মার্চের সঙ্গে শেষ হওয়া সর্বশেষ ১২টি মাসও এই গ্রহের রেকর্ডকৃত ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ সময়কাল ছিল।
Published : 09 Apr 2024, 02:18 PM
রেকর্ড রাখা শুরুর পর থেকে উষ্ণতম মার্চ মাসের অভিজ্ঞতা হল বিশ্বের। এ নিয়ে গত টানা ১০ মাস ধরে প্রতিটি মাসেই তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড হল।
মঙ্গলবার এমনটিই জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ পরিষেবা।
ইইউয়ের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সিথ্রিএস) এক মাসিক বুলেটিনে জানিয়েছে, আগের বছরগুলোর সংশ্লিষ্ট মাসের তুলনায় গত ১০ মাসের প্রত্যেকটি বিশ্বের উষ্ণতম মাসের রেকর্ড গড়েছে।
মার্চের সঙ্গে শেষ হওয়া সর্বশেষ ১২টি মাসও এই গ্রহের রেকর্ডকৃত ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ সময়কাল ছিল। সিথ্রিএস জানিয়েছে, ২০২৩ এর এপ্রিল থেকে ২০২৪ এর মার্চ পর্যন্ত গড় তাপমাত্রা ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত প্রাক-শিল্প সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস উপরে ছিল।
“ব্যাতিক্রমী রেকর্ডসহ (তাপমাত্রার) এই দীর্ঘ মেয়াদি প্রবণতা আমাদের খুব উদ্বিগ্ন করছে,” রয়টার্সকে বলেছেন সিথ্রিএসের উপপরিচালক সামান্থা বার্জেস।
“মাসের পর মাস ধরে এ ধরনের রেকর্ড সত্যিই দেখাচ্ছে আমাদের জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে আর তা দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে।”
রয়টার্স জানিয়েছে, বিজ্ঞানীরা সিথ্রিএসের ভাণ্ডারে থাকা ১৯৪০ সাল পর্যন্ত তথ্য অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে তুলনামূলক পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হন গেল মাসটি প্রাক-শিল্প যুগের সময় থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে উষ্ণ মার্চ ছিল।
ইতোমধ্যেই ১৮৫০ সালের পর থেকে ২০২৩ এই গ্রহের সবচেয়ে উষ্ণ বছর ছিল। বছরটিজুড়ে চরম আবহাওয়া আর ব্যতিক্রমী তাপমাত্রা বহু বিপর্যয়ের কারণ হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাজনের বৃষ্টিবন অঞ্চলে খরা দেখা দেয়, তার মধ্যেই জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত ভেনেজুয়েলায় রেকর্ড সংখ্যক দাবানল শুরু হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় খরায় ব্যাপক ফসলহানি হয় আর তার ফলে লাখ লাখ মানুষ অনাহারের মুখোমুখি হন।
দক্ষিণ গোলার্ধে উষ্ণ পানির কারণে ব্যাপকহারে প্রবাল বিলীন হওয়ার একটি ঘটনা সম্ভবত শুরু হচ্ছে, গত মাসে এমন সতর্কতা জানিয়েছেন সমুদ্র বিজ্ঞানীরা। এটি এই গ্রহের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির ইঙ্গিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তারা।
সিথ্রিএস জানিয়েছে, অস্বাভাবিক তাপমাত্রার প্রাথমিক কারণ মানুষের কারণে তৈরি হওয়া গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমণ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে এল নিনো; আবহাওয়ার এই ধরনটি পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের উপরিতলের পানিকে উষ্ণ করে তোলে।
ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে এল নিনো সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠার পর এখন দুর্বল হতে শুরু করেছে, এর ফলে চলতি বছরের শেষ দিকে উষ্ণতার এই ধারার পতন শুরু হতে পারে।
কিন্তু মার্চে এল নিনো প্রভাব কমতে শুরু করলেও বিশ্বের সমুদ্রগুলোর উপরিতলের গড় তাপমাত্রা আগের যে কোনো মাসের তুলনায় রেকর্ড উচ্চতায় ছিল এবং সামুদ্রিক বাতাসের তাপামাত্রাও অস্বাভাবিক বেশি ছিল বলে সিথ্রিএস জানিয়েছে।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গ্রান্থাম ইনস্টিটিউটের জলবায়ু বিজ্ঞানী ফ্রেডেরিক অটো বলেন, “তাপমাত্রা বাড়ার প্রধান কারণ জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে হওয়া নির্গমণ।”
এসব নির্গমণ হ্রাস করতে ব্যর্থ হলে পৃথিবী উষ্ণ হতেই থাকবে আর তার ফলে আরও তীব্র খরা, দাবানল, দাবদাহ ও ভারি বৃষ্টিপাতের ঘটনা বাড়তে থাকবে।
আরও পড়ুন: