রাশিয়া-পোল্যান্ড উত্তেজনার মধ্যেই জার্মানি পোল্যান্ডকে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট করেছে।
Published : 23 Jul 2023, 11:23 PM
বিদ্রোহের কারণে রাশিয়া থেকে বিতাড়িত ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনারের যোদ্ধারা বেলারুশে অবস্থান নিয়েছে। তার তাতেই ঘুম হারাম হয়ে গেছে পোল্যন্ড সরকারের।
বেলারুশের সঙ্গে পোল্যান্ডের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ওই অঞ্চলে ওয়াগনার গ্রুপের উপস্থিতিতে তাই দুঃশ্চিন্তায় পড়া পোল্যান্ড সরকার এ মাসের শুরুতে সীমান্তে এক হাজার সেনা জড়ো করেছে।
পোল্যান্ডের উত্তরপূর্বাঞ্চলে বেলারুশের সঙ্গে যে সীমান্ত সেটি অবস্থানগত কারণে ওই অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। ওয়াগনার গ্রুপের বেলারুশে অবস্থান নিয়ে তাই নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
নিউজইউক জানায়, সে গুঞ্জনে জোর হাওয়া দিয়েছে রাশিয়ার একজন আইনপ্রণেতার একটি মন্তব্য। যেখানে তিনি বলেন, ওয়াগনার গ্রুপ ‘সুয়ালকি গ্যাপ’ এর দখল নেওয়ার উদ্যোগ নিতে পারে।
বেলারুশ, লিথুয়ানিয়া, রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদ ওব্লাস্ট এবং পোল্যান্ডের মাঝে অবস্থিত ছোট্ট একটি করিডোর এই ‘সুয়ালকি গ্যাপ’। করিডোরটির দখল নিয়ে বাল্টিক দেশগুলোকে বাকি ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া সম্ভব।
পোল্যান্ডের এই ছোট্ট উপত্যকা এক কারণেই কৌশলগত দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারে ‘সুয়ালকি গ্যাপ’ এর দিকে দীর্ঘদিন ধরেই মস্কোর নজর রয়েছে।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই পোল্যন্ড-রাশিয়া সম্পর্কে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। পোল্যান্ডের ভূমি ব্যবহার করেই পশ্চিমা দেশ থেকে ইউক্রেইনের জন্য সামরিক সহায়তা আসছে।
তবে সম্প্রতি সেই তিক্ততা আরও বেড়েছে। বিশেষ করে, পোল্যান্ড ইউক্রেইনে আক্রমণ করতে চায়, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এমন অভিযোগ করার পর। পোল্যান্ড পশ্চিম ইউক্রেইন দখল করতে চায় বলে গত শুক্রবার দাবি করেন পুতিন।
তিনি বলেন, ‘সামরিক ঐক্যের’ ছদ্মবেশে রাশিয়ার হুমকির কথা তুলে পোল্যান্ড পশ্চিম ইউক্রেইনে সেনা পাঠাতে পারে। আর পোলিশ সেনারা ইউক্রেইনের ভূখন্ডে ঢুকলে সেখানে তারা চিরতরেই থেকে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রে নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোর সদস্য পোল্যান্ড। দেশটি বেলারুশ সীমান্তে সেনা জড়ো করা শুরু করার পর গত শুক্রবার টেলিভিশনে প্রচারিত এক বৈঠকে পুতিন ওয়ারশ’কে বেলারুশে যে কোনওরকম হামলার বিষয়েও সতর্ক করে দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি বিষয়ক পত্রিকা পলিটিকো শনিবার এ খবর প্রকাশ করে।
খবরে বলা হয়, বৈঠকে পুতিন বলেছেন, তার মনে হচ্ছে পোল্যান্ড তাদের দাবি করা ‘ঐতিহাসিক ভূমির’ দখল পেতে চাইছে। তিনি বলেন, পোল্যান্ড ‘ইউক্রেইনের একটি বড় অংশের দখল পেতে চাইছে’ এবং তারা ‘বেলারুশের ভূমি দখলের স্বপ্নও দেখছে’।
“পোল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চল তাদের জন্য স্ট্যালিনের উপহার ছিল।” তিনি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা জোসেফ স্ট্যালিনের কথা বলেছেন।
বেলারুশে যে কোনো ধরনের আক্রমণের বিষয়ে তিনি পোল্যান্ডকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে আরও বলেন, “বেলারুশে কোনো ধরনের আক্রমণকে রাশিয়ায় আক্রমণ করা হয়েছে বলেই বিবেচনা করা হবে। আমরা সর্বশক্তি দিয়ে ওই আক্রমণের জবাব দেব।”
পোলিশ প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাভিয়েৎসকি রুশ প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারির কড়া জবাব দিয়ে গত শুক্রবার টুইট করেন।
পোস্টে তিনি লেখেন, “স্ট্যালিন একজন যুদ্ধাপরাধী, শত-সহস্র পোলিশের মৃত্যুর জন্য দায়ী। আর ঐতিহাসিক সত্য নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে এজন্য তলব করা হবে।”
বেলারুশ সীমান্তে সেনা জড়ো করার ব্যাখ্যাও দিয়েছে পোল্যান্ড। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির পক্ষ থেকে পোলিশ নিউজ এজেন্সি-পিএপি কে বলা হয়, বেলারুশের সামরিক মহড়াই সীমান্তে আমাদের সেনা জড়ো করাকে ন্যায্যতা দিয়েছে।
বেলারুশের সামরিক মহড়াকে তারা ‘সামরিক উসকানি’ বলে বর্ণনা করেছেন।
জার্মানিও এ বিষয়ে কথা বলেছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বোহিজ পিস্টোহিয়াস বলেন, পোল্যান্ডকে নিজেদের পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষায় সহায়তা করতে তারা প্রস্তুত আছেন।
তিনি বলেন, “তারা নেটোর অংশীদার এবং আস্থাভাজন নেটো মিত্র। তাই আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলতে পারি, আমরা প্রস্তুত আছি।”