যশ পল বলেছেন, মানসিকভাবে এই চাকরি তিনি আর চালিয়ে যেতে পারছেন না, যেখানে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের হত্যায় ভূমিকা রাখতে হয়।
Published : 19 Oct 2023, 12:38 PM
গাজায় সংঘাতের মধ্যে ইসরায়েলকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেওয়া অব্যাহত রাখার যে সিদ্ধান্ত বাইডেন প্রশাসন নিয়েছে, তার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, যিনি বিদেশে অস্ত্র পাঠানোর বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্বে ছিলেন।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ব্যুরোতে কংগ্রেশনাল এবং পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক ছিলেন যশ পল। তার ভাষায়, ‘বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াত্ব’ থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ‘একটি আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে এবং ইসরায়েলকে আরো মার্কিন সহায়তা দেওয়ার এই সিদ্ধান্তকে তিনি সমর্থন দিয়ে যেতে পারেন না।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের প্রতি ওয়াশিংটনের জোরালো সমর্থন নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যেও যে অস্বস্তি কাজ করছে, যশ পলের পদত্যাগে তা সামনে এল, যদিও মার্কিন কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া বিরল।
আরও বিস্তৃতভাবে, এটি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বৈদেশিক নীতি যন্ত্রের মধ্যে ভিন্নমতের একটি অস্বাভাবিক প্রকাশ্য প্রদর্শনী, যা এই ধরনের হতাশার অভিব্যক্তিকে দৃশ্যের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে কাজ করেছে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ব্যুরোতে যশ পল কাজ করে আসছিলেন ১১ বছর ধরে। তিনি বলেছেন, মানসিকভাবে এই চাকরি তিনি আর চালিয়ে যেতে পারছেন না, যেখানে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের হত্যায় ভূমিকা রাখতে হয়।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “হামাস যা করেছে, তার ভয়াবহতা আর নৃশংসতার মাত্রা, সব বিবেচনায় রেখেই আমি বলছি, ইসরায়েল এর প্রতিক্রিয়া যেভাবে দেখাবে বা দেখাচ্ছে, সেখানেই আমার ভয়। ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে আমি স্বীকার করি। কিন্তু তাতে কত ফিলিস্তিনি শিশুকে মারা যেতে হবে, তা নিয়েই আমার প্রশ্ন “
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাস যোদ্ধারা গত ৭ অক্টোবর সীমান্ত পেরিয়ে তিন দিক থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণ অংশে ঢুকে পড়ে। তাদের হামলায় অন্তত ১৩০০ ইসরায়েলি নিহত হয়। দেড় থেকে দুশ জনকে ধরে নিয়ে গিয়ে জিম্মি করে হামাস যোদ্ধারা।
পাল্টা জবাবে ইসরায়েল গাজায় জোর বিমান হামলা শুরু করে, শুরু হয় সর্বাত্মক অবরোধ।
গত ১২ দিনে ইসরায়েলের বোমা হামলায় তিন হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে, আহত হয়েছে অন্তত সাড়ে ১২ হাজার মানুষ। গাজার পরিস্থিতি আগেই নাজুক ছিল, এখন হয়ে উঠেছে ভয়াবহ।
এই পরিস্থিতিতেও বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার যে নীতি নিয়েছে, তাকে ‘এক পক্ষের প্রতি অন্ধ সমর্থন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে যশ পল। তার ভাষায়, ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্ত “অদূরদর্শী, ধ্বংসাত্মক, অন্যায্য এবং মার্কিনিরা প্রকাশ্যে যে মূল্যবোধগুলোকে সমর্থন করে, তার বিপরীত।"
নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, হামাসের ওই হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সামরিক সহায়তা হিসেবে ইসরায়েলকে ১০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার একটি প্রস্তাব তার প্রশাসন প্রস্তুত করছে বলে খবর এসেছে।
বুধবার তেল আবিব সফরে গিয়ে বাইডেন বলেছেন, রাগে অন্ধ হয়ে বাড়াবাড়ি করে ফেলা ইসরায়েলের উচিত হবে না। তবে হামাসকে নির্মূল করার যে লক্ষ্য ইসরায়েল নিয়েছে, তার সঙ্গে পুরো ঐকমত্য ঘোষণা করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ভূমিকার বিরোধিতা করে যশ পল তার পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, "ইসরায়েল এখন যা করছে, যুক্তরাষ্ট্র তাতে যেভাবে সহযোগিতা দিচ্ছে, গাজায় দখলদারিত্ব চালিয়ে যাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের যে সমর্থন ইসরায়েল পাচ্ছে, তা ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন উভয়ের জন্য কেবল আরও দুর্ভোগেরই কারণ হবে। আমার আশঙ্কা, গত কয়েক দশকে যে ভুলগুলো আমরা করেছি, এখন তারই পুনরাবৃত্তি করছি। আমি আর এই প্রক্রিয়ার অংশ হতে চাই না।”
পদত্যাগী এই মার্কিন কর্মকর্তা মনে করেন, ইসরায়েল যেভাবে ২০ লাখ মানুষের শহর গাজায় পানি, খাদ্য ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে, চিকিৎসা সেবার সুযোগ আটকে দিয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত ছিল অন্যরকম। আমেরিকার অস্ত্র যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের হাতে না যায়, আইন অনুযায়ী তা নিশ্চিত করার কথা ছিল। কিন্তু সেসব আইনি সুরক্ষা ব্যর্থ হচ্ছে।