সরকারের হাত থাকলে হাওলাদার বাদ কীভাবে, প্রশ্ন কাদেরের

আসন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিলে সরকারের সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ বিএনপির পক্ষ থেকে তোলা হয়েছে, তা নাকচ করে দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2018, 08:13 AM
Updated : 3 Dec 2018, 08:20 AM

তার প্রশ্ন, সরকারের সম্পৃক্ততা থাকলে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল হল কিভাবে?   

একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের মনোনয়নপত্র বাছাই হয় রোববার। বাছাইয়ে বাদ পড়ে ৭৮৬ টি মনোনয়নপত্র, যার মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলটির নামিদামি অনেকেই রয়েছেন।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অভিযোগ, বাদ পড়াদের মধ্যে ৮০ জনই তাদের প্রার্থী।

বিএনপি জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বতিলের বিষয়টি ‘সরকারের নীল নকশারই’ অংশ।

রোববার তিনি বলেন, ‘বেছে বেছে’ তাদের জনপ্রিয় প্রতিনিধিদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

রিজভীর অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের সোমবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “মনোনয়ন বাতিলের বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। উই হ্যাভ নাথিং টু ডু।

“নির্বাচন কমিশনের আইন আছে বাতিল করার। সরকার কোনোভাবেই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত না। যদি তাই হত, তাহলে আমাদের সবচেয়ে বড় শরিক দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব বাদ পড়বেন, এটা কি আমরা চাইব?”

তিনি বলেন, “খালেদা জিয়ার বিষয়টি তো আদালত আগেই সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছে। দুই বছরের বেশি যারা কারাদণ্ডে দণ্ডিত, তারা নির্বাচন করতে পারবে না। এটা উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত, উই হ্যাভ নাথিং টু ডু উইথ দ্যাট। আমাদেরও তো অনেকে বাদ গেছে, সেখানে আমাদের কি করার আছে? মনোনয়নপত্র যেসব কারণে বাতিল হয়, সেগুলো তো নির্বাচন কমিশন সবসময় আমলে নেয়। নতুন করে তো কোনো আইন করা হয়নি।”

হাজী সেলিমের মনোনয়ন কেন বাদ হল না এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, “হাজী সেলিমের বিষয়ে যদি বলেন, তাহলে আমরা সেখানে দুজন কেন প্রার্থী দিলাম? আমাদের সন্দেহ ছিল হাজী সেলিম বাদ যেতে পারে। সেজন্য আমরা আমাদের মহানগর দক্ষিণের সভাপতির নাম দুই নম্বরে রেখেছিলাম।

“যেসব জায়গায় আমাদের সংশয় ছিল যে প্রার্থী নির্বাচনি আইনে টিকবে কিনা, সেক্ষেত্রে আমরা কিন্তু দুইজন প্রার্থী দিয়েছি। আমরা ধরে নিয়েছিলাম হয়তো হাজী সেলিম টিকবে না। কিন্তু তিনি আইনে টিকে গেছেন, এখানে তো আমাদের কিছু করার নেই।”

আওয়ামী লীগের জয়ের পথ প্রশস্ত করতেই নামিদামি প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে বলে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মওদুদ সাহেব। খুব বিশ্বস্ত মাধ্যম থেকে জানানো হয়েছিল যে তার মনোনয়নপত্রে কিছু কিছু ত্রুটি আছে। আমি তখন মন্তব্য করেছিলাম মওদুদ আহমদ সাহেব নির্বাচন না করলে আমি খুব কষ্ট পাব। তা নাহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন সেখানে হবে না। আমার মধ্যে কিন্তু এই মানসিকতা কাজ করে না।”

মনোনয়নপত্র বাতিলের প্রতিক্রিয়ায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক অলি আহমেদের অভিযোগেরও জবাব দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, “অলি আহমেদ সাহেব আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি কিছু কিছু সমস্যা তুলে ধরেছিলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ব্যাপারে। আমি তখনই তাকে বলেছি যে ‘দেখুন, এখন তো প্রশাসন, পুলিশ- সব নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তারপরও আমি দলের সেক্রেটারি হিসেবে চেষ্টা করব যাতে আপনার এলাকায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কোনোভাবে ক্ষুন্ন না হয়’। আমি সেখানে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি, আমরা কোনো অবস্থাতেই একতরফা কোনো কিছু সৃষ্টি করে নির্বাচনে লড়াই করতে চাইনা।”

তিনি বলেন, “গণতন্ত্র দুই চাকার একটি সাইকেল। এক চাকা ক্ষমতাসীন দল এবং আরেক চাকা বিরোধীদল। কোন চাকায় কে থাকবে এটা জনগণই সিদ্ধান্ত নিবে। ফাঁকা মাঠে গোল দিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এধরনের ইচ্ছা কখনই পোষণ করেন না। ফাঁকা বুলি দিতে চাই না, আমরা একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই।”

বিএনপির নির্বাচন বর্জনের হুমকির মধ্যে বাস্তবতা কিছু দেখতে পাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে কাদের বলেন, “আমার বিশ্বাস তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর যে হুমকি দিচ্ছে, দেশের জনগণের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। এটাই আমি তাদের কাছে প্রত্যাশা করি। ”

ওবায়দুল কাদের বলেন, “নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিষ্কার হতে থাকে যে কারা নির্বাচনে বিজয়ী হতে যাচ্ছে। এটা আপনারাও বুঝতে পারেন, আমার বলার দরকার নেই। কোনো ধরনের অহমিকা প্রকাশ করতে চাই না। কারোই অহংকার করা উচিত নয়।

“যদিও প্রতিপক্ষের সাজে না এমন এমন অহংকারবোধ তারা করছে। এই অহংকার কিন্তু পতনের কারণ। আজকে কাদের সিদ্দিকী নিজের মনোনয়ন বাতিলের পর হতাশায় কত কথাই না বলছেন। আমরা তাকে কোনো কটূ কথা বলব না।”