রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর কাছের ক্রোকাস সিটি হলে কনসার্ট আয়োজনে হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪৩ হয়েছে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে বুধবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। কারণ, এখনও খোঁজ মিলছে না আরও ১৪৩ জনের।
যাদের খোঁজে স্বজনরা রাজধানীর এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতলে ছুটে বেড়াচ্ছেন বলে জানায় বিবিসি।
গত শুক্রবার চার বন্দুকধারী কানায় কানায় পূর্ণ ক্রোকাস সিটি হলের দর্শক গ্যালারির দিকে লক্ষ্য করে প্রথমে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। তারপর পেট্রোল ঢেকে ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
আগুন হলের বেশিরভাগটাই পুড়ে গেছে। যে কারণে অনেক মৃতদেহের পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
মস্কোর কাছের শহর লিউবেরৎসির বাসিন্দা ৪২ বছরের ওলেগ শিখভৎসেভ তার স্ত্রী ও ১৯ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে গত শুক্রবার সোভিয়েত আমলের রক ব্যান্ড দল ‘দ্য পিকনিক’ এর গান শুনতে ক্রোকাস সিটি হলে গিয়েছিলেন। যখন হামলা শুরু হয় তখন ভেন্যুর একদম সামনের দিকে ছিল পরিবারটি।
গুলি আরম্ভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওলেগ তার স্ত্রী ও মেয়েকে আড়াল করে দাঁড়ান। তার স্ত্রী পিঠে আঘাত পান এবং মেয়ে গুলিবিদ্ধ হন।
সে অবস্থায় মা-মেয়ে হল থেকে কোনো মতে বাইরে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। আহত অবস্থায় তারা যখন সড়কে উঠে আসেন তখন সড়ক দিয়ে গাড়িতে করে যাওয়া অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দেন।
চিকিৎসকরা ওলেগের মেয়ের শরীর থেকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গুলি বের করে। তার স্ত্রীরও চিকিৎসা চলছে। কিন্তু হামলার পর থেকে ওলেগের স্বজনরা তার খোঁজ আর পাচ্ছেন না।
তারা বিবিসিকে বলেন, তারা ওলেগের মোবাইল ফোনে কল দিয়েছেন। কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করছে না।
ওলেগের স্বজনরা যখন নানা ভাবে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন তখন তারা এক ব্যক্তির দেখা পান যিনি ক্রোকাস হলে আগুন জ্বলার সময় সেখান থেকে আহতদের বের করে আনতে সাহায্য করেছিলেন। তারা ওলেগের ছবি ওই ব্যক্তিকে দেখালে তিনি বলেন, তিনি এক ব্যক্তিকে হল থেকে বের করে এনেছেন যিনি দেখতে ওলেগের মত।
এ কথা জানার পর ওলেগের স্বজনরা বার বার ফোন করে এবং মস্কোর বিভিন্ন হাসপাতলে ঘুরেও ওলেগের খোঁজ পাননি।
এমনকি কেউ কেউ হামলার দায় স্বীকার করা জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট যে ভিডিও প্রকাশ করেছে সেটি তাদের কাছে পাঠিয়ে বলেছেন, সেখানে ওলেগকে দেখা যাচ্ছে।
কিন্তু স্বজনরা সেটা বিশ্বাস করতে চাইছেন না।
ওলেগ বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন সে তথ্য রুশ কর্তৃপক্ষ এখনও তার পরিবারকে জানায়নি বলেও জানান স্বজনরা।
ওলেগের এক বন্ধু বিবিসিকে বলেন, “এখনও আশা আছে। হয়তো অবিশ্বাস্যভাবে তারা কাউকে মিস করে গেছে। হয়তো ওলেগের অবস্থা গুরুতর, তাই কর্তৃপক্ষ এখনও আমাদের কিছু জানাচ্ছে না।”
রাশিয়ার তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, হলের ভেতর থেকে তারা যেসব পোড়া মৃতদেহ পেয়েছেন সেগুলোর পরিচয় সনাক্তের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।
এ হামলায় জড়িত সন্দেহে চার বন্দুকধারীসহ মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী। তাদের বিচার শুরু হয়েছে।