রাশিয়া তার আকার, আকাশপথে অধিপত্য ও গোলাবারুদের ব্যাপক মজুদ ব্যবহার করে যুদ্ধক্ষেত্রে সাফল্য পাচ্ছে।
Published : 07 Mar 2024, 01:35 PM
ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধের স্রোত শুধু উল্টেই যায়নি, রাশিয়ার দ্রুত অগ্রগতিও ঘটছে। ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর আভদিভকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকটি গ্রাম দখল করে ক্রমাগত পশ্চিমদিকে এগোচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, চাপের মুখেও ইউক্রেইনের বাহিনীগুলো ‘অবস্থান ধরে রেখেছে, কিন্তু রাশিয়ার সেনারা এখন যুদ্ধক্ষেত্রের ১১০০ কিলোমিটার বিস্তৃত সম্মুখভাগের পাঁচটি এলাকা দিয়ে আক্রমণ চালাচ্ছে। এরমধ্যে ইউক্রেইনের প্রতিরোধকারী সেনারা দোনেৎস্ক অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আক্রমণের মুখে পড়ছে।
পোকরোভস্ক, কোস্তিনতিনিভকা ও ক্রামাতোর্স্ক শহরের বাসিন্দারা এখন দ্রুত অগ্রসর হওয়া রুশ বাহিনীর মুখোমুখি হচ্ছে, কোথাও কোথাও তাদের অধীনে চলে গেছে।
অগ্রসরমান রুশ বাহিনী কোস্তিনতিনিভকা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে থাকলেও শহরটি আসন্ন হুমকির লক্ষণে ছেড়ে গেছে। শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কে বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে জর্জরিত অন্তত একটি বাড়ি আছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শহরের ট্রেন স্টেশনটি ধ্বংস হয়ে গেছে, পাশের গির্জাটি ধসে পড়েছে।
উদ্বেগ সাবেক সোভিয়েত আমলের শিল্প শহরটির শীতল বাতাস ভরে তুলেছে। রাশিয়া সময় নিয়ে ইউক্রেইনের শহরগুলো ধ্বংস করে সেগুলো দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
কোস্তিনতিনিভকার কাছেই একটি উপত্যকায় বেশ কিছু বড় জলাশয় আছে। এই প্রাকৃতিক বাধাগুলো রুশ বাহিনীর অগ্রগতি রোধ করে ইউক্রেইনের সেনাদের অবস্থান সংহত রাখবে বলে আশা কিইভের।
বেশ কিছু এলাকা থেকে তাড়াহুড়া করে বিশৃঙ্খলভাবে পিছিয়ে আসার পর ইউক্রেইনের জেনারেলরা ভাবছেন, ‘সাময়িকভাবে’ কিছু এলাকা ছেড়ে আসলেও দীর্ঘ মেয়াদি যুদ্ধে তারা আবার ওইসব অঞ্চল মুক্ত করতে পারবেন।
পুরো যুদ্ধক্ষেত্রজুড়ে কিছু মানুষ আছে যাদের ইউক্রেনীয়রা গালি দিয়ে ‘ঝুদান’ বলে। এই শব্দটার অর্থ ‘অপেক্ষমাণ’। রাশিয়ার বাহিনীর জন্য অপেক্ষা করে থাকা রুশপন্থিদের বোঝাতে এই শব্দটা ব্যবহার করে ইউক্রেইনীয়রা।
পুরো ইউক্রেইন যুদ্ধকবলিত অঞ্চল হলেও পূর্বাঞ্চলের অন্য চারটি অঞ্চলসহ দোনেৎস্ক হল যুদ্ধক্ষেত্র। এই অঞ্চলের গভীর বন, বিস্তৃত রুক্ষ ভূখণ্ড দিয়ে যুদ্ধ এগিয়ে আসছে দ্রুত। এখানে ৪০ কিলোমিটার দূরে থেকেও কামানের ভারী গর্জন শোনা যায় আর এ শব্দ থামার কেনো লক্ষণ নেই।
সম্প্রতি রাশিয়ার দখল করা শহর আভদিভকার দিক থেকে এবং ২০১৪ সাল থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা শহর হরলিভকার দিক থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডুলি এগিয়ে আসছে। রাশিয়া তার আকার, আকাশপথে অধিপত্য ও গোলাবারুদের ব্যাপক মজুদ ব্যবহার করে যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রসর হচ্ছে। আর এ সময়টিতেই ইউক্রেইনে পশ্চিমা সামরিক সহায়তা কমে গেছে অথবা অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মারপ্যাচে আটকা পড়ে আছে।
রাশিয়ার বাহিনীগুলো যদি দোনেৎস্ক অঞ্চলে আরও গতি অর্জন করে ক্রমেই পশ্চিম দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে শেষ পর্যন্ত কোথায় থামবে তারা- এর উত্তর দেওয়া ইউক্রেইনীয়দের পক্ষে ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: