স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংসদে যাওয়া ঠেকাতেই এক শতাংশ ভোটারদের স্বাক্ষর সংগ্রহের মত ‘জটিল নিয়ম’ আইনে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ফেইসবুকের কল্যাণে আলোচনায় আসা মডেল, অভিনেতা আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম।
Published : 07 Dec 2018, 07:07 PM
ভোটারদের সমর্থনের স্বাক্ষরে জালিয়াতির অভিযোগে বগুড়া-৪ আসনে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ার পর নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও প্রার্থিতা ফিরে পাননি তিনি।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিলের প্রতিবাদে শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী ঐক্য পরিষদ’ এর ব্যানারে এক সভায় এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হিরো আলম।
তিনি বলেন, “বর্তমানে জনগণ আওয়ামী লীগ-বিএনপি সরকার হবে তা চায় না। দুইটা দলের একটাকেও কেউ চায় না। তারা চাইছে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে। সরকার পরিকল্পিতভাবে এমন আইন করছে যাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী না আসতে পারে।”
হিরো আলমের দাবি, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সম্বলিত তালিকা সঠিকভাবে দেওয়ার পরও ‘সামাজিক বাস্তবতার’ কারণে তিনি আপিল শুনানিতে তা প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি বলেন, “ভোটারের স্বাক্ষর, গ্রাম-গঞ্চের লোক আমরা এমনিতেই ভয় করি। কেউ সত্য কথা বললে হয় লাশ, না হয় জেলখানায় যেতে হয়, আর না হয় এলাকা ছাড়া।
”উনারা (নির্বাচন কমিশন) যখন ভোটারের কাছে গিয়েছিলেন পুলিশ দেখে এমনিতেই তারা (ভোটার) ভয় পায়। আবার ভোটারদের অনেকে কেউ বিএনপি, কেউ আওয়ামী লীগ দল সমর্থন করে। উনাদের কেউ আমাকে স্বাক্ষর দিয়েছে, কিন্তু সেই সময় সবার উপস্থিতি দেখে হয়ত স্বাক্ষরকরাদের কেউ কেউ অস্বীকার করেছে, যে স্বাক্ষর দেননি।”
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে হিরো আলম বলেন, “আমরা সবাই সত্যি কথা বলি না বলে দেশের আজ দুর্দশা। সবাই যদি একত্রিত হয়ে বলি যে, এই আইন মানি না। কিন্তু ভয়ে কেউ সত্য কথা বলি না। তবে জন্মের পর মৃত্যু আছে। সত্যের পথে যদি জীবন দিতে পারি, তাতে কোনো ভয় নেই। তাই আমরা একদলে এক জোটে।”
ঢাকা-১৫ ও ঢাকা-১৭ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র দাখিল করে প্রত্যাখ্যাত হওয়া মোহাম্মদ আব্দুর রহিম অভিযোগ করেন, এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর যাচাই করতে গেলে তদন্তকারীদের তারা বিশ্বাস করেনি। আবার তদন্ত কর্মকর্তারা প্রতিপক্ষের প্রভাবে মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছে।
ঢাকা-৮ আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া মাহমুদুল হাসান বলেন, “নির্বাচন কমিশন যেসব শর্ত দিয়েছিল সব শর্তই পূরণ করেছি। তারা শর্তে প্রস্তাবকারী এবং সমর্থনকারীর স্বাক্ষর চেয়েছিল, কিন্তু এলাকা নির্দিষ্ট করে দেয়নি। কিন্তু মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় আমার প্রস্তাবকারী-সমর্থনকারী অন্য আসনের ভোটার বলে বাতিল করা হয়েছে। এতে আমার প্রতি অবিচার করা হল।”
স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে আসনের এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জমা দেওয়ার বিধান থাকলেও নবম সংসদ নির্বাচনে অনেকেই তা মানেননি।
আলোচনায় অন্যদের মধ্যে ফরওয়ার্ড পার্টির আহ্বায়ক আ ব ম মোস্তফা আমীন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রেজাউল হোসেন ও জিয়াউর রহমান, অ্যাডভোকেট ফারুক রেজাসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’ সংশোধন করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী আসনের ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করার বিধান যুক্ত হয়।
গত বছর মাঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) অন্তত ৩৫টি অনুচ্ছেদে সংস্কার আনার প্রস্তাবগুলোর মধ্যেও ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক তালিকা জমার বিধান বাতিলের সুপারিশ ছিল।
এ বিষয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের যুক্তি ছিল- যারা স্বাক্ষর দেন তাদের অনেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন; ভয়ে সমর্থনসূচক স্বাক্ষরের বিষয়টি অস্বীকার করেন। আবার অনেক ভোটার অর্থ লেনদেনে জড়িয়ে পড়েন।
তবে আরপিও সংশোধনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর জমার নিয়ম আগের মতই থেকে যায়।