ভোটের দিন বিভিন্ন জায়গায় সংঘাতে চার পুলিশসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন।
Published : 08 Feb 2024, 05:24 PM
বিচ্ছিন্ন কিছু হামলা ও সংঘাতের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এদিন ডেরা ইসমাইল খান জেলার কুলাচি এলাকায় টহলরত পুলিশের একটি দল লক্ষ্য করে একটি বোমার বিস্ফোরণ এবং গুলি বর্ষণে চার পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। সেখান থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরের একটি এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়ি লক্ষ্য করে বন্দুকধারীদের হামলায় আরো এক ব্যক্তি নিহত হন।
বেলুচিস্তান প্রদশের বিভিন্ন এলাকায় ভোট চলাকালে গ্রেনেড হামলার খবর পাওয়া গেছে। যদিও ওইসব হামলার কারণে ভোট গ্রহণে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। হতাহতের কোনো ঘটনাও ঘটেনি বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সরকে জানান মাকরান বিভাগের কমিশনার সাঈদ আহমেদ উমরানি।
আগের দিন বুধবার বেলুচিস্তান প্রদেশে পৃথক দুইটি বোমা হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন।
নর্থ ওয়াজিরিস্তানের প্রার্থী মহসিন দাওয়ার পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের কাছে (ইসিপি) এক চিঠিতে স্থানীয় ‘তালেবান’ তার এলাকায় কয়েকটি ভোটকেন্দ্রের দখল নিয়ে পোলিং কর্মকর্তা এবং স্থানীয়দের হুমকি-ধামকি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
Large scale rigging is underway in my constituency NA-40 N. Waziristan. It has been difficult to collect information because mobile connections have been shut down. Presiding officers are giving away voting books like peanuts. @ECP_Pakistan has failed to take notice.
— Mohsin Dawar (@mjdawar) February 8, 2024
যদিও নির্বাচন কমিশন বা নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি।
দেশ গভীর অর্থনৈতিক সংকটে, লাগামহীনভাবে বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি, সহিংসতা ও কারচুপির আশঙ্কার মধ্যেই পাকিস্তান জুড়ে বৃহস্পতিবার জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১৭ হাজারেরও বেশি প্রার্থী।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। যদিও নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং প্রচণ্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে ভোট গ্রহণ শুরুর কয়েকঘণ্টা আগে থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোর বাইরে ভোটারদের লম্বা লাইন পড়ে যায় বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
এমনই একজন ৮৬ বছরের বৃদ্ধা মুমতাজ। পাকিস্তান জন্মের আগে যার জন্ম হয়েছে। ইসলামাবাদে একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে এসে তিনি বলেন, “দেশ যেখানে বিপন্ন, কেনো আমি দেরি করবো?”
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়।
ভোট শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রথম বেসরকারি ফলাফল পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুক্রবারের সকালের মধ্যে ফলাফলের পরিষ্কার একটি চিত্র পাওয়া যেতে পারে। তবে অনেক বিশ্লেষকের বিশ্বাস কোনো দলই হয়তো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না।
পাকিস্তানের পরবর্তী সরকার কারা গঠন করবে তা নির্ধারিত হবে এই ভোটে। যেখানে ভোট দেবেন দেশটির ১২ কোটি ৮০ লাখ ভোটার। ভোটারদের প্রায় অর্ধেকের বয়স ৩৫ বছরের কম।
এদিন কেন্দ্রীয় আইনসভার পাশাপাশি চারটি প্রদেশের আইনসভার নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। একজন ভোটার দুটি করে ভোট দেবেন, একটি জাতীয় আইনসভার জন্য অপরটি প্রাদেশিক আইনসভার জন্য।
জাতীয় আইনসভার আসন সংখ্যা ২৬৬টি। এর মধ্যে পাঞ্জাব প্রদেশে আছে সবচেয়ে বেশি, ১৪১টি আসন। সিন্ধু প্রদেশে আছে ৬১টি, খাইবার পাখতুনখওয়ায় ৪৫টি, বেলুচিস্তানে ১৬টি ও রাজধানী ইসলামাবাদ অঞ্চলে ৩টি।
পাঞ্জাব প্রদেশে জয়ী দলই সাধারণত পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও কারারুদ্ধ অন্য বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতারা আদিয়ালা কারাগার থেকে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোট দিয়েছেন। কিন্তু ইমরানের স্ত্রী বুশরা বিবি ভোট দিতে পারেননি, কারণ তাকে গ্রেপ্তারের আগেই পোস্টাল ভোটের প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল।
পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে ইমরান খান ক্ষমতা হারানোর প্রায় দুই বছর পর দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফও এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
‘অবনতি হতে থাকা নিরাপত্তা পরিস্থিতির’ কথা উল্লেখ করে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এদিন ‘দেশজুড়ে অস্থায়ীভাবে মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রাখে’।