অর্থনীতি ঠিক করতে সম্পূর্ণ বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে হাজির হওয়া প্রার্থী মিলেইকে বেছে নিয়েছেন আর্জেন্টিনার ক্ষুব্ধ ভোটাররা।
Published : 20 Nov 2023, 12:25 PM
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থী স্বাধীনতাবাদী প্রার্থী হাভিয়ের মিলেই জয়ী হয়েছেন।
রোববারের রান-অফ ভোটাভুটিতে তিন প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ভোটে জয় পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দী আর্জেন্টিনার বর্তমান পেরোনপন্থি অর্থমন্ত্রী সের্হিও মাসা পরাজয় স্বীকার করে নিয়ে মিলেইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
তিন অঙ্কের মুদ্রাস্ফীতি ও ক্রমবর্ধমান মন্দার কারণে আর্জেন্টিনার অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ ভোটাররা অর্থনীতিকে ঠিক করতে সম্পূর্ণ বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে হাজির হওয়া রাজনীতির মূল ধারার বাইরের প্রার্থী মিলেইকে বেছে নিয়েছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, রান-অফের মোট ভোটের প্রায় ৫৬ শতাংশ পেয়েছেন তিনি, মাসা পেয়েছেন ৪৪ শতাংশের কিছু বেশি ভোট।
ভোটের ফল প্রকাশের পর এক ভাষণে মিলেই বলেছেন, “অবক্ষয়ের মডেল শেষ হয়ে গেছে, পেছনে ফেরার আর কোনো বিষয় নেই। আমাদের সামনে পাহাড় প্রমাণ সমস্যা: মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য। পরিস্থিতি সঙ্কটজনক, দোদুল্যমনতার কোনো সুযোগ নেই।”
আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসের কেন্দ্রস্থলে মিলেইয়ের সমর্থকরা রক মিউজিকের তালে নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাস করেন। কিছু আতশবাজিও পোড়ানো হয়।
সালতা প্রদেশ থেকে রাজধানীতে আসা শিক্ষার্থী এফ্রাইন বিবেরোস (২১) বলেন, “আমরা এসেছি এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত উদযাপন করতে। আমি সত্যিই আনন্দিত। মিলেই পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করেন, ভালোর জন্য। মেসা এলে আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ থাকতো না, আমাদের ভবিষ্যৎ ফিরে এসেছে।”
অর্থনীতির ‘শক থেরাপির’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মিলেই। তার পরিকল্পনার মধ্যে আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া, মুদ্রা হিসেবে পেসো বাদ দেওয়া, ব্যয় হ্রাসের মতো বেশ কিছু আমূল পরিবর্তনের প্রস্তাব।
রোববার ভোট দেওয়ার পর রেস্তোরাঁ কর্মী ক্রিস্টিয়ান (৩১) বলেন, “মিলেই নতুন জিনিস, সে একটু অচেনা আর কিছুটা শঙ্কার, কিন্তু এখন নতুন পৃষ্ঠা উল্টানোর সময়।”
মিলেইর সামনে বহু ধরনের চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শূন্য কোষাগার নিয়ে তাকে কাজ শুরু করতে হবে, ১৫০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া মুদ্রাস্ফীতি ও মূলধন নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জের মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচী নিয়ে এগোতে হবে।
কিছু আর্জেন্টাইন এই নির্বাচনকে অপেক্ষাকৃত ‘কম মন্দকে’ বেছে নেওয়ার ভোট বলেছেন। মাসা ও তার পেরনপন্থি পার্টিকে অর্থনৈতিক সংকটের জন্য দায়ী করছেন তারা। তাদের ধারণা, এর বিপরীতে দেশকে মিলেইয়ের কঠিন অর্থনৈতিক সংস্কারের ভেতর দিয়ে যেতে হবে।
মিলেই আর্জেন্টিনার তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। এসব তরুণরা তাদের দেশকে এক সংকট থেকে আরেক সংকটে প্রবেশ করতে দেখে দেখে বেড়ে উঠেছেন।
মিলেইয়ের জয় আর্জেন্টিনার রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে প্রবলভাবে ঝাঁকুনি দিয়েছে। তার জয় দেশটির শস্য, লিথিয়াম ও তেল-গ্যাস বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।
মিলেই চীন ও ব্রাজিলের সমালোচনা করে বলেছেন, তিনি ‘কমিউনিস্টদের’ সঙ্গে কিছু করতে যাবেন না। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীর মিত্রতা গড়ে তোলার পক্ষে।
ভোটের ফল প্রকাশের পর মিলেইর সাফল্য কামনা করেছেন প্রভাশালী প্রতিবেশী ব্রাজিলের বামপন্থি প্রেসিডেন্ট লুয়িজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা। গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প মিলেইকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, “তিনি আবার আর্জেন্টিনাকে মহান করে তুলবেন!”
এদিকে কলম্বিয়ার বামপন্থি প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো বলেছেন, এটি (১৯ নভেম্বর) এই অঞ্চলের জন্য একটি ‘দুঃখের দিন’।