ফেইসবুক একাউন্টে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনামূলক কার্টুন-পোস্টার পোস্ট করতেন। আর মুশতাক তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরের সেসব পোস্টের কয়েকটি শেয়ার করেন।
তিনি দুজনকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
অন্যদিকে কিশোর ও মুশতাকের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন।
আইনজীবীরা শুনানিতে বলেন, কিশোর ও মুশতাক নির্দোষ। তারা সরকারবিরোধী কোনো স্ট্যাটাস বা পোস্ট দেননি। কোনো গুজব ছড়াননি। তারা যে পোস্ট দিয়েছেন, তাতে গঠনমূলক সমালোচনা ছিল।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালত পুলিশের কর্মকর্তারা তার বিরোধিতায় বলেন, বিষয়টির তদন্ত চলছে। যেহেতু আসামিরা সদ্য ধৃত, সে কারণে তাদের কারাগারে পাঠানো হোক।
শুনানি শেষে হাকিম মাহমুদা বেগম জামিন আবেদন নাকচ করে দুজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-কমিশনার জাফর হোসেন জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার কিশোরকে কাকরাইলের এবং মুশতাককে লালমাটিয়ার বাসা থেকে র্যাব গ্রেপ্তার করে বলে জানান রমনা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম।
রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহিরুল ইসলাম বলেন, র্যাব-৩ এর ডিএডি আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। সেখানে কিশোর ও মুশতাকসহ মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার এএসপি আবু জাফর মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা দুজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকাবিরোধী প্রচারণা, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ নিয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়াচ্ছিলেন।”
মামলার বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে এই র্যাব কর্মকর্তা জানান।
মামলায় যে অভিযোগ
র্যাবের করা এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ফেইসবুক ব্যবহার করে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনাভাইরাস মহামারী সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র/সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিপ্রায়ে অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি ছড়ানো, অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, ‘I am Bangladeshi’ পেইজ থেকে রাষ্ট্রের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে বিভিন্ন পোস্ট দেওয়া হয়। ওই পেইজের এডিটর সায়ের জুলকারনাইন, আহমেদ কবির কিশোর, আশিক ইমরান, ফিলিপ শুমাখার, মুশতাক আহমেদ, স্বপন ওয়াহিদ দীর্ঘদিন পেইজটি পরিচালনা করছেন।
কিশোরকে গ্রেপ্তারের বিবরণ দিয়ে এজহারে বলা হয়, আটকের সময় তার বাসা থেকে দুটি মোবাইল ফোন, একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক, একটি সিপিইউ, ২০০টি সিডি উদ্ধার করা হয়। জব্দ করা মোবাইল ফোনের একটিতে `আমি কিশোর্’ আইডি লগইন করা ছিল।
“আলামত পর্যালোচনা করে র্যাব রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, করোনাভাইরাস, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রমাণ পেয়েছে।”
এছাড়া হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুক মেসেঞ্জারে তাসনিম খলিল, সায়ের জুলকারনাইন, শাহেদ আলম, আসিফ মহিউদ্দিনের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ’ পাওয়ার কথাও বলা হয় এজাহারে।
র্যাব বলছে, “সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়, করোনাভাইরাস, জাতির জনক, সরকার প্রধান, বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিশোরের কার্টুন ভাইরাল করার জন্য তাসনিম খলিল ইন্ধন দেন।”
তাসনিম খলিলের সঙ্গে কিশোরের ‘দীর্ঘদিনের যোগাযোগ’ বলে র্যাবের দাবি।
এজহারে বলা হয়, “তাসনিম খলিলের ফেইসবুকে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনাভাইরাস, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী ও এর প্রধানদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যসহ গুজব ছড়ানোর উদ্দেশ্যে পোস্ট দেওয়া হয়।”
এজহারে বলা হয়, কিশোরের দেওয়া তথ্যে মুশতাক আহমেদকে লালমাটিয়া থেকে আটক করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে একটি শাওমি ফোন, অ্যাপলের ম্যাক মিনি জব্দ করে।
“মুশতাক ও শায়ের জুলকারনাইনের সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুক মেসেঞ্জারে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়।”
‘মাইকেল কুমির ঠাকুর’ নামে একটি বেনামী পেইজ থেকে রাষ্ট্রিবিরোধী গুজব ছড়ানো হয় বলে এজাহারে বলা হয়।
দিদারুল ও মিনহাজ ফেইসবুকে মুশতাকের ‘ফ্রেন্ড’ উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, “তাদের সাথে হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুক মেসেঞ্জারে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।”