বন্যার পানিতে ভেসে শহরে ঢুকে পড়েছিল কুমির।
Published : 18 Dec 2023, 11:27 AM
রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। যা ওই অঞ্চলে হওয়া এ যাবৎকালের সবচেয়ে মারাত্মক বন্যায় পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা কর্তৃপক্ষের।
সেখানে কোথাও কোথাও এক বছরে গড়ে যে বৃষ্টিপাত হয় তা মাত্র কয়েক ঘণ্টাতেই হয়েছে বলেও কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সোমবার জানিয়েছে বিবিসি।
বন্যার কিছু ছবি অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে। যেগুলোতে দেখা যাচ্ছে, বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে কেয়ার্নস বিমানবন্দর। শহরের মাঝখানে বন্যার পানিতে একটি কুমিরকে সাঁতার কাটতেও দেখা গেছে।
লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে নৌকায় করে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে।
এখন পর্যন্ত বন্যায় কারো মৃত্যু বা নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে আগামী আরো ২৪ ঘণ্টা ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
বন্যার পানিতে বন্দি হয়ে পড়া কয়েকশ মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাড়িঘর ভেসে গেছে, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা। কোথাও কোথাও সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পানীয় জলের সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে।
একটি ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কুইন্সল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে ভারী এ বর্ষণ হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর কেয়ার্সন নগরীতে ২ মিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
কুইন্সল্যান্ডের প্রিমিয়ার স্টেভেন মাইলস এবিসি রেডিওকে বলেন, “আমার দেখা সবচেয়ে খারাপ প্রকৃতিক দুর্যোগ এটি।
“আমি কেয়ার্নসের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, তারা অতীতে কখনো এমন কিছু দেখেননি।
Our SES and FRS crews are working around the clock as ex-Tropical Cyclone Jasper continues to dump huge amounts of rain over the far north.
— Qld Fire & Emergency (@QldFES) December 18, 2023
The SES has responded to an average of more than 40 requests for assistance per hour over the past 24 hours.
This vision is just a sample… pic.twitter.com/ULXgs5dzcF
তিনি আরো জানান, প্রশাসন এই মুহূর্তে বন্যার পানির কারণে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধারে সবচেয়ে বেশি মনযোগ দিচ্ছে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে।
কেয়ার্নস থেকে ১১০ মাইল উত্তরে উজাল উজাল শহরে বন্যার কারণে হাসপাতালের ভেতর পানি ঢুকে যাওয়ায় একটি অসুস্থ শিশুসহ নয়জন হাসপাতালের ছাদে রাত কাটিয়েছে। রোববার রাতে উদ্ধারকর্মীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি।
পরে সোমবার তাদের উদ্ধার করে আনা হয়। তবে শুধু ওই নয়জনকেই নয় বরং পুরো শহরের সব বাসিন্দাকে উদ্ধার করা প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রিমিয়ার মাইলস।
বলেন,“তারপর আমাদের পানীয় জল, সুয়ারেজ, বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ নিয়ে ভাবতে হবে। অনেক অনেক রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা আকাশ পথের সুবিধাও পাচ্ছি না।”
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে সোমবার দিনভরও ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে অধিক উচ্চতার ঢেউয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছে। এ সময়ে বেশিরভাগ নদী স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় বয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার নাগাদ বৃষ্টিপাত কমে আসতে পারে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
গত কয়েক বছরে অস্ট্রেলিয়ায় একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে। কখনো তীব্র খরা আবার কখনো ভয়াবহ দাবানলের সঙ্গে দেশটিকে লড়াই করতে হচ্ছে। টানা কয়েক বছর ধরে নজিরবিহীন বন্যাও হচ্ছে। সেইসঙ্গে দেশটির বিখ্যাত গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ এ ছয়বার গণহারে কোরালের মৃত্যু হয়েছে।
ভবিষ্যতে আরো বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে অধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)।