পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, প্রচারও বিধি মেনে: সিইসি

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে’ রয়েছে বলে পৌর নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কোনো প্রয়োজন দেখছেন না প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Dec 2015, 09:28 AM
Updated : 19 Dec 2015, 09:28 AM

ভোটের প্রচারণায় বিধি ভঙ্গের যে অভিযোগ উঠেছে, তাও ঠিক নয় বলে তার মত। তিনি বলছেন, বিচ্ছিন্ন দুই-একটি ঘটনা ছাড়া আচরণ বিধি মেনেই নির্বাচনী প্রচার চলছে।

২৩৪ পৌরসভায় ভোটের ১০ দিন আগে শনিবার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনাররা।

রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে ওই বৈঠকের পর কাজী রকিব সাংবাদিকদের বলেন, “আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উদ্বেগ-আশঙ্কার কোনো কারণ নেই।”

সেনা মোতায়েনের কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিজিবি-র‌্যাব বলেছে, তারা ফোর্স বাড়িয়ে দেবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেনা মোতায়েনের কোনো পরিস্থিতি হয়নি।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে এই বৈঠক করে ইসি। সশস্ত্র বাহিনীর কোনো প্রতিনিধি এ বৈঠকে ছিলেন না।

সংসদ নির্বাচন বর্জন করে আসা বিএনপি দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয় প্রকাশের পাশাপাশি তাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার বন্ধের দাবিও জানাচ্ছে। 

সিইসি বলেন, “সন্ত্রাসীদের ধরপাকড়ে অ্যাকশন নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোট পর্যন্ত সন্ত্রাসী-অপরাধী ধরপাকড় কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত হবে। এ নিয়ে কোনো উদ্বেগ থাকবে না।

“জঙ্গি ও সন্ত্রাসের সমস্যা জেনারেল সমস্যা। এটা তেমন সমস্যা হবে না।”

মন্ত্রী-এমপিসহ সুবিধাভোগী নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আসছে বিএনপি। বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যের কাছ থেকেও।

তবে সিইসি বলেন, ““মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশে আচরণবিধি মেনেই প্রচারণা চলছে। দুয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে, ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

নির্বাচন কমিশনে ইতোমধ্যে বিধি লঙ্ঘনের ৩৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে, তার একটি তদন্তের জন্য রেখে বাকিগুলোর বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নিতে বলেছে ইসি।

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সব ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান কাজী রকিব।

“যে কোনো অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আমরাও অ্যাকশন নেব। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তারা ফিল্ডে রয়েছেন, তারাই এটা দেখবে। আমাদের প্রতিবেদন দেবে।”

এর মধ্য দিয়ে ইসি দায় এড়াচ্ছে বলে মন্তব্য এসেছে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইনের কাছ থেকে। তার মত, রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে সাহসী হবে না বলে এক্ষেত্রে সমস্যার কার্যকর সমাধান আসবে না।   

আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য এ পর্যন্ত কোনো মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না- সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তা এড়িয়ে যান সিইসি।

“কিছু প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাহী হাকিম ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে গণমাধ্যমে জেনেছি। তারা আমাদের কাছেও প্রতিবেদন দেবে। অনিয়ম ঘটলে প্রম্পট অ্যাকশন নেবে এখন।”

আড়াই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে সিইসি বলেন, “ভোট পরিস্থিতি শুনেছি, এখন পর্যালোচনা করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করব। ভোটে পূর্ণ শৃঙ্খলা থাকবে।”

ভোটকেন্দ্রে বিভিন্ন বাহিনীর কী পরিমাণ সদস্য নিয়োজিত থাকবে, তা জেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

“কেন্দ্রভিত্তিক কী পরিমাণ সদস্য নিয়োগ হবে, তার প্রস্তাব রয়েছে আমাদের। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে ফোর্স বাড়ানো হবে কেন্দ্রে। আমরাও এ সংক্রান্ত তথ্য পাব। পরে নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েনের সময় তা ঠিক করা হবে।”

ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে আগে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হলেও আগামীতে না হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কাজী রকিব।

“আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলে দিয়েছে-আগে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, কিন্তু সামনে যাতে না হয়। সাংবাদিকরাও অনুমোদিত কার্ড নিয়ে ভোটে ব্যাঘাত না ঘটানোর বিষয়টি খেয়াল রাখবেন আশা করি।”

সব ধরনের শঙ্কা উড়িয়ে সিইসি বলেন, “আমরা খুবই আশাবাদী উৎসবমুখর ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।”