আরেক নারীকে ধর্ষণের দায়ে ‘হলিউডি মোগল’ নামে পরিচিত সাবেক চলচ্চিত্র প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টিনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে লস এঞ্জেলেসের জুরিরা।
ওয়াইনস্টিন তার প্রভাব খাটিয়ে কী করে নারীদেরকে ডেকে নিয়ে তাদের ওপর হামলে পড়তেন তা দুই মাস ধরে চলা এই বিচারের শুনানিতে সবিস্তারে উঠে এসেছে।
রায় ঘোষিত হলে ৭০ বছর বয়সী এই অস্কারজয়ীর সর্বোচ্চ ২৪ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের আরেক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে এখন ২৩ বছরের সাজা খাটছেন ওয়াইনস্টিন। দুই বছর আগে নিউ ইয়র্কের এক আদালত তাকে ওই সাজা দিয়েছিল।
ওয়াইনস্টিন সোমবার জেন ডোয়ি ওয়ান নামে পরিচিত এক অভিযোগকারীকে ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়নের দুটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। নারীটির প্রকৃত পরিচয় আড়ালে রাখতে তাকে ‘জেন ডোয়ি ওয়ান’ নামে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
জুরিরা ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসমের স্ত্রী জেনিফার সিবেল নিউসম এবং জেন ডোয়ে টু নামে আরও দুই নারীর অভিযোগের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পেরে তাদের মামলায় ‘মিসট্রায়াল’ হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
আদালতের আপত্তি না থাকলে এ ধরনের ‘মিসট্রায়ালের’ ক্ষেত্রে কৌসুলিরা পুনরায় মামলা দায়ের করতে পারেন।
সোমবার ওয়াইনস্টিনকে জুরিরা জেন ডোয়ি থ্রি নামে আরেক নারীর আনা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছে।
ধূসর স্যুট পরিহিত ‘দ্য শেক্সপিয়ার ইন লাভ’ ও ‘পাল্প ফিকশনের’ মতো চলচ্চিত্রের প্রযোজক এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মিরাম্যাক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ওয়াইনস্টিনকে এদিন লস এঞ্জেলেসের আদালতে বেশ বিমর্ষ দেখা গেছে।
আগে বেশ কয়েকবার আদালতে হাজির হওয়ার সময় তাকে হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে দেখা গেলেও, এদিন তিনি হুইলচেয়ারে ছিলেন না।
ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত ঘোষণার সময় এককালের এই ফিল্ম মোগলকে কিছুক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। পরে একবার তিনি নিজের আইনজীবী ও আরেকবার জুরিদের দিকে তাকান।
চার সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা শুনানিতে আদালত ডজনের বেশি সাক্ষীর সাক্ষ্য শুনলেও সোমবারের রায়ে কেবল চার নারীর ওপর ২০০৫ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে হওয়া অপরাধের অভিযোগগুলোর ফয়সালা হয়।
নয়দিন সময় নিয়ে ওয়াইনস্টিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের তিনটি এবং যৌন নির্যাতনের আরও চারটি অভিযোগের রায় দেন ৮ পুরুষ ও ৪ নারীর জুরি বোর্ড।
সোমবার যে নারীকে ধর্ষণের দায়ে ওয়াইনস্টিন দোষী সাব্যস্ত হলেন, ওই জেন ডোয়ি ওয়ান রাশিয়ায় জন্ম নেওয়া মডেল বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে লস এঞ্জেলেসে ইতালীয় চলচ্চিত্র উৎসব উপলক্ষে বেভারলি হিলস হোটেলে থাকার সময় ওয়াইনস্টিন অযাচিতভাবে তার হোটেলকক্ষে এসে তাকে ধর্ষণ করেন।
রায় ঘোষণার পর এই নারী বলেন, “হার্ভি ওয়াইনস্টিন ২০১৩ সালের ওই রাতে আমার একটি অংশকে চিরজীবনের জন্য ধ্বংস করে দিয়েছেন, যে অংশটা আমি আর কখনোই ফিরে পাবো না।
“বিচার প্রক্রিয়া ছিল নির্মম, ওয়াইনস্টিনের আইনজীবীদের জেরায় আমাকে নরকযন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে, কিন্তু আমি জানতাম, শেষ দেখতে হলে আমাকে এর ভেতর দিয়েই যেতে হবে। আমি পেরেছি। আমার আশা, ওয়াইনস্টিন তার জীবদ্দশায় আর কখনোই জেলখানার বাইরের পৃথিবীটা দেখতে পাবে না।”
২০২০ সালে নিউ ইয়র্কে এক মামলায় হার্ভি ওয়াইনস্টিন দোষী সাব্যস্ত হলে, তা চলচ্চিত্র অঙ্গনে চলা যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে কয়েক বছর ধরে চলা ‘মি টু’ আন্দোলনের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত সৃষ্টি করে।
ওয়াইনস্টিন নিউ ইয়র্কের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।
কয়েক ডজন নারী হলিউডের এই প্রযোজকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও অসদাচরণের অভিযোগ এনেছেন।
আরও পড়ুন: