সংশোধিত ‘দেওয়ানি আদালত আইন’ অনুযায়ী উচ্চ আদালতে বিচারাধীন দেওয়ানি আপিল, রিভিশনসহ অন্যান্য মামলা তিন মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা আদালতে স্থানান্তর না করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 30 May 2016, 01:41 PM
স্থানান্তরের বিষয়ে পদক্ষেপ না নিতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও হাই কোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার রুলসহ এই আদেশ দেয়।
সংশোধিত দেওয়ানি আদালত আইনের ৪ (৩) ধারাটি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
আইন সচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও হাই কোর্টের রেজিস্ট্রারকে চার সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দিতে হবে।
দেওয়ানি মামলা বিচারের ক্ষেত্রে বিচারকদের আর্থিক এখতিয়ার (সম্পত্তি বা অর্থে যে অংকের টাকা নিয়ে বিরোধ) বৃদ্ধি করে সরকার সম্প্রতি ১৮৮৭ সালের সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট সংশোধন করে। গত ১২ মে তার গেজেট প্রকাশ করা হয়।
সংশোধিত আইন অনুযায়ী এখন একজন সহকারী জজ দুই লাখের পরিবর্তে ১৫ লাখ, সিনিয়র সহকারী জজ ৪ লাখের পরিবর্তে ২৫ লাখ এবং জেলা জজ ৫ লাখের পরিবর্তে ৫ কোটি টাকা মূল্যমানের অংকের মামলা নিষ্পত্তি করতে পারবেন।
ফলে ৫ লাখ থেকে ৫ কোটি টাকার যেসব দেওয়ানি মামলায় হাই কোর্টে আপিল হয়েছে, সেগুলো গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হয় সংশোধিত আইনের ৪ (৩) ধারায়।
উচ্চ আদালতের আইনজীবীদের একটি অংশ এই সংশোধনীর বিরোধিতা করেন। ৪ (৩) ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ব্যারিস্টার সাইদুল আলম খানসহ চার আইনজীবী গত রোববার একটি রিট আবেদন করেন, যা সোমবার হাই কোর্টে শুনানির জন্য আসে।
আদালতে রিটকারীদের পক্ষে সাইদুল আলম খান নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
শুনানিতে রিটকারী পক্ষ বলে, সংশোধিত আইনের ৪ (৩) ধারা সংবিধানের ৩১, ১০৯, ১০১, ১৪৯ ধারার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
সাইদুল আলম খান বলেন, “হাই কোর্টে এসব মামলার নিষ্পত্তি হলে বিচারপ্রার্থীরা আপিল বিভাগে যেতে পারতেন। কিন্তু আইন সংশোধনের ফলে এখন অনেক মামলা জেলা আদালতে চলে যাবে। এতে বিচারে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হবে।”
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এ ব্যাপারে সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে। সিনিয়র আইনজীবীরা কথা বলছেন, আইনটি প্রয়োজনে সংশোধন ও পরিবর্তন হতে পারে। এ অবস্থায় নির্দেশনা দেওয়া সমীচীন হবে না।”
সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট-১৮৮৭ আইনের সংশোধিত ৪ (৩) ধারা অনুসারে, এই আইনের ধারা ৩ দ্বারা ওই অ্যাক্ট এর সেকশন ২১ সংশোধন হওয়ার কারণে হাই কোর্ট বিভাগে বিচারাধীন অনধিক পাচ কোটি টাকা মূল্যমানের মূল মোকদ্দমা যুগ্ম জেলা জজ আদালত কতৃক প্রদত্ত ডিক্রি বা আদেশ হতে উদ্ভূত যে কোন আপিল বা কার্যক্রম, এই আইন কার্যকর হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে জেলা জজ আদালতে স্থানান্তরিত হবে এবং সংশ্লিষ্ট জেলা জজ নিজে তা নিষ্পত্তি করবেন অথবা অতিরিক্ত জেলা জজ এর নিকট নিষ্পত্তির জন্য প্রেরণ করবেন।