৮০ জনকে বাদ দিয়ে তারা কাজ এগিয়ে রাখল: অলি

মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ৮০ জনের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে এলডিপি নেতা অলি আহমেদ বলেছেন, ক্ষমতাসীনদের জয়ের পথ প্রশ্বস্ত করতেই নানা অজুহাতে তাদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2018, 03:21 PM
Updated : 2 Dec 2018, 04:07 PM

এভাবে চলতে থাকলে ২০ দলের শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকা হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি।

রোববার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলটির অনেক নেতার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায় দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড ও ঋণ খেলাপের দায়ে।

যাচাই-বাছাই শেষে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন ২০ দলীয় জোটের নেতারা।

বৈঠকের পর জোটের প্রধান সমন্বয়ক অলি আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “আজকে যে বাছাই ছিল সেখানে বেগম খালেদা জিয়াসহ ৮০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আমি বলব, এটা বিরোধী দলকে বের করে দেওয়া হয়েছে, ভ্যাকেট করে দেওয়া হয়েছে।

“অর্থাৎ তাদের (আওয়ামী লীগ) জয়লাভ করার পথটা এগিয়ে রেখেছে। এভাবে হলে বিরোধী দলে আমরা যারা আছি, আমাদের পক্ষে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে টিকে থাকা হয়ত সম্ভব হবে না।”

তিনি বলেন, “দেখুন আমরা তো নির্বাচন করতে চাই, নির্বাচনে আছি। এখন প্রার্থী যদি না থাকে তাহলে কাকে নিয়ে নির্বাচন করবেন? ইতোমধ্যে তো ৮০ জন নেই।

“সরকার তো কাউকে ঘরে থাকতে দিচ্ছে না। প্রতিদিন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নির্বাচনের পরিবেশ মোটেও নাই, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নাই। এভাবে ভয়ভীতি ও গ্রেপ্তার হলে আপনারাই বলুন, আমরা কীভাবে নির্বাচন করব। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের কাছ থেকে স্পষ্ট ঘোষণা চাই।”

এই সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “কর্নেল অলি সাহেব বলেছেন, আমরা নির্বাচন করতে চাই, নির্বাচনে আছি। নির্বাচন করব ইনশাল্লাহ।”

নানা অজুহাতে প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে অভিযোগ করে অলি আহমেদ বলেন, “আমরা জাতির কাছে ওয়াদা করেছিলাম, আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। সেই অনুযায়ী ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে নমিনেশন জমা দেওয়া হয়েছে। তবে দুঃখের সাথে বলতে হয়, নমিনেশন জমা দেবার পূর্বে ও পরে জোটের অনেক নেতাকে মিথ্যা মামলা দেখিয়ে জেলে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, যাতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকে।

“এছাড়া আজকে বেগম খালেদা জিয়াসহ ৮০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তার মধ্যে অনেকগুলো ছিল একই ধরনের। যেমন মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন, তারা পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে তার রিসিভ কপি মনোনয়নপত্রের সাথে দেয়া হয়েছে। পদত্যাগ গ্রহণ করবে কি করবে না, এটা সরকারের ব্যাপার। এই অজুহাত দেখিয়ে অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

“আবার অনেকের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, আপনার নাম ঋণ খেলাপির মধ্যে আছে। আদৌ তারা কখনও ঋণ নেননি, অথচ খেলাপির তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আবার অনেকে সরকারি বিধি বিধান মেনে ঋণ পুণঃতফসিল করেছে, এই ধরনের অনেকেও নির্বাচনের অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে।”

এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষর নিয়ে ‘বিভ্রান্তির’ কথা বলে অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে জানান অলি আহমেদ।

তিনি বলেন, “বিএনপির মহাসচিব প্রায় ৬০০ এর উপরে দস্তখত করেছেন। দুই একটা দস্তখত এদিকে ওদিক বাঁকা হতেই পারে। এটা তো সিল মেরে করেননি, হাতেই করতে হয়েছে। এটা রিটার্নিং অফিসারের উচিৎ ছিল ৫ মিনিট সময় দিয়ে বিএনপির কাছ থেকে সঠিক তথ্যটা নেওয়া অথবা আমরা প্রত্যেকটা দলের পক্ষ থেকে যারা নিজের দলের প্যাডে সিল দিয়ে দস্তখত দিয়ে নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছি, সেগুলোর সাথে মিলিয়ে দেখা।

“কোনো কিছু না করে একতরফাভাবে ২০ দলীয় জোটকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ৮০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।”

নির্বাচন কমিশন তাদের কোনো অভিযোগ-দাবি আমলে না নিয়ে ‘সরকারি আদেশ পালন করছে’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সন্ধ্যা ৬টা ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বিএনপির নজরুল ইসলাম খান, খেলাফত মজলিশের মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জামায়াতে ইসলামীর আবদুল হালিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা নুর হোসাইন কাশেমী, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মুসলিম লীগের এএইচ এম কামরুজ্জামান খান, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করীম, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, জাগপার মহাসচিব খোন্দকার লুৎফর রহমান, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, ন্যাপের এম এন শাওন সাদেকী, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, লেবার পার্টির ফারুক রহমান, ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম, এনডিপির মো. আবু তাহের, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) শফিউদ্দিন ভুঁইয়া, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম, পিপলস লীগের সভাপতি গরীবে নেওয়াজ, পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের (পিপিবি)নুরুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।