হাওড়াঞ্চলের বিভিন্ন বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে ফসলহানির জন্য বাঁধগুলোকে ‘অসমাপ্ত ও দুর্বল’ আখ্যায়িত করে এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দুর্নীতিকেই দায়ী করা হয়েছে রাজধানীর এক সমাবেশ থেকে।
Published : 11 Apr 2017, 04:25 PM
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক নাগরিক সমাবেশে এ অভিযোগ এনে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও হাওড়ের রের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম বিস্তৃত করার দাবি জানানো হয়।
নাগরিক সংহতি, অক্সফ্যাম ও সিএসআরএল আয়োজিত এই সমাবেশ থেকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওড়াঞ্চলকে ‘দুর্গত অঞ্চল’ ঘোষণার দাবিও করেন বক্তারা।
সমাবেশ ‘হাওর অ্যাডভোকেসি’ নামে একটি সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুজ্জামান শরিফ বলেন, “হাওরের অন্যতম প্রধান সমস্যা হল, সঠিক সময়ে এবং টেকসই কায়দায় ফসল রক্ষাবাঁধ তৈরি ও মেরামত না করা। এ কাজটি না হওয়ায় ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় আটবার হাওড় প্লাবিত হয়ে কৃষকরা ফসল তুলতে পারেনি।”
বিভিন্ন মাধ্যমে থেকে পাওয়া তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “হাওরাঞ্চলে ফসল রক্ষা বাঁধগুলো ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। এর কারণ দেরিতে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু, দুর্বল ও নিম্নমানের বাঁধ, কিছু অপ্রয়োজনীয় জায়গাতে বাঁধ নির্মাণ এবং সংস্কারের উদ্যোগের অভাব লক্ষ্য করা গেছে।”
‘অসমাপ্ত ও দুর্বল’ বাঁধের কারণে বাঁধ ভেঙে হাওড় তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিতে পড়েছে জানিয়ে শরিফুজ্জামান বলেন, “সরকারি হিসেবেই নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ এই তিন জেলাতে প্রায় দুই হাজার ১০০ কোটি টাকার ফসলহানি হয়েছে। এই দায়ভার কার? এই দায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নিতে হবে।”
তিন জেলাতে এক লাখ ৭১ হাজার ১১৫ হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে সমাবেশে বক্তরা বলেন, এ কারণে এবার দুই কোটি ৫ লাখ মণ ধান কৃষকের ঘরে উঠছে না।
এতে কৃষক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, একই সাথে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলে আশঙ্কা কথা জানিয়েছেন তারা।
সমাবেশ হাওড়ের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে ‘দুর্গত অঞ্চল’ ঘোষণা, পরবর্তী ফসল না উঠা পর্যন্ত স্বল্প দামের খাদ্য সরবরাহ কর্মসূচি চালু, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম গ্রহণ, বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি রোধে একটি কাঠামো গড়ে তোলার দাবি জানান বক্তারা।
সমাবেশ অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযানের (সিএসআরএল) প্রদীপ কুমার রায়, ঢাকাস্থ কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ, সুমানগঞ্জের যুব সমিতির নেতা মেনন চৌধুরী।