দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকারের প্রথম পৌর ভোটের শুরুতে বিধি ভঙ্গে ‘ক্ষুব্ধ’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ‘অ্যাকশন’ নিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
Published : 19 Dec 2015, 10:14 PM
২৩৪ পৌরসভায় ভোটের ১০ দিন আগে শনিবার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ‘সাদামাটা’ কথা বললেও বৈঠকে কঠোর মনোভাব দেখান তিনি।
বিয়াম মিলনায়তনে উপস্থিত কর্মকর্তাদের কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, “কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা অ্যাকশন নিয়েছি। আপনাদের দেখিয়েছি, এভাবে অ্যাকশন নিতে হয়। সব কিছু নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিলেও তো হয় না। দায়িত্ব দিয়েছি, দায়িত্ব নিয়েছেন, অ্যাকশন নেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের।”
বেলা ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত পৌর ভোট নিয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সভায় উপস্থিত চার শতাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে একথা বলেন সিইসি।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন ক্ষুব্ধ কণ্ঠে রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মাঝপথে বিদেশ সফরে থাকায় কঠোর সমালোচনায় পড়েন সিইসি কাজী রকিব।
এবার স্বল্প সময়ে দলভিত্তিক পৌর নির্বাচন করতে গিয়ে ‘চ্যালেঞ্জের মুখে’ পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রচারের শুরু থেকেই মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় প্রার্থীদের বিধিভঙ্গের খবরে সমালোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে।
এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বৈঠকের অপেক্ষায় ছিল ইসি। শনিবার বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তি-প্রতিনিধি ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন সিইসি।
বিশেষ করে রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সমন্বয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের জোর তাগিদ দেন কাজী রকিব।
এসময় রিটার্নিং কর্মকর্তাদেরকে ব্যবস্থা নিয়েই ইসিকে জানানোর কথা বলেন সিইসি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি না, সবাই একত্রে কাজ করলে এলাকায় কোনো বেআইনি কাজ হতে পারে; সেদিন এখনও আসেনি।”
তুলনামূলক পরিস্থিতি নিয়ে দেশের বাইরের সুষ্ঠু নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টানেন সিইসি।
কাজী রকিব বলেন, “আমরা আশা করি, দিন পাল্টাবে। আমাদের যে জোর এখন প্রয়োগ করা লাগছে, আস্তে আস্তে তা কমে এলে এতোটা বল প্রয়োগ করতে হবে না।”
আচরণবিধি ভঙ্গে কোনো প্রকার ছাড় না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, “আমি তো ঢাকায় বসে এটা চেক করতে পারব না। ফিল্ডে আপনাদের এটা করতে হবে, আইন ভঙ্গ হলে অ্যাকশন নিতে হবে। তারপরে আপনারা আমাদের জানাবেন। ”
নির্বাচনে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম খুবই গুরুত্বপূর্ণ- একথা উল্লেখ করে কাজী রকিব বলেন, “রিটার্নিং অফিসার ইন্সট্রাকশন দিবেন, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী সেভাবে কাজ করবে। আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে আপনাদের। এখন নিচ্ছেন, আরও নিতে হবে ভবিষ্যতে। কেউ যেন পার না পায়।”
‘পরিস্থিতি সমন্বয়ে’ ইসির সঙ্গে যোগাযোগের বিষয় তুলে ধরে কাজী রকিব বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ নম্বর দেওয়া রয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনের দিন কমিউনিকেশন খোলা থাকবে। মনিটরিং সেল কাজ করছে। বিভাগ ওয়ারি তারা কাজ করছেন। দিন যত ঘনিয়ে আসবে তারা তত সুন্দরভাবে কাজ করবেন।”
তিনি জানান, নির্বাচন পরবর্তী বিশৃঙ্খলা ঠেকানোর ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। ভোটের পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে।
“আশা করি, আজকের পর কোনো অনিয়ম ঘটবে না। সতর্ক থাকতে হবে।”
ডিসেম্বরের শেষ ভাগে ভোট করার বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে সিইসি বলেন, “এ নির্বাচনটা একসঙ্গে করছি না। আরও কিছু নির্বাচন থেকে যাচ্ছে। আইনি বাধ্যবাধকতা থেকে এ নির্বাচন করতে হয়েছে।”