শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ফিলিপিন্সের সাংবাদিক মারিয়া রেসাকে কর ফাঁকির একটি মামলা থেকে খালাস দিয়েছে দেশটির একটি আদালত।
একই মামলায় তার সংবাদ প্রতিষ্ঠান র্যাপলারকেও খালাস দেওয়া হয়েছে। আদালতের এই রায়কে তিনি সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার জয় বলেছেন।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তার বিরুদ্ধে ‘আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে’ এবং নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে আজকের অবস্থানে আসতে তাকে চার বছরের বেশি সময় ধরে লড়াই করতে হয়েছে।
বুধবার রায় ঘোষণার পর ম্যানিলা থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে রেসা বলেন, ‘‘আজ সেই দিন যেটা দ্রুতই আসবে বলে আমরা আশা করেছিলাম। এবং আজ তথ্য, সত্য ও ন্যায়বিচারের জয় হয়েছে।”
এ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তার ৩৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারতো বলে জানায় বিবিসি।
ফিলিপিন্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তের আমলে ২০১৮ সালে ফিলিপিন্স সরকার রেসা ও তার প্রতিষ্ঠান র্যাপলারের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির মামলাটি করেছিল।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে র্যাপলার মূলধন জোগাড় করছে। আর এর জন্য তারা সরকারকে কোনো কর দিচ্ছে না।
রেসা এবং র্যাপলার কর্তৃপক্ষ ওই অভিযোগ অস্বীকার করে। ফিলিপিন্সের হাতেগোণা যে কয়টি সংবাদ মাধ্যম খোলাখুলি প্রেসিডেন্ট দুতের্তে ও তার নীতির সমালোচনা করেছিল র্যাপলার তার একটি।
ফিলিপিন্সের ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্টস এর পক্ষ থেকে বলা হয়, কর ফাঁকির এই মামলা সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে এবং ভয় দেখাতে কীভাবে আইনকে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং দিন দিন এই প্রবণতা কী হারে বাড়ছে সে কথাই বলছে।
২০২১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রেসার জন্য চার বছরের বেশি সময় ধরে এই লড়াই চালিয়ে যাওয়া মোটেও সহজ ছিল না এবং সামনে তাকে আরো কঠিন লড়াইয়ে নামতে হবে।
রেসাকে সরকারের বিরুদ্ধে যে লড়াই করতে হয়েছে সেটা সম্পর্কে তিনি আগেই সচেতন ছিলেন এবং অতীতে যারা সরকারের দমন পীড়নের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে গিয়ে এ ধরণের লড়াই করেছেন তাদের কাছ থেকে তিনি অনুপ্রেরণা খুঁজে পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘‘মার্টিন লুথার কিং বলেছেন, হ্যাঁ...এটা সময় নেবে।
‘‘নোটিস হাতে পাওয়ার পর আমি সেটি আগাগোড়া ভালো করে পড়েছিলাম এবং আমাদের আদালতে নিয়ে যাওয়ার কোনো কারণ সেখানে ছিল না... আমরা কর ফাঁকি দেইনি... কখনোই না... এটা একটি অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল। কারণ, এটা ফিলিপিন্স কোন পথে যাচ্ছে সেই দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে।”
রেসা ও তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ওমিদিয়ার নেটওয়ার্ক এবং নর্থ বেজ মিডিয়াকে র্যাপলার লেনদেনের যে রসিদটি দিয়েছে সে অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির এক হাজার চারশ ১৮ লাখ ৬০ হাজার পেসো পরিমাণ করযোগ্য আয় হয়েছে। কিন্তু ২০১৫ সালে কর দেওয়ার সময় তারা এ আয় প্রদর্শন করেনি।
রেসার দাবি ছিল, তার প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈধ পথে আর্থিক লেনদেন করেছে। এখানে কোনো করযোগ্য আয় নেই।
ফিলিপিন্স সরকার সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে র্যাপলারের নিবন্ধনও বাতিল করা হয়। সরকার থেকে বলা হয়েছিল, র্যাপলারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দুইজন বিনিয়োগকারী যুক্ত আছেন। যেটা দেশটির সংবিধানের একটি ধারার লঙ্ঘন।
ফিলিপিন্সের সংবিধানে সংবাদমাধ্যমের মালিকানা শুধু দেশটির নাগরিকদের কাছে সীমিত রাখার কথা বলা আছে।
রেসার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুতের্তে প্রশাসন। তারপর ফিলিপিন্সে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে এবং নতুন প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দো মার্কোস জুনিয়রের আমলেও এই সাংবাদিককে বিরুদ্ধে আদালতে শুনানি চলেছে।
ফের্দিনান্দো মার্কোস জুনিয়রের আমলে পরিস্থির পরিবর্তন হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জাবাবে রেসা বলেন, ‘‘ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে আমাদের প্রেসিডেন্ট আজ দাভোসে আছেন। ফিলিপিন্স কোথায় আছে তা বোঝাতে এটা একটি দারুণ সংকেত।
‘‘আমাদের এখনো অনেকটা পথ যেতে হবে..লড়াই এখনো শেষ হয়নি। এবং আমাকে কী কারাগারে যেতে হবে? আশা করি হবে না... আমি আশাবাদী থাকবো। তবে যাই হোক আমি সব কিছুর জন্য প্রস্তুত আছি।”
বিবিসি জানায়, রেসার বিরুদ্ধে আরো কয়েকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। যেগুলোর কোনোটিতে দোষীসাব্যস্ত হলে তাকে কারাগারে যেতে হতে পারে।