ভোটের ঠিক আগের মাসে এফবিআই হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল তদন্তে নামলে বিপাকে পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্রেট দলের এই প্রার্থী। নানা বিতর্কে পিছিয়ে পড়া রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প তরতর করে উঠে আসেন জনমত জরিপগুলোতে। কিন্তু ভোটের একদিন বাকি থাকতেই আবার উল্টোরথ এফবিআইর।
Published : 08 Nov 2016, 12:20 AM
ভোটের দুদিন আগে এফবিআই বলল হিলারি ‘নির্দোষ’
ভাঙা দেশ জোড়া লাগানোর আমিই শেষ সুযোগ: ট্রাম্প
ট্রাম্প না হিলারি: ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ অঙ্গরাজ্যগুলোতে কে এগিয়ে?
হিলারির ইমেইলে অপরাধমূলক কিছু ঘটেনি- রোববার এফবিআই প্রধান জেমস কোমি কংগ্রেসকে একথা জানানোর পর উদ্যম ফিরে পায় হিলারি শিবির। থমকে যাওয়া পুঁজিবাজারেও সূচক চড়তে থাকে। জরিপগুলোতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাসের মধ্যেও পাল্লা একটু ঝুঁকে পড়ে সাবেক ফার্স্টলেডির দিকে।
মঙ্গলবার ভোটের আগে এফবিআইর চমক দেওয়া প্রতিবেদনের উপর ভর করে শেষ মূহূর্তের প্রচারে ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ রাজ্যগুলোতেই সময় দিচ্ছেন হিলারি। হোয়াইট হাউসে ফার্স্টলেডি হিসেবে আট বছর কাটানো এই নারী এবার ইতিহাস গড়ে দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হয়ে সেই বাড়িতে যাওয়ার প্রত্যাশায় রয়েছেন।
দোদুল্যমান ভোটারের রাজ্যগুলোতে প্রচারে বের হতে বিমানে ওঠার আগে হিলারি পিটসবুর্গে সাংবাদিকদের বলেছেন, বিভাজনের রেখা মুছে দিয়ে ঐক্যবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র গড়াই তার লক্ষ্য।
অন্যদিকে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ধনকুবের ট্রাম্পের ভোটারদের বলছেন, অভিবাসী ও বাণিজ্য সঙ্কটের অবসানে তিনিই ‘শেষ সুযোগ’, আর ভোটাররা যেন এই সুযোগকে কাজে লাগান।
ভোটের আগে শেষ মুহূর্তের জনমত জরিপগুলোর অধিকাংশই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিয়ে আসছিল; কিন্তু এফবিআইয়ের প্রতিবেদনের পর হিলারির পাল্লা দেখাচ্ছে ভারী।
# এবিসি-ওয়াশিংটন পোস্টের জরিপ বলছে, ৪ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন হিলারি।
# বিবিসির জরিপ হিলারি ৪ পয়েন্ট এগিয়ে রেখেছে।
# ফক্স নিউজও হিলারিকে এগিয়ে রেখেছে ৪ শতাংশ পয়েন্টে
কোমি মুখ খোলার আগে রোববার কোনো সমাবেশে হিলারি কিছুই বলেননি এফবিআইর ইমেইল তদন্তের বিষয়ে। কোমির বক্তব্য আসার পর তার প্রচার শিবির চাঙা হলেও তার মুখপাত্র রোবি মুক সিএনএনকে বলেছেন, “ওসব আমরা পেছনে ফেলে এসেছি।”
তবে এতেও হাল ছাড়ছেন ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের ব্যবস্থাপক কেলিয়ানি কনওয়ে। তিনি এবিসি টিভিকে বলেন, “আজ আর আগামীকাল এমন কিছু তার ঘটার সুযোগ নেই যে তিনি (হিলারি) তলা থেকে উঠে আসতে পারেন।”
ট্রাম্প শিবির যাই বলুক, এফবিআই হিলারিকে নির্দোষ বলার পর পুঁজিবাজার চাঙা হওয়ার সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও আশাবাদী হতে থাকেন ডেমক্রেট প্রার্থীকে নিয়ে। বুকমেকারদের বাজির দৌড়েও হিলারি এগিয়ে যান। ‘প্রেডিক্টিট’ এখন হিলারির জয়ের সম্ভাবনা দেখাচ্ছে ৮১ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যেই ভোটের ফল আগাম আঁচ করা যায়। তবে কয়েকটি রাজ্যের ভোটারদের দোলাচল বেশি, আর এই ভোটই ইলেকটোরাল কলেজের নির্ধারক হবে বলে তাদের মন জয়েই শেষ সময়ের মনোযোগ দুই প্রধান প্রার্থীর।
সোমবার ট্রাম্প ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভেনিয়া, নিউ হ্যাম্পশায়ার ঘুরে মিশিগানে গিয়ে প্রচার প্রচার শেষ করবেন।
অন্যদিকে হিলারি পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান হয়ে নর্থ ক্যরোলাইনায় গিয়ে তার প্রচার শেষ করবেন। পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়ায় তার পক্ষে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা।
সরাসরি ভোট নেওয়া হলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সরাসরি নির্বাচিত হন না। সরাসরি ভোটে রাজ্যগুলোর ইলেকটোরাল কলেজের সদস্যরা নির্বাচিত হন। তাদের ভোটে প্রেসিডেন্ট হন।
ইলেকটোরাল কলেজে মোট সদস্য সংখ্যা ৫৩৮ জন। প্রেসিডেন্ট হতে হলে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত করতে হয়। তাই কম ভোট পেয়েও ইলেকটোরাল ভোট বেশি পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার নজির রয়েছে।
দুটি বাদে অন্য সব রাজ্যে যে দল বেশি ভোট পায়, রাজ্যের জন্য বরাদ্দ করা ইলেকটোরাল ভোটের সবগুলোই সেই দল পায়। তবে মাইন ও নেব্রাস্কায় মোট ভোটের সংখ্যানুপাতিক হারে ইলেকটোরাল কলেজের সদস্য নির্বাচিত হন।
ইলেকটোরাল কলেজের নির্বাচিতরা দল থেকে আগেই মনোনীত থাকেন বলে তাদের দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার ঘটনা বিরল; যদিও কিছু রাজ্যে ইলেকটোরাল কলেজে নির্বাচিতদের স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ইলেকটোরাল কলেজে সবচেয়ে বেশি ভোট ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৫টি, এরপরে টেক্সাসে রয়েছে ৩৮টি, নিউ ইয়র্কে ২৯টি।
দুই প্রার্থী এখন যে রাজ্যগুলো চষে বেড়াচ্ছেন, তার মধ্যে নর্থ ক্যারোলাইনায় ইলেকটোরাল ভোট ১৫টি, ফ্লোরিডায় ২৯টি, পেনসিলভেনিয়ায় ২০টি, মিশিগানে ১৬টি, নিউ হ্যাম্পশায়ারে ৪টি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব রাজ্যে দ্বিধাগ্রস্ত ভোটাররাই ঠিক করে দেবেন, হোয়াইট হাউসে যেতে আগামী ২০ জানুয়ারি কে শপথ নেবেন, হিলারি না কি ট্রাম্প।