সাত মাস ধরে সুদানের সেনাবাহিনী এবং দেশটির শক্তিশালী আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ এর মধ্যে যুদ্ধ চলছে। যে যুদ্ধে ৬০ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
Published : 29 Nov 2023, 04:58 PM
সংযুক্ত আরব আমিরাত সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) কে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে বলে এবার সরাসরি অভিযোগ করেছেন সুদানের সামরিক বাহিনীর একজন শীর্ষ জেনারেল।
এত দিন ধরে সুদানের সামরিক বাহিনী থেকে এ বিষয়ে শুধু ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছিল। তারা বলছিল, প্রতিবেশী দেশ থেকে তাদের দেশে যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। কিন্তু তারা কারো নাম উল্লেখ করেনি।
সাত মাস ধরে সুদানের সেনাবাহিনী এবং দেশটির শক্তিশালী আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ এর মধ্যে যুদ্ধ চলছে। যে যুদ্ধে ৬০ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে পশ্চিমের দারফুর অঞ্চলে জাতিগত দাঙ্গা উসকে দিয়েছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে সুদানের জেনারেল ইয়াসির আল-আতাকে বলতে শোনা যায়, “আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য, সামরিক গোয়েন্দা এবং কূটনৈতিকভাবে সংগ্রহিত যে তথ্য রয়েছে তাতে দেখা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত জানজাউইদকে বিমানে করে সামরিক সহায়তা পাঠাচ্ছে।”
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ওই ভিডিও দেখেছে।
আরব মিলিশিয়া জানজাউইদ থেকেই এক সময় আরএসএফ গড়ে ওঠে। ২০০০ সালের দিকে দারফুরের একটি বিদ্রোহী বাহিনীকে দমনে জানজাউইদ সুদানের সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছিল।
সুদানের সামরিক বাহিনীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে রয়টার্স থেকে যোগাযোগ করা হলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক কর্মকর্তা বলেন, সুদানে যুদ্ধের শুরু থেকেই সংযুক্ত আরব আমিরাত সেখানে ‘নিরবচ্ছিন্নভাবে উত্তেজনা হ্রাস, একটি যুদ্ধবিরতি এবং কূটনৈতিক সংলাপের সূচনার জন্য’ আহ্বান জানিয়ে আসছে।
“এছাড়াও গত জুলাই মাস থেকে শাদের আমদজারাস নগরীতে একটি অস্থায়ী হাসপাতাল স্থাপন করে সুদান ও প্রতিবেশী দেশগুলিতে মানবিক সংকট প্রশসনে মানবিক সহায়তা প্রদান করছে।”
এদিকে জেনারেল আতা অভিযোগ করেন, শাদ, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক (সিএআর) এবং উগান্ডার ভেতর দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত আরএসএফ কে নানা ধরণের রসদ সরবরাহ করে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এ সপ্তাহে শাদের রাজধানী এনজামেনার বিমানবন্দর দিয়ে রসদ সরবরাহ করা হয়েছে। এর আগে আমদজারাস হয়ে রসদ আসতো।
জেনারেল আতা সতর্ক করে দিয়ে আরো বলেন, “আমরা বিদ্রোহীদের সমর্থন ও সহায়তা করা দেশগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে বলতে চাই, আপনারা যা করছেন তার ফল আপনাদের ভোগ করতে হবে।”
একসময় পাশপাশি থেকে দেশ শাসন করা সুদানের সেনাবাহিনী ও আরএসএফ এর মধ্যে গত ১৫ এপ্রিল থেকে ক্ষমতার দখল নিয়ে তীব্র লড়াই শুরু হয়। সম্প্রতি আরএসএফ দারফুর অঞ্চলের চারটি রাজ্য থেকে সেনাবাহিনীকে বিতাড়িত করেছে। যুদ্ধ শুরুর পরপরই তারা দ্রুত রাজধানী খার্তুমের অনেকাংশের দখলও নিয়ে নিয়েছিল।
যুদ্ধের কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে বলেন, যুদ্ধের শুরুতে আরএসএফ যে ধরণের অস্ত্র ব্যবহার করেছে এখন তার থেকে আধুনিক কামানের গোলা এবং ড্রোন ব্যবহার করছে।
এর কারণ ব্যাখ্যায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরএসএফ এর একটি সূত্র বলেছে, তারা ওই সব অস্ত্র সুদানের সামরিক বাহিনীর ঘাঁটি থেকে জব্দ করেছে।
এদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাত উগান্ডাকে ব্যবহার করে আরএসএফ কে রসদ সরবরাহ করছে বলে যে অভিযোগ জেনারেল আতা করেছে তা ‘একবারেই ফালতু’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন উগান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সুদানের সামরিক বাহিনী, শাদ এবং সিএআর থেকে বিষয়ে মন্তব্য করার অনুরোধ করেছিল রয়টার্স। কিন্তু তারা সড়া দেয়নি।
আরও পড়ুন