“ফিলিস্তিনের ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে ঘড়বাড়ি ছাড়তে বলা হয়েছে। ফলে এটি হল সম্মিলিত শাস্তি, যেটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন।”
Published : 20 Oct 2023, 02:50 PM
ইসরায়েল-হামাসের সংঘাতকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্য এখন ‘অতল গহ্বরের কিনারে’ বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রধান ফিলিপ্পে লাজারিনি।
চলমান এই সংঘাত পুরো অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে বলে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
দুই সপ্তাহ ধরে চলা সংঘাতে ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানি থেকে শুরু করে খাবার ও চিকিৎসা সংকটের পরিস্থিতিতে সেখানে মানবিক সহায়তার দরজাগুলো খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার জেনারেল লাজারিনি।
মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিকে কেন্দ্র করে গাজা সংকটে বিশ্ব নেতাদের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানের ঊর্ধ্বে ‘মানবিক বোধটা’ যে জরুরি সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বিশ্ব এখন মানবতা হারাচ্ছে।”
ফিলিস্তিনের নিবন্ধিত শরণার্থীদের জন্য সেখানে কাজ করে আসছে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বা ‘ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্ক এজেন্সি’। চলমান যুদ্ধে গাজার জন্য সাহায্য নিরবচ্ছিন্ন ও অর্থবহ হওয়া জরুরি বলে মনে করেন এর প্রধান।
অপরদিকে সংঘাতের শুরুর দিন অর্থাৎ গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার নিন্দাও জানিয়েছেন তিনি। হামাসের ওই আক্রমণকে ‘ভয়াবহ ও বর্বর গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেন।
“আমি বিশ্বাস করি না যে, এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও শান্তির স্বার্থে এতো মানুষ হত্যা।”
ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবিক আইনকে সম্মান দেখাচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নে লাজারিনি বলেন, “আমরা এখন এমন একটি পরিস্থিতিতে আছি, যেখানে গাজা ভূখণ্ডে সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করা হচ্ছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে আছি, যেখানে ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত বা ঘড়বাড়ি ছাড়তে বলা হয়েছে। ফলে এটি হল সম্মিলিত শাস্তি, যেটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন।
“আমরা ইসরায়েল ও এই সংঘাতের সঙ্গে জড়িত সকলকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছি। সংঘাতে জড়িত যে কারও জন্য এর ব্যতিক্রম নয়।”
তীব্র হচ্ছে সংকট
গাজার মানবিক সংকটের বিষয়ে ইউএনআরডব্লিউএ’র কমিশনার জেনারেল বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর সংকটে পড়েছে ফিলিস্তিনের ২২ লাখ মানুষ, যাদের অর্ধেকই বাস্তুচ্যুত।
“পানি নেই; ৪ হাজার মানুষের জন্য চারটি টয়লেট। মেঝেতে বা মাটিতেই তারা ঘুমাচ্ছে। আমরা (খাদের) কিনারে চলে এসেছি। পানি না থাকলে গাজায় সংকট আরও বাড়বে। আমাদের চোখের সামনে বিপর্যয় ঘটছে, সেটি আরও তীব্র হবে।”
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে গাজায় সাহায্য পাঠানো না গেলে সেখানে মানবিক বিপর্যয় ঘটবে বলে আগেই সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার আগে প্রতিদিন ত্রাণ সাহায্য নিয়ে ৫০০ ট্রাক প্রবেশ করত গাজায়। জ্বালানিসহ অন্যান্য ত্রাণ পৌঁছে দিত ট্রাকগুলো।
কিন্তু চরম সংকটময় পরিস্থিতিতে এখন কী পরিমাণ সাহায্য দরকার এবং কী পরিমাণ সাহায্য পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেটি অস্পষ্ট বলে জানান ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান। তবে গাজাবাসীর জন্য এখন অন্তত প্রতিদিন ১০০ ট্রাক সাহায্য পাঠানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
গত বুধবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, মিশর থেকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ত্রাণ পাঠালে তার দেশ বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
তবে রাফা সীমান্ত দিয়ে এখন পর্যন্ত মিশর থেকে কোনো ত্রাণ গাজায় প্রবেশের খবর পাওয়া যায়নি।