কোভিড বিক্ষোভ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে চীন

চীনের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক পুলিশি উপস্থিতির কারণে কোভিড বিধিনিষেধবিরোধী বিক্ষোভের ইতি ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2022, 09:00 AM
Updated : 29 Nov 2022, 09:00 AM

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের একাধিক সড়কে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতির পাশাপাশি দেশটির কর্তৃপক্ষ কোভিড-১৯ বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।

বেইজিংয়ের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া তিন ব্যক্তি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমনটাই জানিয়েছেন।

এক পুলিশ কর্মকর্তা রোববার রাতের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক বিক্ষোভকারীকে ফোন করে মঙ্গলবার তাকে থানায় উপস্থিত হয়ে তাদের কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে লিখিত দিতে বলেছেন।

আরেক ঘটনায়, এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে তার কলেজ কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করে যেসব স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে সেসব স্থানে সে ছিল কিনা তা জানতে চেয়ে এ বিষয়ে লিখিত জবাব চেয়েছে। 

“আমাদের মধ্যে যে কথোপকথন হয়েছে আমরা মরিয়া হয়ে সেসব ডিলিট করছি। সেখানে এখন অনেক পুলিশ। পুলিশ এসে আমাদের এক বন্ধুর পরিচয়পত্র পরীক্ষার পর তাকে ধরে নিয়ে গেছে। কেন নিয়ে গেছে তা জানিনা আমরা। কয়েক ঘণ্টা পর তাকে ছেড়েও দিয়েছে,” রয়টার্সকে বলেছেন নাম-পরিচয় প্রকাশে রাজি না হওয়া এক বিক্ষোভকারী।

এ প্রসঙ্গে মন্তব্য চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে বেইজিংয়ের জননিরাপত্তা ব্যুরোর সাড়া পাওয়া যায়নি।

বিবিসি লিখেছে, চীনের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক পুলিশি উপস্থিতির কারণে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে শুরু হওয়া কোভিড বিধিনিষেধবিরোধী বিক্ষোভের ইতি ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

সাংহাইয়ে বিক্ষোভের প্রধান রুট বরাবর রাস্তার দুপাশে নীল রঙয়ের বড় বড় দীর্ঘ ব্যারিকেড বসিয়েছে পুলিশ, বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। তারা বিক্ষোভের ছবি তুলতে চেষ্টা করা লোকজনকে বাধাও দিয়েছে এবং তাদের মোবাইল থেকে ছবি মুছে ফেলেছে।

রোববার সাংহাইয়ে এক বিক্ষোভ কভার করার সময় বিবিসির এক সাংবাদিককে আটক করা হয়েছিল। গ্রেপ্তারের সময় এড লরেন্স নামের ওই সাংবাদিককে পুলিশ মারধর করেছিল ও লাথি মেরেছিল বলে জানা গেছে। আটকের কয়েক ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

সাংহাই ও রাজধানী বেইজিংয়ের পাশাপাশি চেংদু ও উহানের মতো বড় বড় জনবহুল এলাকায় লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভের অসংখ্য ছবি অনলাইনে দেখা গেছে।

তবে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকেই এ সংক্রান্ত ছবি-পোস্ট যেন ব্যবহারকারীরা না দেখে বা এ বিষয়ে আলোচনা না করে, তা নিশ্চিতে চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোতে ব্যাপক সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়।

সার্চ রেজাল্ট থেকে লাখ লাখ ছবি সরিয়ে নেওয়া হয়; দেশটির মূলধারার গণমাধ্যমগুলো কোভিড সংক্রান্ত খবর চেপে গিয়ে বিশ্বকাপ এবং মহাকাশে চীনের অভাবনীয় অগ্রগতির খবরকে বেশি প্রাধান্য দেয়।

এদিকে সোমবার কয়েক ডজন বিক্ষোভকরী হংকংয়ের কেন্দ্রস্থল এবং শহরটির চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে চীনজুড়ে হওয়া কোভিড বিধিনিষেধবিরোধী বিক্ষোভের প্রতি সংহতি জানায়।

রয়টার্স বলছে, মহামারী শুরুর পর তিন বছর ধরে কোভিড মোকাবেলায় চীনের নেওয়া কঠোর নীতি নিয়ে ক্ষোভ থেকেই সপ্তাহান্তে চীনের একাধিক শহরে বিক্ষোভ দেখা দেয়।

দশককাল আগে শি জিনপিং চীনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মূলভূখণ্ডে এখন পর্যন্ত হওয়া সবচেয়ে বড় জনঅসন্তোষের দেখা এমন সময়ে মিলল, যখন চীন দৈনিক কোভিড শনাক্তের নিত্যনতুন রেকর্ড গড়ছে, যার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন শহরের বড় অংশজুড়ে নেমে আসছে লকডাউনের খড়্গ।

১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশটি সংক্রমণের বিস্তার রোধে প্রাদুর্ভাব নির্মূল এবং সীমান্তে কঠোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার ‘শূন্য কোভিড নীতি’ অনুসরণ করলেও সেখানে এখন রোগী সংখ্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

বিধিনিষেধ ও লকডাউনের কারণে চীনের অর্থনীতিতে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার দেখা মিলছে, বৈশ্বিক পণ্য সরবররাহ ব্যবস্থাপনায় ব্যাঘাত ঘটছে, অর্থ বাজারের অবস্থাও টালমাটাল হয়ে পড়েছে।

আরও খবর:

Also Read: বিক্ষোভে উত্তাল চীনে নিরাপত্তা জোরদার, সাংবাদিকসহ কয়েকজন গ্রেপ্তার

Also Read: কোভিড: চীনে টানা পঞ্চম দিনের মতো দৈনিক শনাক্তের রেকর্ড