“প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ইউএনআরডব্লিউএ গাজায় কোনো সহায়তা প্রবেশ করাতে পারেনি। ঘড়ির কাটা টিকটিক করছে।”
Published : 20 Oct 2023, 06:42 PM
গাজা ভূখণ্ডকে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে জীবনধারণের প্রয়োজনী রসদ বন্ধ করে দিয়ে সেখানে ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ চলছেই; দুই সপ্তাহ ধরে এমন অভিযানে তৈরি হয়েছে তীব্র মানবিক সংকট।
রক্তের বন্যা আর খাবার ও চিকিৎসার জন্য হাহাকারের এই পরিস্থিতিকে নরকের সঙ্গে তুলনা করেছে গাজার শরণার্থীদের জন্য কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ।
বিবিসি জানিয়েছে, দুই সপ্তাহ ধরে চলা সংঘাতের মধ্যে ফিলিস্তিনের ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অনেকে স্কুলের ভবন ও শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। বিছানা-তোষক নেই, ঘুমাতে হচ্ছে মাটি বা মেঝেতেই। তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে খাবার পানি ও চিকিৎসার।
গাজাবাসীর দুর্দশা বর্ণনা করে ইউএনআরডব্লিউএ কমিউনিকেশন ডিরেক্টর জুলিয়েট টুমা বিবিসিকে বলেন, ‘তাদের জন্য সময় ফুরিয়ে আসছে’।
গাজাকে ‘নরকের গর্তের’ সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, “সময় ফুরিয়ে আসছে। প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে। দীর্ঘ এই সময় ধরে ইউএনআরডব্লিউএ গাজায় কোনো সহায়তা প্রবেশ করাতে পারেনি। ঘড়ির কাটা টিকটিক করছে।
ফিলিস্তিনিদের জন্য কখন রাফাহ সীমান্ত পয়েন্ট খুলে দেওয়া হবে সেটি নিশ্চিত নয় বলে জানান টুমা।
গাজায় ত্রাণ সহায়তা পাঠালে সেগুলো হামাসের হাতে পড়া ঠেকাতে কী করা যেতে পারে, জানতে চাওয়া হয়েছিল এই কর্মকর্তার কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, “ইউএনআরডব্লিউএ’র কঠোর তদন্ত ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে। এ সংস্থার ১৩ হাজার কর্মী কেবল তাদেরই সাহায্য করে, যাদের আসলে প্রয়োজন। আমরা কয়েক দশক ধরে এটা করে আসছি।”
ফিলিস্তিনের নিবন্ধিত শরণার্থীদের জন্য সেখানে কাজ করে আসছে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বা ‘ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্ক এজেন্সি’। চলমান যুদ্ধে গাজার জন্য সাহায্য নিরবচ্ছিন্ন ও অর্থবহ হওয়া জরুরি বলে মনে করেন এর প্রধান ফিলিপ্পে লাজারিনি।
সংঘাতকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্য এখন ‘অতল গহ্বরের কিনারে’ বলে মন্তব্য করে এই সংঘাত পুরো অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
দুই সপ্তাহ ধরে চলা সংঘাতে ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেখানে মানবিক সহায়তার দরজাগুলো খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার জেনারেল লাজারিনি।
“নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর সংকটে পড়েছে ফিলিস্তিনের ২২ লাখ মানুষ, যাদের অর্ধেকই বাস্তুচ্যুত। পানি নেই; ৪ হাজার মানুষের জন্য চারটি টয়লেট। মেঝেতে বা মাটিতেই তারা ঘুমাচ্ছে। আমরা (খাদের) কিনারে চলে এসেছি। পানি না থাকলে গাজায় সংকট আরও বাড়বে। আমাদের চোখের সামনে বিপর্যয় ঘটছে, সেটি আরও তীব্র হবে।”
বিবিসি জানিয়েছে, প্রতিদিন একজন মানুষের গোসল-খাওয়া ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে ১০০ লিটার পানির দরকার হয়। সংঘাত শুরুর মাথাপিছু ৮৪ লিটার পানি পাওয়া যেত। আর এখন মিলছে মাত্র ৩ লিটার।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে গাজায় সাহায্য পাঠানো না গেলে সেখানে মানবিক বিপর্যয় ঘটবে বলে আগেই সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার আগে প্রতিদিন ত্রাণ সাহায্য নিয়ে ৫০০ ট্রাক প্রবেশ করত গাজায়। জ্বালানিসহ অন্যান্য ত্রাণ পৌঁছে দিত ট্রাকগুলো। এখন সেটিও অনিশ্চিত।
স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, মিশর ও গাজার মধ্যে রাফাহ সীমান্ত পয়েন্টে মিশরের অংশে ৫০টি লরি সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষমাণ। তবে কবে সেগুলো ঢুকবে সেটি নিশ্চিত নয়।
চরম সংকটময় পরিস্থিতিতে এখন কী পরিমাণ সাহায্য দরকার এবং কী পরিমাণ সাহায্য পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেটি অস্পষ্ট বলে জানান ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান। তবে গাজাবাসীর জন্য এখন অন্তত প্রতিদিন ১০০ ট্রাক সাহায্য পাঠানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন-