সিএনএন জানায়, পশ্চিম বেইজিংয়ে অবস্থিত ওই ভবনের একজন নারী কর্মীর দেহে শনিবার করোনাভাইরাসের দ্রুত সংক্রামক ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হয়। পরদিন কোনও ধরনের পূর্ব সতর্কবার্তা ছাড়াই মাস্ক পরা কোভিড কন্ট্রোল পুলিশ ওই ভবনের প্রবেশদ্বারে অবস্থান নেয়। তারা কর্মীদের ভবন থেকে বের হতে দিচ্ছে না।
বেইজিংয়ে এই প্রথম কারও দেহে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরন শনাক্ত হল। ওমিক্রন মূল ভাইরাস থেকে কয়েকগুণ দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম।
কয়েকদিন পরই বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিকের আসর বসবে। এদিকে, সারা বিশ্বের মত চীনেও ওমিক্রন ধরন ছড়াতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চীন সরকার অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
গণহারে পরীক্ষা করা হচ্ছে, কোথাও কেউ কোভিড ‘পজিটিভ’ হলে পুরো এলাকা লকডাউন করা হচ্ছে, বিদেশ থেকে কেউ এলে তাকে দীর্ঘ সময় কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে। তারপরও সংক্রমণ আটকে রাখা যাচ্ছে না।
সিএনএন জানায়, বেইজিংয়ে যে নারী ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছেন চীনা কর্মকর্তারা।
ওই তথ্যানুযায়ী, ওই নারী করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে এমন কারো সংস্পর্শে আসেননি। এছাড়া, গত ১৪ দিনের মধ্যে তিনি বেজিংয়ের বাইরে কোথাও যাননি। তারপরও তিনি ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত হওয়ার অর্থ বেইজিংয়ে এরই মধ্যে সেটি ছড়াতে শুরু করেছে।
শীলকালীন অলিম্পিকে যোগ দিতে কয়েকদিন পরই নানা দেশ থেকে হাজারো খেলোয়াড়-কর্মকর্তা চীনে যাবেন। ওমিক্রন মারাত্মক রূপ নিয়েছে এমন দেশের খেলোয়াড়-কর্মকর্তারাও সেই দলে থাকবেন।
স্থানীয়দের থেকে তাদের আলাদা রাখতে ‘অলিম্পিক বাবল’ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এখন স্থানীয়ভাবে ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ায় নগরীর ভেতর এবং বাইরে থেকে আসা ব্যক্তি উভয়ের মাধ্যমেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বেইজিংয়ের ওই নারী ‘পজিটিভ’ হওয়ার পর এখন চীনা কর্মকর্তারা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ওই নারী যেখানে যেখানে গেছেন সেখানে কঠোর লকডাউন আরোপ করা হয়েছে, অফিস ব্লকে লকডাউন দেয়ায় কর্মীদের কর্মক্ষেত্রেই অবস্থান করতে হচ্ছে। বিস্তারিত ‘কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং’ আর গণহারে পরীক্ষা তো আছেই।
সিএনএন জানায়, ওই নারী যে আবাসিক কম্পাউন্ডে বসবাস করেন তার থেকে অলিম্পিক পার্ক মাত্র ১৫ মিনিটের দূরত্বে। ওই এলাকা পুরোটা সিল করে দেয়া হয়েছে এবং সবার পরীক্ষা করা হয়েছে। এমনকি বাতাসে করোনাভাইরাস আছে কিনা সেটাও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
সিএনএন-র একজন প্রতিনিধি ওই এলাকার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে অনেক বড় জায়গা ধরে বেরিকেড দিয়ে রাখতে এবং কাউকে ভেতরে প্রবেশ বা ভেতর থেকে বাইরে বের হতে বাধা দিতে দেখেছেন।
আবাসিক ওই এলাকার ভেতরে লোকজন ভবন থেকে বাইরে বের হতে পারছেন। কিন্তু এলাকার বাইরে যেতে পারছেন না। এমনকি সেখানকার আবর্জনাও এলাকার ভেতরেই রাখা হচ্ছে এবং বিশেষ পোশাক পরা লোকজন সেগুলো সরিয়ে নিচ্ছেন। আশেপাশের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে।
ওই নারী যেখানে কাজ করতেন ওই অফিস ভবন থেকেও কেউ বের হতে পারছেন না। অফিসের সামনে কোভিড পরীক্ষা চলছে। ভবনের ভেতরের সবাইকে পরীক্ষা করে ভবন নিরাপদ ঘোষণা না করা পর্যন্ত কর্মীদের সেখানেই থাকতে হবে।
ওই নারী গত দুই সপ্তাহ কোথায় কোথায় গিয়েছেন তার বিস্তারিত রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। তার মধ্যে সাবওয়ে স্টেশন, পাবলিক বাথরুম, সুপার মার্কেট, শপিং সেন্টার, ডিওর স্টোর, সিনেমা হল, হেয়ার সেলুন, রেস্তোরাঁ, কমেডি ভেন্যু এবং একটি স্কি পার্ক রয়েছে।
ওই সব স্থানে ওই নারীর সংস্পর্শে আসতে পারেন এমন ১৬ হাজারের বেশি মানুষের পরীক্ষা করা হয়েছে এবং সোমবার পর্যন্ত সবার ফল ‘নেগেটিভ’ এসেছে বলে জানায় সিএনএন।
চীনা কর্মকর্তাদের ধারণা, খুব সম্ভবত বিদেশ থেকে আসা চিঠির মাধ্যমে ওই নারী ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন। চীন অবশ্য অনেক আগে থেকেই বিদেশ থেকে আসা পণ্যের মাধ্যমে সেখানে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগ করে আসছে।
যদিও এভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, নানা গবেষণায় দেখা গেছে করোনাভাইরাস বাতাসে ২০ মিনিটের মধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়ে।