ইশতেহার: রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর সম্পদের হিসাবও ‘প্রকাশ করবে’ জাসদ

আগামীতে ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতি ঠেকাতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের সবার সম্পদের হিসাব প্রকাশ বাধ্যতামূলক করার প্রতিশ্রুতি এসেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের নির্বাচনী ইশতেহারে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Dec 2018, 01:22 PM
Updated : 13 Jan 2022, 03:14 PM

একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বুধবার ঢাকার শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, যিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন।  

সরকার এবং সংসদে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা নিয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণের ঘোষণা দিয়ে ইনু বলেন, “রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা-নেত্রী, সচিব, সরকারী অধিদপ্তর-পরিদপ্তর-বিভাগ-সেক্টর কর্পোরেশনের প্রধান থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তা, সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের ক্ষমতাবানদের আয়-ব্যয় এবং সম্পদের বিবরণী প্রতি বছর প্রকাশ করা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির ক্ষেত্র ও উৎসগুলো চিহ্নিত করে সে সকল ক্ষেত্রে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করার প্রচেষ্টা চালানো হবে।”

নির্বাচনী ইশতেহারে মোট ৩৮টি বিষয়কে চিহ্নিত করে দলের আলাদা পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে জাসদ।

 

সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি ৭০ ধারা (ফ্লোর ক্রসিং) সংশোধনের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের ‘স্বাধীন ভূমিকা’ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে সেখানে।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির মত জাসদও বর্তমান এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদকে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এক্ষেত্রে শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী-নারী-ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা-আদিবাসী-স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠন করার পরিকল্পনার কথা বলেছেন জাসদ সভাপতি ইনু।

তিনি বলেন, বর্তমান এক কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের বদলে শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী-নারী-ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা-আদিবাসী-স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে সংসদে উচ্চ কক্ষ গঠন করে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা চালু এবং বর্তমান সংসদ গঠনের জন্য অঞ্চলভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের বদলে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চালু করতে জাসদ ভূমিকা রাখবে।

ক্ষমতায় গেলে গ্রাম-শহর, শিক্ষিত-নিরক্ষর, দক্ষ-অদক্ষ নির্বিশেষে সব কর্মক্ষম নাগরিকের তালিকা করে তাদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাসদ।

প্রতি পরিবারে কমপক্ষে একজনের জন্য বছরে অন্তত ১০০ দিনের কাজের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে মহাজোটে আওয়ামী লীগের এই শরীক দল।

ইশতেহারে বলা হয়েছে, সরকারি শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ এবং সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার চেষ্টা চালাবে তারা।

হতদরিদ্রদের জন্য সব ব্যাংকের মোট আমানতের ৫ শতাংশ দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিতে বিনিয়োগ বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনার কথাও বলেছে জাসদ।

ইনু বলেন, সংসদে আলোচনা এবং বিভিন্ন পর্যায়ের জনগণের মতামত নিয়ে সমন্বিত ‘জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি’ প্রণয়ন করতে চায় তার দল।

এছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিকের সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা রয়েছে বামপন্থী দলটির।

দেশের তিনশ আসনের মধ্যে জাসদ এবার প্রার্থী দিয়েছে সব মিলিয়ে সাতটি আসনে। এর মধ্যে তিন আসনে জাসদ মনোনীত প্রর্থীরা জোটসঙ্গী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। আর দলীয় প্রতীক মশাল নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন জাসদের চার প্রার্থী। এর বাইরে এটি আসনে স্বতন্ত্র হিসাবে সিংহ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাসদের একজন।  

জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর হোসাইন আখতার, মোশাররফ হোসেন, অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত, নাদের চৌধুরী, নুরুল আখতার, সহ-সভাপতি শহীদুল ইসলাম, সফি উদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নইমুল আহসান জুয়েল, সহ-সম্পাদক সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু, ঢাকা মহানগর পশ্চিম জাসদের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুন্নবী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাসদের সভাপতি ইদ্রিস ব্যাপারী

ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।