জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি প্রায় এক সপ্তাহ পর বুধবার বিকালে পাওয়ার আশা করলেও হতাশ হয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীরা।
Published : 14 Feb 2018, 12:18 PM
বিএনপির চেয়ারপাসনের আইনজূীবী সানাউল্লাহ মিয়া বুধবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রায়ের সার্টিফায়েড কপি আজ পাইনি। আগামীকাল পাব বলে আশা করছি।”
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রায়ের কপিতে বানান ঠিক করাসহ কিছু ছোট ছোট সংশোধনী রয়েছে। সেগুলো ঠিক করেই প্রকাশ করা হবে।”
রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর হাই কোর্টে খালেদা আপিল করে জামিনের আবেদন করবেন। তাতে তিনি কারামুক্ত হবেন বলে আশায় আছে বিএনপি।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে ৫ বছর কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিলেন ঢাকার বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান। তিনি সেদিন ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়েছিলেন।
এরপর বিএনপির আইনজীবীরা রায়ের অনুলিপি পেতে আবেদন করেন। তা না পাওয়ায় বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, খালেদাকে কারাগারে আটকে রাখতেই রায়ের অনুলিপি দিতে দেরি করা হচ্ছে।
খালেদার অন্যতম আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেজবাহ সোমবার বলেছিলেন, রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি নেওয়ার জন্য তিন হাজার পৃষ্ঠার স্ট্যাম্প ফোলিও পেপার বিচারক আখতারুজ্জামানের পেশকার মোকাররম হোসেনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ওই কাগজেই রায়ের সত্যায়িত কপি লেখা হবে।
এরপর সানাউল্লাহ মিয়া বুধবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আজ বিকাল ৪টায় আমরা রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাব। কপি হাতে পেলেই আপিল আবেদন জমা দেব।”
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পুরান ঢাকার আদালতপাড়ায় প্রতীকী অনশন করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের শতাধিক আইনজীবী।
পুরনো জেলা জজ আদালত ভবন ও মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের মাঝখানের চত্বরে প্রতীকী অনশনে থাকার সময়ই রায়ের কপি পাওয়ার আশাবাদের কথা জানিয়েছিলেন সানাউল্লাহ মিয়া।
জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় জামিন হলে খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বাধা না থাকলেও তাকে অন্য কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখালে সেই পথ আটকে যাবে।
খালেদাকে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারামুক্তিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে বলে বিএনপির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল মঙ্গলবার বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে অন্য কোনো মামিলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। তিনি শুধু জিয়া এতিমখানা দুর্নীতির মামলায় বন্দি আছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একথা বলার পরদিন বুধবার মানহানির এক মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন নাকচ করে দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা ও মানচিত্র অবমাননা মামলার বাদী জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী বুধবার খালেদা জিয়াকে শোন অ্যারেস্টের আবেদন করেন।
ঢাকার মহানগর হাকিম আহসান হাবীবের কাছে এ আবেদন দাখিল করে আওয়ামী লীগের এই সমর্থক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই মামলায় অনেক আগেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে, যা কার্যকর করা বা তামিলের অপেক্ষায় ছিল।
“তিনি যেহেতু অন্য মামলায় কারাগারে রয়েছেন তাই এই মামলায় তাকে শোন অ্যারেস্টের আবেদন করেছি। শুনানি নিয়ে বিচারক পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।”
বিকালে শুনানি শেষে সেই আবেদন খারিজ করে দেন বিচারক।
এ আদালতের পেশকার ইখতিয়ার রহমান বলেন, “আদালত আবেদনটি আমলে না নিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন এবং সেই সঙ্গে আগামী ১৪ মার্চ এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আবারও তারিখ রেখেছেন।”
খালেদা জিয়াকে এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিলের দিন ছিল বুধবার।
গত বছরের ১২ অক্টোবর এই মামলাটিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন একই বিচারক।
এরপর থেকে বারবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল বিষয়ক প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেয়নি পুলিশ।
এই মামলার অভিযোগে বলা হয়, ১৯৮১ সালের ১৭ মে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এলে জিয়াউর রহমান তাকে হুমকি দেন ও অবরুদ্ধ করে রাখন। ২০০১ সালে জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে সরকার গঠন করে বিএনপি সরকার গঠন করে। খালেদা জিয়া স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার আলবদর নেতাকর্মীদের মন্ত্রী এমপি করে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকা তাদের গাড়িতে তুলে দিয়েছেন, যা মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা ও মানচিত্রের অবমাননার শামিল।
বিচারকের আদেশের প্রতিক্রিয়ায় এ বি সিদ্দিকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও আমরা আদালত থেকে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করানোর আবেদনটি গ্রহণ করাতে পারলাম না। আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হল। এটি খুব দুঃখজনক।”
ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরনো কারাগারে এখন বন্দি আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা।
বুধবার তাকে দেখতে সাতজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেখানে গেলেও অনুমতি না পেয়ে ফিরে আসেন।