পুলিশ কর্মকর্তার গাড়ি চড়ে ‘স্পেশাল জেলে’ খালেদা জিয়া
লিটন হায়দার ও কামাল তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 08 Feb 2018 09:58 PM BdST Updated: 11 Feb 2018 03:32 PM BdST
-
খালেদা জিয়াকে নিয়ে কারাগারে প্রবেশ করছে গাড়ি।
-
-
প্রায় দশ বছর পর আবারও কারাগারে যেতে হল সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়াকে; তবে এবারই প্রথম তাকে দুর্নীতি মামলায় দণ্ড নিয়ে বন্দি হতে হল।
Related Stories
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের নামে বিদেশ থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এক দশক আগের এক মামলায় আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ওই রায়ের পরপরই তাকে এক পুলিশ কর্মকর্তার গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পুরনো ভবনে, যেখানে তিনিই এখন একমাত্র কয়েদি।
এইচ এম এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়ে ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর গ্রেপ্তার হতে হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। সে সময় ঢাকা সেনানিবাসে শহীদ মইনুল সড়কের বাড়িতেই তাকে গৃহবন্দি রাখা হয়েছিল।
সর্বশেষ ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জরুরি অবস্থার মধ্যে ওই বাড়ি থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বিএনপি চেয়ারপারসনকে। সে সময় সংসদ এলাকার একটি ভবনকে ‘উপ কারাগার’ ঘোষণা করে ১ বছর ৭ দিন তাকে সেখানে রাখা হয়। পাশেই আরেকটি বাড়িতে বন্দি ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
বাহাত্তর বছর বয়সী খালেদাকে এবার যেখানে রাখা হয়েছে, তাকে বলা হচ্ছে ‘বিশেষ কারাগার’।
আর বন্দি হিসেবে খালেদা জিয়া একজন বিশেষ ব্যক্তিই বটে। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের মধ্যে এরশাদের পর কেবল তাকেই দুর্নীতির দায় নিয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী, এরশাদকে এ কারাগারেই রাখা হয়েছিল।
নাজিম উদ্দিন রোডে ২২৮ বছরের পুরনো ঠিকানা থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ২০১৬ সালে কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়। ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী ওই ভবনে এখন আর কোনো বন্দিকে রাখা হয় না।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের কয়েকটি বছর কেটেছে এ কারাগারে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর এখানেই সংঘটিত হয় জাতীয় চার নেতার নির্মম হত্যাযজ্ঞ। সেসব ঐতিহাসিক স্মৃতি সংরক্ষণ করে যাদুঘর করার প্রক্রিয়া চলছে এখন।
কারা অধিদপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক তৌহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খালেদা জিয়াকে আপাতত পুরাতন কারাগারের প্রশাসনিক ভবনে রাখা হয়েছে। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এখন এটাকে ‘স্পেশাল জেল’ বলছি।”

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা ঘোষণার পর বকশীবাজারের বিশেষ আদালত থেকে কারাগারের উদ্দেশে বের হন খালেদা জিয়া। ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুরনো কারাগারের মূল ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে। ওই কক্ষ এক সময় একজন কারা কর্মকর্তা ব্যবহার করতেন। সামনে একটি খোলা জায়গাও আছে। তবে যে কোনো সময় তাকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হতে পারে।
খালেদা জিয়ার সাজা হলে তাকে কোথায় রাখা হবে- সেই প্রশ্নে দুদিন ধরেই পুরনো কারাগারের ওই কক্ষের কথা ঘুরে ফিরে আসছিল। ওই কক্ষ সাফ সুতোর করার খবরও আসছিল সংবাদমাধ্যমে।
কারাগারে যা যা সুবিধা পাবেন খালেদা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কারাগারে প্রথম শ্রেণির বন্দির (ডিভিশন-১) মর্যাদা পাবেন খালেদা জিয়া। কারা বিধির ৬১৭ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ডিভিশন পাওয়া কয়েদিরা একটি পত্রিকা ও টেলিভিশন দেখার সুযোগ পান। বাড়তি পত্রিকা চাইলে কিনে নিতে হয়। চাহিদা অনুযায়ী বই পড়ার সুযোগও তারা পান। সাত দিনে একবার চিঠি লিখতে পারেন, তবে তা কারা কর্তৃপক্ষের ‘সেন্সরের’ মধ্যে দিয়েই যাবে। কারা কর্মকর্তারা বলছেন, মর্যাদা অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে ‘উন্নত মানের’ খাবার সরবরাহ করা হবে। এক্ষেত্রে তার পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রথম শ্রেণির বন্দিদের জন্য কারাগারে চিকন চালের ভাতের সঙ্গে প্রতিদিনই মাছ বা মাংস, সবজি, ডালের ব্যবস্থা থাকে। চা বা কফিও চাহিদামাফিক দেওয়া হয়। সকালের নাস্তা দেওয়া হয় পছন্দ অনুযায়ী, বিকালের নাস্তায় থাকে ফলমূল। কারাগারের সরবরাহ করা খাবারের বাইরে নিজের খরচে বাড়তি খাবার আনাতে পারেন তারা। তবে সেই খাবার কিনতে হয় কারাগারের ক্যান্টিন থেকে। স্বজনরা মাসে একবার প্রথম শ্রেণির কয়েদিদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। তখন তারা শুকনো খাবার ও ফল দিয়ে আসতে পারেন। কারাগারের যে কক্ষে খালেদা জিয়া থাকছেন, সেখানে ‘উন্নতমানের’ চেয়ার-টেবিল, খাট, নিয়ম অনুযায়ী অন্যান্য আসবাবপত্র ও মশারি দেওয়া হয়েছে। আর প্রথম শ্রেণির বন্দিদের জন্য টয়লেটে কমোডের ব্যবস্থাও থাকে বলে কারা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। |
বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার আগে থেকেই পুরনো কারাগার ঘিরে নাজিমুদ্দিন রোডের প্রবেশমুখগুলোতে কড়াকড়ি বাড়ানো হয়। পুরনো কারাগারের প্রধান ফটক থেকে দুই পাশে একশ গজ দূরে ব্যারিকেড বসানো হয়। সড়কের দোকানপাট সকাল থেকেই ছিল বন্ধ।
রায় ঘোষণার পর বিকাল পৌনে ৩টার দিকে খালেদা জিয়াকে আদালত থেকে বের করে কারাঅধিদপ্তরের মূল ফটকের বিপরীতে মসজিদ এবং উপ কারামহাপরিদর্শক কার্যালয়ের সামনে দিয়ে ‘স্পেশাল জেলে’ নেওয়া হয়।
বকশীবাজারের বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাস থেকে হাঁটা দূরত্বে পুরনো কারাগার ভবনে খালেদাকে নেওয়া হয় উপ-কমিশনার ফরিদা রহমানের গাড়িতে করে। চারপাশ থেকে ওই গাড়ি ছিলেন সশস্ত্র পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা। সামনে ও পেছনে আরও কয়েকটি গাড়ি ছিল।
ফরিদা রহমান বসেছিলেন গাড়ির সামনের আসনে। আর খালেদা জিয়া ছিলেন পেছনের আসনে, একা।
উপ-কমিশনার ফরিদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গাড়িতে থাকলেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার কোনো কথা হয়নি।

একজন কারারক্ষী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, খালেদা জিয়ার দেখভাল করার জন্য কাশিমপুর মহিলা কারাগার থেকে পাঁচজন নারী কারারক্ষীকে নাজিমউদ্দিন রোডে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন ডেপুটি জেলার পদ মর্যাদার।
দুপুরের দিকে কারাগারের একটি গাড়িতে করে লেপ তোষকও নিতে দেখা যায় কারাগারের ভেতরে।
কারাগারের সামনের দোকানগুলো কবে খুলবে জানতে চাইলে লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার ইব্রাহিম খান বলেন, “আগামীকালই খুলতে পারবে।”
রায়ের পর বিকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খাঁন কামাল সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার ‘বয়স, সামাজিক মর্যাদা ও অবস্থান’ বিবেচনা করেই পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে রাখা হয়েছে।
“তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বড় একটি রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন। … সবকিছু বিবেচনা করেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে জেলকোড অনুযায়ী সব সুবিধাই পাবেন।
-
মেঘনায় সেলিমের বালু উত্তোলন বন্ধই থাকছে
-
দুবছর পর ঢাকা থেকে কলকাতার পথে মৈত্রী এক্সপ্রেস
-
রাজনৈতিক শক্তি, আমলাতন্ত্র পুলিশের পরিবর্তন চাইবে না: শহীদুল
-
স্ত্রীর পাশে শায়িত হলেন গাফ্ফার চৌধুরী
-
গাফফার চৌধুরীকে সাংবাদিকদের শ্রদ্ধা
-
বাহরাইনে ছবির গল্পে-কথায় এক টুকরো বাংলাদেশ
-
প্রচার শুরু: মাঠ পর্যায়ে যাচ্ছেন সিইসি ও কমিশনাররা
-
শহীদ মিনারে শনিবার দুপুরে গাফফার চৌধুরীকে শ্রদ্ধা
সর্বাধিক পঠিত
- অবিশ্বাস্য পথচলা শেষে শিরোপা হাসি রিয়ালেরই
- দুর্দান্ত কোর্তোয়া, অবিশ্বাস্য কোর্তোয়া
- ২৫ বছরের চেষ্টা বিফল, বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে কানাডা
- এগিয়ে আসছে রুশ বাহিনী, পূর্বাঞ্চল ছাড়তে পারে ইউক্রেইনীয় সেনারা
- ইতিহাস গড়লেন আনচেলত্তি
- ‘আর্জেন্টিনার জন্য প্রতিটি মিনিট, ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ’
- হেরাথের ক্যাম্পে ৩২ স্পিনার, নির্বাচকরা খুঁজবেন নতুন প্রতিভা
- ইউক্রেইনের ‘শত্রু’ তালিকায় উঠল কিসিঞ্জারের নাম
- চাপ ছিল, প্রলোভনও ছিল: মসিউর
- ‘৩০ বলে ৩০ রান থেকে ৫০ বলে ৯০ করে ফেলতে পারে বাটলার’