ভোটকেন্দ্রে গোপনকক্ষে ভোট দেওয়ার যে বিধান রয়েছে, তা যেন কেউ অমান্য না করে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম।
Published : 01 Dec 2018, 02:43 PM
সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের প্রশিক্ষকদের নিয়ে শনিবার এক কর্মশালায় এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
রফিকুল ইসলাম বলেন, “যদি আপনারা কাউকে ব্যালটটা দিয়ে দিলেন, গোপন কক্ষে না গিয়ে সে প্রকাশ্যে ভোট দিল। সে বলতেই পারে, তার ভোট সে দিবে- প্রকাশ্যে দিক আর গোপনে দিক। এটা আপনারা করতে দেবেন না। আপনাদের প্রশিক্ষণার্থীদেরও বলে দেবেন... এ ধরনের কর্মকাণ্ড বেআইনি, এটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।”
ভোটারকে শনাক্ত করে তবেই তার হাতে ব্যালট দেওয়ার তাগিদ দিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “যতক্ষণ না আপনি নিশ্চিত হচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে ভোট দেওয়ার জন্য ব্যালট পেপার ইস্যু করবেন না।”
প্রশিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা মনে রাখবেন, নির্বাচন মানে কিন্তু একদিন। শিডিউলে ৪৫ দিন ৪৬ দিন থাকতে পারে, নির্বাচন মানে কিন্তু একদিন। সেটা নির্বাচনের দিন। এই নির্বাচনের দিন কী হল এইটা যদি ঠিক না হয়, সেটা যদি আইনানুগ না হয়, তাহলে কিন্তু আমরা সবাই প্রশ্নবিদ্ধ হব। কারণ ওই দিনই ভোটার নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সাথে সম্পৃক্ত হবেন।”
রফিকুল ইসলাম বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন কিনা- সেই সংশয়ের কথা পত্রিকার খবরে ঘুরেফিরে আসছে।
“এটা কিন্তু নির্ভর করছে আপনাদের ওপর। আপনি যদি ব্যালটটাকে ঠিকমত সংরক্ষণ করেন, আপনি যদি কেন্দ্রটাকে ঠিকমতো তৈরি করেন। আপনি এবং আপনি যাদের ট্রেনিং দেবেন, তারা যদি দায়িত্বটাকে ঠিকমত পালন করেন, তাহলে কিন্তু ভোটারটা ভোট দিতে পারবেন।”
নির্বাচনী কর্মকর্তাদের আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, “আপনাদের কাছে ছবিসহ ভোটার তালিকা আছে। আপনারা যদি ঠিকমত চিহ্নিত করতে পারেন, যদি আপনারা কাউকে বের করে না দিয়ে তাদের এজেন্টদের ঠিকমত রাখেন, তারা যদি আপনাদের সহায়তা করেন, তাহলে একজনের ভোট অন্য আরেকজন দিতে পারবে না। ফলে প্রত্যেকের ভোট দেওয়ার অধিকার আপনার কেন্দ্রে নিশ্চিত হয়ে যাবে। এটুকুই আপনার দায়িত্ব।”
একজন ভোটারের ভোট বেআইনিভাবে অন্য কেউ দিয়ে দিলেও তার যে ভোট দেওয়ার বিধান আইনে আছে- সে কথা মনে করিয়ে দেন এই নির্বাচন কমিশনার।
“কোনো ভোটার যদি সত্যিকারের ভোটার হয়ে থাকেন, তার ভোট অন্য কেউ দিয়ে থাকলে- তাকে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই ভোট দিতে দিন। জাস্ট অ্যালাউ হিম উইদাউট অ্যানি কোশ্চেন। আপনারা যদি আইনটাকে ফলো করেন, তাহলে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হব না।”
রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের পরিকল্পনা সাজায় নির্বাচন কমিশন ও ইসি সচিবালয়। কিন্তু সত্যিকার অর্থে নির্বাচনের আয়োজনটা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরই করতে হয়।
“আমাদের মান সম্মান ইজ্জত আপনাদের হাতে ন্যস্ত। নির্বাচনের সব দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন।”
নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের শঙ্কা, যারা আপনারা কাজ করেছেন, বা যারা ভবিষ্যতে আপনাদের ট্রেনিং পেয়ে যারা কাজ করবেন, তাদের মাথায় এই আইনকানুন নাও থাকতে পারে। এটা হতেই পারে। সে কারণেই এই ট্রেনিংয়ের আয়োজন। এই ট্রেনিংয়ের উদ্দেশ্য হল আপনাদের দক্ষতার উন্নয়ন করা।”
তিনি বলেন, ভোটার যাতে কেন্দ্রে যেতে পারে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের। ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বরত নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা দেওয়াও তাদের দায়িত্ব।
রফিকুল ইসলাম নির্বাচন কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, “আপনাদের নিরাপত্তার জন্য সবাই থাকবেন। নির্বাচনে একেবারে চৌকিদার থেকে সেনাবাহিনী সবাই থাকবেন। আপনাদের জীবন নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই।”
শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার পরামর্শ দেন এই নির্বাচন কমিশনার।
“আপনার অনুমতি ছাড়া তারা যেন কোথাও যেতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।… মালামাল, ব্যালট সবকিছু দেখে গ্রহণ করবেন। এমনও তো হতে পারে সেখানে ব্যালটের পরিবর্তে সাদা কাগজ চলে গেল। সেজন্য সবকিছু আপনারা বুঝে নেবেন। এগুলো আপনাদের দায়িত্বে থাকবে।
“আপনারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা কারও কাছে এগুলো রেখে কাথাও যাবেন না। তারাও ব্যালটের অপব্যবহার করতে পারে... । সর্বক্ষণ এগুলোর সাথে থাকবেন আপনি।”
ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুর, রাঙামাটি, নওগাঁ, সুনামগঞ্জ ও বান্দরবান জেলার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন এমন চার শতাধিক প্রশিক্ষককে নিয়ে শনি ও রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এই কর্মশালা হচ্ছে।
অন্যদের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, ইটিআই মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য দেন।