তাইওয়ানের হাত ছেড়ে চীনের বন্ধু হচ্ছে হন্ডুরাস?

বিশ্বে তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেওয়া ১৪ টি দেশের মধ্যে হন্ডুরাস একটি। হন্ডুরাস চীনের দিকে ঝুঁকলে এ সংখ্যা ১৩ তে নেমে আসবে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2023, 04:21 PM
Updated : 15 March 2023, 04:21 PM

মধ্য আমেরিকার দেশ হন্ডুরাস চীনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। যা তাইওয়ানের জন্য নিশ্চিতভাবেই খারাপ খবর।

কারণ, বিশ্বে তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেওয়া ১৪ টি দেশের হন্ডুরাস তার একটি। এমনকী, তাইওয়ানের সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ানের স্বাধীনতায় এখনও স্বীকৃতি দেয়নি|

এখন হন্ডুরাস চীনের দিকে ঝুঁকলে তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের সংখ্যা মাত্র ১৩ টিতে নেমে আসবে।

তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করলেও চীন দ্বীপটিকে তাদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ভূখণ্ড মনে করে, যারা একদিন পুনরায় মিলিত হবে। এজন্য প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছে বেইজিং।

চীনের পররাষ্ট্রনীতি অনেকটাই তাইওয়ানের সঙ্গে বাকি বিশ্বের সম্পর্কের উপর নির্ভর করে। যা ‘ওয়ান-চায়না পলিসি’ বা এক চীন নীতি নামে পরিচিত।

দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন দিন দিন আন্তর্জাতিক বিশ্বে প্রভাবশালী শক্তি হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বিশ্ব বাণিজ্যে চীনের আধিপত্য দিন দিন বাড়ছেই।

এ অবস্থায় হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট সিওমারা কাস্ত্রো বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য বৈদেশিক সম্পর্কের বিস্তার। যদিও তাইওয়ান সরকার বার বার হন্ডুরাসকে চীনের ‘পাতা ফাঁদে’ পা দিতে নিষেধ করছে।

তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘আমরা হন্ডুরাসকে খুবই সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করতে এবং চীনের পাতা ফাঁদে পা না দিতে বলেছি। বলেছি তারা যেন হন্ডুরাস ও তাইওয়ানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার মত ভুল সিদ্ধান্ত না নেয়।”

হন্ডুরাসের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলে বেইজিংও লাভবান হবে। কারণ, হন্ডুরাসের সঙ্গে বন্ধুত্বের মাধ্যমে তারা ওই অঞ্চলে নিজেদের পা ফেলতে পারবে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নেতা হিসাবে নিজের ক্ষমতা পোক্ত করেছেন। এমন একটি সময়ে চীন বিশ্বজুড়ে তাদের প্রভাব আরও বিস্তৃত করার চেষ্টা নিয়েছে। পাশাপাশি জিরো কোভিড নীতিতে নাজুক হয়ে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করাও দেশটির লক্ষ্য।

তাই বুধবার আনন্দের সঙ্গেই হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্টের ইচ্ছাকে স্বাগত জানিয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বলেছে, তারাও হন্ডুরাসের সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক’ স্থাপনে আগ্রহী।

এদিকে, তাইওয়ানের জন্য এটা বিপদ সংকেত। কারণ, ২০১৬ সালে সাই ইং-ওয়েন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই দ্বীপদেশটি ৮ কূটনৈতিক মিত্রকে হারিয়েছে।

২০২১ সালে হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট হন কাস্ত্রো। তিনি জানান, তিনি তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চীনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। যা তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অংশ।

চীনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলে তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করবেন কিনা সে বিষয়ে হন্ডুরাস প্রেসিডেন্ট নির্দিষ্ট করে কিছু জানাননি।

যদিও ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তিনি সম্পর্ক বজায় রাখার কথাই বলেছিলেন।

কাস্ত্রোর চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছার কথা ঘোষণার কয়েক সপ্তাহ আগে তার সরকারের পক্ষ থেকে একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য চীনের সঙ্গে আলোচনার কথা জানানো হয়েছিল।

এর আগে ২০২১ সালে বেইজিং একই ধরনের একটি প্রকল্পের জন্য হন্ডুরাসকে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে।

চীনের সঙ্গে হন্ডুরাসের সম্পর্ক স্থাপনের আগ্রহের ঘোষণা এমন একটি সময়ে এল যখন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই আগামী মাসে মধ্য আমেরিকায় মিত্র দেশগুলো সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। যে সফরে তার যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার কথাও রয়েছে।

 যা বেইজিং-ওয়াশিংটন উত্তেজনা আরও বাড়াবে বলেই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

সূত্র: বিবিসি