বেছে বেছে মনোনয়নপত্র বাতিল হচ্ছে: রিজভী

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বতিলের ঘটনাকে ‘সরকারের পরিকল্পনার অংশ’ বলেছে তার দল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2018, 08:29 AM
Updated : 2 Dec 2018, 11:23 AM

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কেবল খালেদা জিয়া নয়, ‘বেছে বেছে’ তাদের জনপ্রিয় প্রতিনিধিদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হচ্ছে।

“এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে বিপুল জনপ্রিয়তা, সেই জনপ্রিয়তা থেকে তাকে দূরে সরানোর যে মাস্টারপ্ল্যান সরকার করেছে, সে নীল নকশার অংশ বলে আমরা মনে করি।”

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের দণ্ড নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তার নামে ফেনী ও বগুড়ার তিনটি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন বিএনপি নেতারা।

এর মধ্যে ফেনী-১ আসনে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র দুই মামলায় দণ্ডিত হওয়ার কারণে বাতিল করে দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এর প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, ঢাকা-৬ আসনে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন, ঢাকা-১ আসনে নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ থেকে সদ্য পদত্যাগী চেয়ারম্যান আবু আশফাক খন্দাকার এবং দিনাজপুর-৩ আসনে জাহাঙ্গীর হোসেনের মনোনয়নপত্রও বাতিল করা হয়েছে।

“এভাবে বেছে বেছে আমাদের জনপ্রিয় প্রতিনিধিদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হচ্ছে।… এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, ধারাবাহিক ঘটনা। সরকার পরিকল্পনা করেছে একতরফা নির্বাচন করবে, গায়ের জোরে নির্বাচন করবে এবং জোর করে ক্ষমতায় থাকবে।”

আবু আশফাক খন্দকার, জাহাঙ্গীর হোসেন ও ইশরাক হোসেনের মনোনয়নপত্র গ্রহণের দাবি জানিয়ে রিজভী বলেন, “সরকার ক্ষমতার মায়ায় যেভাবে বুঁদ হয়ে আছে, ক্ষমতার নেশায় যেভাবে বুঁদ হয়ে আছে, সেখানে শেখ হাসিনা কখনো অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাইবে না।

“তারপরও আমি বলব, সকল বাঁধ ভেঙে জনগণ এগিয়ে আসবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই গানটি- বাঁধ ভেঙে দাও, বাঁধ ভেঙে দাও, জীবনের জয়গার গাও… জীবনের জয়গান গাইতে গাইতে, গণতন্ত্রের জয়গান গাইতে গাইতেই  স্বৈরাচারের সকল বাঁধ ভেঙে  জনগণ অবশ্যই নির্বাচনের দিন ভোট দেবে।”

‘ইসি আকাশের দিকে তাকিয়ে’

আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও নির্বাচন কমিশন তা দেখছে না বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “দেশের বিভিন্ন জেলায় রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে দুই পাশ থেকে ধরে ছিলেন পুলিশের দুইজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। অর্থাৎ পুলিশ কর্মকর্তারা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন, তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন উদাস কবির মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকল, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য কোনো ব্যবস্থা নিল না।

“এসব দেখে মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন হয় অন্ধ না হয় কানা। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কতিপয় নির্বাচন কমিশনার সরকারের পক্ষে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন, আইন-আদালত, বিচারিক প্রক্রিয়া সব কিছুর উপরই সরকার যেন সিন্দাবাদের জ্বীনের মতো সওয়ার হয়ে আছে।”

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন থেকে রিজভী দেশের বিভিন্ন এলাকায় শনিবার গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের তালিকা তুলে ধরে তাদের মুক্তির দাবি জানান। 

অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।