আশকোনায় র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর মারা যাওয়া আব্দুল হানিফ মৃধার বন্ধু নিখোঁজ সোহেল হোসেন মন্টুর সন্ধান বের করতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন এই বাহিনীর কর্মকর্তারা।
Published : 20 Mar 2017, 09:51 PM
হানিফকে গত শুক্রবার আশকোনায় ব্যারাকে আত্মঘাতী হামলার পর গ্রেপ্তারের কথা র্যাব জানালেও তার পরিবারের দাবি, তাদের ছেলেকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল, তখন সোহেলকেও তুলে নেওয়া হয়।
হানিফ মৃধার মৃত্যুর পর পুরান ঢাকার আসবাবপত্র ব্যবসায়ী সোহেলকে নিয়ে উদ্বিগ্ন তার মা মমতাজ বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা।
পুত্রবধূ ও চার বছরের নাতনিকে নিয়ে মমতাজ সোমবার সকালে ছেলের সন্ধানে র্যাব-১ এর কার্যালয়ে যান, কথা বলেন এই ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের সঙ্গে।
মমতাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “র্যাবের অধিনায়ক আমার ছেলের ব্যাপারে সব তথ্য লিখে রেখেছেন। তার কোনো সন্ধান পেলে জানাবেন।”
র্যাবের অধিনায়ক দুপুরে খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি যাত্রাবাড়ীর বাড়িতে ফিরতে অটোরিকশাও ঠিক করে দেন বলে জানান মমতাজ।
র্যাব-১-এর অধিনায়ক সারওয়ার বিন কাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা ছেলেকে ফিরে পেতে সহায়তা চাইতে র্যাবের কাছে এসেছিলেন। তাদের থেকে সোহেলের ব্যাপারে তথ্য রাখা হয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।”
এখন পর্যন্ত সোহেলের কোনো খবর র্যাবের কাছে নেই বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গত ৪ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ঢাকার মোহাম্মদপুরের হানিফ মৃধার ভাই আব্দুল হালিম মৃধা একটি সাধারণ ডায়রি করেন। তাতে তিনি বলেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তার ভাই হানিফকে বন্ধু সোহেলসহ কাচপুর সেতুর কাছ থেকে তুলে নেওয়া হয়।
তারপর কোনো খোঁজ না মেলার মধ্যে গত শনিবার হানিফের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে আসে।
র্যাব তখন জানায়, হানিফকে শুক্রবার আত্মঘাতীর বিস্ফোরণ ঘটানোর পর সন্দেহভাজন হিসেবে আশকোনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গ্রেপ্তারের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠায় তারা। সেখানে কিছুক্ষণের মধ্যে তার মৃত্যু ঘটে।
হানিফ ও সোহেল দুজনের বাড়ি বরগুনায়। বরিশালে চরমোনাই পীরের ওরস থেকে তারা দুজন ঢাকায় ফিরছিলেন বলে জানান মমতাজ।
তিনি বলেন, সোহেলের এক মামা সগীর মাস্টার ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ চালান। ওরসের যাত্রীদের নিয়ে তার লঞ্চটিতে চড়ে সোহেল ও হানিফ ঢাকা আসছিলেন।
এই লঞ্চটি রুটের বাইরে বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের নামিয়ে দিতে দিতে আসছিল; কাচপুরে সোহেল ও হানিফকে নামিয়ে দেওয়া হয়।
মমতাজ বলেন, “হানিফের গাড়ি তাদের নিতে আসে। তারা কাচপুর সেতুর কাছে দাঁড়িয়ে থাকা হানিফের গাড়িটি লঞ্চের ছাদ থেকে মামাকে দেখায়। তারা নামার পর মামা লঞ্চের ছাদ থেকে দেখতে পান, তারা গাড়িতে উঠতে গেলে কয়েকজন ধরে অন্য গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।”
সগীর মাস্টার তখন সোহেলের মোবাইলে ফোন দিয়ে বন্ধ পাওয়ার পর বাড়িতে বোনকে খবর দেন।
মমতাজ জানান, নিখোঁজ হওয়ার এক সপ্তাহ পর একদিন একটি অপরিচিত নম্বর থেকে তার কাছে আসে। জানতে চাওয়া হয়, ‘আপনি কি মন্টুর মা?’
“হ্যাঁ বলার পর ওপাশ থেকে বলে, আমরা আইনের লোক। এরপর তারা আর যোগাযোগ করেনি।”
হানিফের পরিবারের কাছে ফোন করে ‘আইনের লোক’ পরিচয় দিয়ে ১০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে বলে শুনেছেন সোহেলের মা।
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান সোহেলের মা
নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইছেন মমতাজ বেগম।
স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর একমাত্র ছেলেকে নিয়েই তার ভুবন। তার খোঁজ না পেয়ে ভীষণ উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন এই নারী।
মমতাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৯৭৪ সালে জন্মের এক বছর পর ওর বাবার সঙ্গে আমার বিচ্ছেদ হয়। বরগুনায় অনেক কষ্ট করে তাকে বড় করেছিলাম। এরপর ২০০৬ সালে তার বিয়ে দিই।তার চার বছরের একটা ছেলে সন্তানও আছে।
“প্রায় এক মাস তার কোন খোঁজ নাই। আমার সন্তানের সন্ধান চাই। এজন্য প্রধানন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
সোহেলের স্ত্রী নিপা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছোটবেলায় আমার স্বামী নিজের বাবাকে ছাড়া বড় হয়েছেন। এখন তার নিজের ছেলের বয়স চার বছর…।”
বরগুনা থেকে তিন মাস আগে ঢাকায় আসার পর ছেলেকে আজিমপুরের একটা স্কুলে ভর্তি করেন সোহেল।
সোহেল কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন জানিয়ে নিপা বলেন, “তার কোনো শত্রুও নাই। সে কোথায় আছে, কী করছে, কিছু জানি না। এই কয়দিনে সবাই অত্যন্ত কষ্টে দিনরাত পার করছি। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি, তাকে যেন ফিরে পাই।”