বিধিনিষেধ শিথিল: চীনে হাসপাতালে দীর্ঘ হচ্ছে কোভিড পরীক্ষার লাইন

‘‘আমাদেরকে এটা মেনে নিতে হবে যে, যখনই হোক আমরা কোভিড আক্রান্ত হবই।”

রয়টার্স
Published : 12 Dec 2022, 01:25 PM
Updated : 12 Dec 2022, 01:25 PM

বিক্ষোভের মুখে চীন সরকার নিজেদের কঠোর কোভিড নীতি অনেকটাই শিথিল করার পর দেশটির হাসপাতালগুলোতে পরীক্ষার জন্য জ্বর আক্রান্ত রোগীর লাইন দীর্ঘ হচ্ছে।

সোমবারও সেখানকার ফিভার ক্লিনিকগুলোর বাইরে মানুষের লম্বা লাইন দেখা গেছে বলে জানায় বার্ত‍া সংস্থা রয়টার্স। যা দেশটিতে করোনাভাইরাসের দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

কোভিড-১৯ মহামারীর তিনবছর হয়ে গেছে। টিকা উদ্ভাবনের পর বিশ্ব এখন এই মহামারীকে সঙ্গে নিয়েই চলছে। কিন্তু চীন কিছুদিন আগেও এই মহামারীর বিস্তার রোধে কঠোর লকডাউনকেই প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছিল।

কিন্তু চীন সরকারের ‘জিরো-কোভিড’ নীতির বিরুদ্ধে সম্প্রতি দেশটির নানা অঞ্চলে সাধারণ মানুষ সড়কে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে।

গত মাসে রাজধানী বেইজিংসহ একাধিক নগরীতে বড় ধরনের বিক্ষোভ এবং পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের পর চীন সরকার ‘জিরো-কোভিড’ নীতি থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং গত বুধবার থেকে নতুন নীতি কার্যকর হয়।

দেশটিতে যেসব বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল, আগে কোনও অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বা রেস্তোরাঁয় যেতে কোভিড ‘নেগেটিভ’ সনদ দেখাতে হত, এখন সেটা লাগবে না। কোয়ারেন্টিন সেন্টারে গিয়ে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনও বাতিল করা হয়েছে। দেশের ভেতরে ভ্রমণের বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হয়েছে।

Also Read: চীনে একজনের ওমিক্রন শনাক্তের পর পুরো বিল্ডিং লকডাউন

Also Read: তিব্বতে লকডাউন বিরোধী বিরল বিক্ষোভ, প্রকাশ্যে এল ভিডিও

Also Read: চীনে উঠছে লকডাউন, স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রস্তুতি বেইজিংয়ে

দেশটির একশ ৪০ কোটি মানুষের ভ্রমণের ইতিহাস জানতে সরকার মোবাইলে যে অ্যাপ চালু করেছিল সেটাও বন্ধ করার প্রস্তুতি চলছে।

তার পরিবর্তে কর্তৃপক্ষ জনগণকে ঘরের বাইরে সবসময় ‍মাস্ক পরতে ও টিকা নিতে অনুরোধ করছে।বিশেষ করে বয়স্কদের।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হঠাৎ করে কোভিড বিধিনিষেধ অনেকটাই শিথিলর করে ফেলা চীন এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে এখনো প্রস্তুত নয়।

ফলে সেখানে নতুন করে সংক্রমণের যে ঢেউ দ্রুত বড় হচ্ছে তা সামাল দিতে দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে হিমশিম খেতে হবে। দেশটির অর্থনৈতিক কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হবে।

লিলি লি, চীনের দক্ষিণের শিল্পাঞ্চল গুয়াংজুর খেলনা তৈরির একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনি বলেন, তার অনেক সহকর্মী এবং তাদের পণ্য সরবরাহ ও বিতরণ বিভাগের অনেক কর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।

‘‘এখন সবাই মূলত একযোগে দ্রুত অ্যান্টিজেন পরীক্ষার কিট কেনার জন্য ছুটছে। কিন্তু কোভিডকে নিয়েই চলা যেতে পারে এমন আশাও তারা কিছুটা ছেড়ে দিয়েছে।

‘‘আমাদেরকে এটা মেনে নিতে হবে যে, যখনই হোক আমরা কোভিড আক্রান্ত হবই।”

ক্লিনিকগুলোতে পরীক্ষার জন্য লম্বা লাইন দেখা গেলেও চীনে কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় এখন দৈনিক শনাক্তের হার কমতে শুরু করেছে। গত মাসের শেষ দিকে সেখানে সংক্রমণ চূড়ায় উঠেছিল। ওই সময় একদিনে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার ৫২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

কোভিড বিধি শিথিল করার পরও শনাক্ত কমার মূল কারণ পরীক্ষার হার কমে যাওয়া বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা হঠা‍ৎ করে সংক্রমণের বিস্ফোরণ হওয়ার আশঙ্কাও করেছেন।

চীনে রোববার ৮,৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। বিধি শিথিলের পর গণহারে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়াকে দৈনিক শনাক্ত কমে যাওয়ার কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।