ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে যুবরাজ থাকা চার্লস রাজা হয়েছেন। আগামী ৬ মে তার রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠান হতে চলেছে।
৭৪ বছর বয়সী রাজা চার্লস ওইদিন আনুষ্ঠানিকভাবে রাজামুকুট মাথায় পরবেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের এক হাজার বছরের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে বেশি বয়সে সিংহাসনে বসতে চেয়েছেন। তিনি ব্রিটেনের ৪০তম রাজা।
গত বছর সেপ্টেম্বরে রাজা চার্লসের মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যান। এলিজাবেথ দীর্ঘ ৭০ বছর ব্রিটিশ সিংহাসনের দায়িত্ব সামলেছেন।
রাজা হওয়ার পর ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের কিছু নিয়মে পরিবর্তন আনবেন, এমনটাই আভাস দিয়েছিলেন চার্লস। বিশেষ করে প্রিন্স অব ওয়েলস থাকার সময় পরিবেশের সুরক্ষায় জোরাল কণ্ঠে প্রচার চালিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রাজা হওয়ার পর তার সে জোলাল কণ্ঠ পাওয়া যাচ্ছে না।
সামালোচকদের বিশ্বাস, রাজতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে আশঙ্কা থেকে তিনি হয়তো চুপচাপ হয়ে গেছেন।
গত কয়েক বছর ধরে চার্লস নিজেও বলে আসছিলেন, তিনি বেশ ভালভাবে বুঝতে পারছেন রাজা হওয়ার পর যুবরাজ হিসেবে তিনি যেসব প্রচার কাজে অংশ নিচ্ছে সেগুলোর কিছু কাজ তিনি আর করতে পারবেন না।
তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, তার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে আতশবাজির ঝলকানি থাকছে না।
সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজা চার্লস তার মা প্রয়াত রানি এলিজাবেথের মত ব্যাপক প্রশংসিত না হলেও এখন পর্যন্ত তার প্রতি জনসমর্থন ইতিবাচকই বলা যায়।
গত সপ্তাহে এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, অনেক বেশি মানুষ এখন রাজা চার্লসের প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের পরিবর্তে তাকে সমর্থন দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রিটিশ পলিটিক্স বিষয়ে জ্যেষ্ঠ প্রভাষত হারশান কুমারাসিংঘাম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস তিনি সঠিক জায়গাতেই আঘাত করেছেন।
‘‘তিনি তার মায়ের শাসনামলের সব কিছু সম্পূর্ণরূপে বাতিল করেননি। তবে তিনি রাজতন্ত্র এবং ব্রিটেনের উপর নিজের পদচিহ্ন এঁকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।”
যদিও চার্লসের মাথার উপর এখনো কিছু কালো মেঘ রয়ে গেছে।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের আমলে জনসম্মুখে প্রজাতান্ত্রিক মানসিকতা প্রকাশ একেবারেই ছিল না। কিন্তু রাজা চার্লসের আমলে তা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।
রাজা চার্লস ও তার স্ত্রী কুইন অব কনসর্ট ক্যামিলার একটি সফরের সময় ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। ছোট করে হলেও তাদের বিরুদ্ধে লোকজনকে বিক্ষোভ দেখাতেও দেখা গেছে।
আগামী শনিবার ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে সীমিত কিন্তু জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে চার্লসের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান হবে।
ব্রিটিশ রাজার কাজ কী
রাজা যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রপ্রধান। যদিও তার ক্ষমতা প্রতীকী এবং আনুষ্ঠানিক। রাজনৈতিকভাবে রাজাকে নিরপেক্ষ ভূমিকা নিতে হয়।
ব্রিটিশ সরকারের প্রতিদিনের কাজের প্রতিবেদন রাজার কাছে লাল রঙের চামড়ার একটি বাক্সে ভরে পাঠানো হয়। যার মধ্যে থাকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বৈঠকের আগে সে সম্পর্কে ব্রিফিং এবং যদি কোনো কাগজপত্রে রাজার সইয়ের প্রয়োজন হয় সেগুলো।
সাধারণত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী প্রতি বুধবার বাকিংহাম প্রাসাদে গিয়ে রাজার সঙ্গে দেখা করেন এবং তার সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে রাজাকে অবহিত করেন।
ওইসব বৈঠক একান্ত ব্যক্তিগত এবং যেসব কথাবার্তা হয় সেগুলোর আনুষ্ঠানিক রেকর্ড রাখা হয় না।
ব্রিটিশ রাজা কমনওয়েলথেরও প্রধান। ৫৬টি স্বাধীন দেশ নিয়ে কমনওয়েলথ গঠিত। কমনওয়েলথভুক্ত ১৪টি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানও ব্রিটিশ রাজা।
অভিষেক অনুষ্ঠানে যা যা হবে
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে অভিষেক অনুষ্ঠানে রাজা ও কুইন কনসর্টকে মুকুট পরানো হবে।
আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবরি ওই অভিষেক অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন।
অভিষেক অনুষ্ঠানে রাজার মাথায় ও হাতে ‘পবিত্র তেল’ লেপন করা হবে এবং রাজকীয় প্রতীক হিসেবে তিনি রাজদণ্ড ও রাজগোলক গ্রহণ করবেন।
অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত পর্বে রাজা তৃতীয় চার্লসের মাথায় সেন্ট এডওয়ার্ডের মুকুট পরিয়ে দেবেন আর্চবিশপ। স্বর্ণের এই মুকুটটি ১৬৬১ সালে তৈরি করা।
রাজকীয় অনুষ্ঠানের জন্য টাওয়ার অব লন্ডনে যেসব সামগ্রী বা ক্রাউন জুয়েলস সংরক্ষিত আছে তার অন্যতম এই এডওয়ার্ড মুকুট।
শুধুমাত্র অভিষেক অনুষ্ঠানে রাজা বা রানি এই মুকুট পরে থাকেন।
রাজার অভিষেক একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান এবং ব্রিটিশ সরকার এর খরচ বহন করবেন। কারা এই অনুষ্ঠানে অতিথি হবেন সেই তালিকাও সরকার তৈরি করবে।
ব্রিটিশ রাজপরিবার কতটা জনপ্রিয়
রাজা চার্লসের অভিষেকের আগে রাজপরিবার নিয়ে জনগণের মনোভাব জানতে একটি জরিপ পরিচালিত হয়।
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে যুক্তরাজ্যের বেশিরভাগ মানুষ রাজতন্ত্র অব্যাহত রাখার পক্ষে, সংখ্যার হিসাবে যা প্রায় ৫৮ শতাংশ। আর ২৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, তারা চান নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হোক।
ব্রিটিশ রাজ পরিবারের প্রতি ভিন্ন ভিন্ন বয়সের মানুষের মনোভাব ভিন্ন। বয়স্ক লোকজন রাজপরিবারকে সমর্থন দিলেও তরুণদের কাছে তাদের আবেদন তুলনামূলক কম।