কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে সাড়ে চার হাজার বন্দি ধারণ ক্ষমতার নতুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 10 Apr 2016, 11:09 AM
রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী কেরানীগঞ্জে গিয়ে নবনির্মিত এ কারাগারের ফলক উম্মোচন করেন। পরে তিনি ৩১ একর জমির ওপর গড়ে তোলা এ কারাগারের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।
নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শিগগিরই পুরুষ বন্দিদের কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এছাড়া পাশেই আরেকটি কারাগার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে, যেখানে ২৭০ জন নারী বন্দি রাখা যাবে।
১৭৮৮ সালে স্থাপিত নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কারাগার থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-মাওয়া সড়কের দক্ষিণে রাজেন্দ্রপুরে নতুন এই কারাগারের অবস্থান। প্রধানমন্ত্রী সকালে কারাগার প্রাঙ্গণে পৌঁছালে তাকে সেখানে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষকে অপরাধের পথ থেকে সরিয়ে আনাই তার সরকারের লক্ষ্য।
“আমরা মনে করি, একটা লোক অপরাধ করল – তাকে শাস্তি দিলাম – এতেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। একজন ছিঁচকে চোর যদি জেলখানায় গিয়ে আরও বড় চোরদের সংস্পর্শে আসে, তাহলে জেলখানা থেকে বেরিয়ে সে পাকা চোর হয়ে ওঠে। ট্রেনিংটা সেখানেই পেয়ে যায়।”
“আমাদের লক্ষ্য, তাদের উৎপাদনমুখী কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা... সেজন্য তারা মজুরি পাবে এবং সেটা জমা থাকবে। যখন সে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরবে, তখন একটা ছোটোখাটো ব্যবসা বা দোকান দিয়ে সমাজে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে।
“সে কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় তার মজুরির একটা অংশ পরিবারকেও দেওয়া হবে। কারণ, অপরাধ করে একজন কিন্ত তার জন্য ভুক্তভোগী হয় গোটা পরিবার।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খান এবং কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তরের আলোচনা শুরু হয়েছিল সেই আশির দশকে। তার তিন দশক পর ২০০৬ সালে বিষয়টি একনেকে পাস হলে শুরু হয় জমি অধিগ্রহণ। পরের বছর সেপ্টেম্বরে ৪০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
# ছয়টি ছয়তলা ভবনে হাজতি এবং একই ধরনের দুটি ভবনে কয়েদিদের রাখা হবে। # এসব ভবনের প্রতি তলায় ৪০টি করে কক্ষ; প্রতি কক্ষে ১৩ জন করে বন্দি রাখার ব্যবস্থা। # ২০ হাত দৈর্ঘ্য ও ১০ প্রস্থের প্রতিটি কক্ষে থাকবে চারটি করে সিলিং ফ্যান। পাশেই বাথরুম। # চারটি চারতলা ভবন হবে ডেঞ্জার সেল। ৪০০ দুর্ধর্ষ জঙ্গি ও সন্ত্রাসীকে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। # ডিভিশনপ্রাপ্ত (ভিআইপি) বন্দিদের জন্য ১৬টি বিশেষ কারাকক্ষ। |
‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’, জঙ্গি ও গুরুতর মামলার আসামিদের এ কারাগারে চারটি ভবনে রাখা হবে, যেগুলোকে বলা হচ্ছে ডেঞ্জার সেল। কারাগার ঘিরে আছে ১৮ ফুট উচ্চতার সীমানা প্রাচীর। তার ওপর দুই ফুট বৈদ্যুতিক তারের সেন্সর। প্রতিটি ভবনের রয়েছে আলাদা ছোট প্রাচীর।
কোনো আসামি ১৮ ফুট দেয়াল টপকে যেতে চাইলে তারের সেন্সরে স্পর্শ লাগামাত্র নিরাপত্তা ঘণ্টা বেজে উঠবে। সেই সঙ্গে পলায়নপর কয়েদিকে খেতে হবে বৈদ্যুতিক শক। এখানে এক ভবনের আসামি অন্য ভবনে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।
কারাগারের ভেতর চিকিৎসা কেন্দ্র, সেলুন ও লণ্ড্রি ভবন রয়েছে। বন্দিদের কাজের জন্য রয়েছে দোতলা ওয়ার্ক শেড।ব্যারাকে থাকতে পারবেন ৪০০ কারারক্ষী।
আর সবকিছু পর্যবেক্ষণের জন্য কারাগারের চারপাশে রয়েছে ৪০ ফুট উঁচু চারটি ওয়াচ টাওয়ার।