বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যাদের ঘর নষ্ট হয়েছে তাদের ঘর বানিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ভূমিহীনদের খাসজমি দেওয়া হবে।
Published : 20 Aug 2017, 04:05 PM
রোববার বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা উত্তরাঞ্চলের দুই জেলা দিনাজপুর ও কুড়িগ্রামে গিয়ে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর করে দেওয়া থেকে শুরু করে নতুন ফসল না ওঠা পর্যন্ত খাদ্য, কৃষকদের ঋণ ও বীজ এবং শিক্ষার্থীদের নতুন বই দেবে সরকার।
ঋণের কিস্তির জন্য বন্যার্তদের চাপ না দিতে এনজিওগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা ঋণ দিয়েছেন, দয়া করে বন্যাকবলিত মানুষদের অত্যাচার ও জুলুম করবেন না।”
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী,মৌসুমের দ্বিতীয় দফা বন্যায় এখন কবলিত ৩১ জেলার ১৭৬টি উপজেলার ৪৪টি পৌরসভা ও ১৩১৭টি ইউনিয়ন। বন্যায় ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৫৮৯ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৬১ লাখ ২৩ হাজার ৯৫৪ জন। মৃত্যু হয়েছে ১১৭ জনের। সারা দেশে ৬৩০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৯০ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
দুপুরে দিনাজপুর জেলা স্কুলে ত্রাণ বিতরণের আগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বন্যায় যাদের ঘর ভেঙ্গেছে তাদের ঘর করে দেওয়া হবে, যাদের ফসল নষ্ট হয়েছে তাদের ফসল না উঠা পর্যন্ত খাদ্য সহযোগিতা করা হবে।”
দেশে খাদ্যের মজুদ ‘পর্যাপ্ত’ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, “গত আট বছরে কোনো মঙ্গা হয়নি। ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে উত্তরাঞ্চলের এক সময়ের মঙ্গা দূর করেছিলাম। আমরা সব মানুষের জন্য খাদ্য-বাসস্থানের ব্যবস্থা করব।”
এরপর প্রধানমন্ত্রী বিরল উপজেলার তেঘরা উচ্চ বিদ্যালয় ত্রাণশিবিরে ত্রাণ বিতরণ শেষ করে কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
বিকালে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার পাঙ্গা হাই স্কুল মাঠে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বন্যার্তদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সবাইকে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে। আগামী মাস থেকে দেশের ৫০ লাখ মানুষকে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল তিন মাস দেওয়া হবে।
“খাসজমি দেব ভূমিহীনদের এবং যাদের ঘর নাই আমরা ঘর-বাড়ি করে দেব।”
বন্যার্তদের ধৈর্য ধরে সরকারের উপর আস্থা রাখতে বলেন তিনি।
বন্যার পানি কমার পর রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই বিষয়ে খেয়াল রাখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
পানি নিষ্কাশনের জন্য ক্ষেতের আইল কেটে দেওয়ার অনুরোধ করে তিনি বলেন, “এখনও ক্ষেতে পানি জমে আছে। ইতোমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি এই সমস্ত ক্ষেতের আইল কেটে দিয়ে অথবা পানিটা নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় রাস্তা বা যা যা প্রয়োজন করে পানিটা বের করে দিতে হবে।
বন্যায় এরইমধ্যে দুই হাজার ৭৮৯ কিলোমিটার রাস্তা, ১২৩টি ব্রিজ ও কালভার্ট এবং ২৮০টি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রেল লাইনও প্লাবিত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব প্রস্ততি রয়েছে বলে বন্যার্তদের আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বন্যার পানি নেমে গেলেই রাস্তা মেরামতের কাজ ইনশাল্লাহ আমরা শুরু করে দেব।”
ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ সংস্কারে সেনাবাহিনী এবং প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী, অনসার-ভিডিপির সদস্যদের নিয়োজিত করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী,পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজার রহমান, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ছিলেন।
দুই জেলায়ই ত্রাণ বিতরণের সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্যরা ছিলেন।