দুই বছর পূর্ণ হওয়া যুদ্ধটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের মাটিতে হওয়া সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত।
Published : 24 Feb 2024, 02:56 PM
রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আক্রমণ শুরু করার পর দুই বছর পার হওয়া যুদ্ধের প্রথমদিকের চেয়ে ইউক্রেইনকে এখন বেশ দুর্বল দেখাচ্ছে।
দেশটিতে রাশিয়ার আক্রমণের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি শনিবার। এ দিন দুই বছর পূর্ণ হওয়া যুদ্ধটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের মাটিতে হওয়া সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত।
ঠিক দুই বছর আগে ২০২৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার ট্যাংক ও সেনারা সীমান্ত অতিক্রম করে বীরদর্পে ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভের দিকে এগোতে শুরু করেছিল। ক্রেমলিনের সেরা সমর পরিকল্পনা সত্ত্বেও যুদ্ধের সেই প্রথম কয়েকদিন ও সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেইনীয়রা অপ্রত্যাশিত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তুলনামূলক অনেক শক্তিশালী শত্রুকে প্রতিহত করে রাজধানীর পতন এড়াতে পেরেছিল।
কিন্তু যুদ্ধের তৃতীয় বছর শুরুর এ সময়টিতে আন্তর্জাতিক ত্রাণ ও সামরিক সরবরাহ ধীর হয়ে এসেছে, যুদ্ধক্ষেত্রে যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে। গত গ্রীষ্মে কিইভের শুরু করা বহুল আলোচিত পাল্টা হামলা মুখথুবড়ে পড়েছে আর মস্কো আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে।
ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে তারা পূর্বাঞ্চলের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর আভদিভকা দখল করে ইউক্রেইনের ভেতর দিকে আরও বেশ কয়েক কিলোমিটার এগিয়ে গেছে। এটি নয় মাসের মধ্যে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় জয়। এই জয়ের মাধ্যমে শহরটিতে কয়েক মাস ধরে চলা প্রাণঘাতী লড়াইয়ের অবসান হয়েছে।
দুই বছর ধরে টানা লড়াইয়ে ইউক্রেইনের বহু ছোটবড় শহর, গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। লড়াই করতে করতে দেশটির সেনাদল ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। পশ্চিমা সহায়তা কমে আসায় তাদের গোলাবারুদেও টান পড়েছে। এর মধ্যেই প্রায় প্রতিদিন রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন তাদের ওপর বৃষ্টির মতো আছড়ে পড়ছে। ফলে যুদ্ধে ইউক্রেইনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।
পরিস্থিতি নড়বড়ে হলেও ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির এখনও প্রচুর বন্ধু আছে। ইউক্রেইনের প্রতি সংহতি জানাতে ইতালি,কানাডা ও বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী এবং ইউরোপরীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট শনিবার কিইভে গিয়েছেন। এসব পশ্চিমা নেতার সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার মতো চাপ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করছেন জেলনস্কি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনও কট্টর মিত্র হিসেবেই রয়ে গেছেন, যদিও দেশটির ৬ হাজার ১০০ কোটি ডলারের ত্রাণ ও সামরিক সহায়তা ওয়াশিংটনে রাজনৈতিক কলহের কারণে স্থগিত হয়ে আছে।
২০২৪ সালের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তখন প্রেসিডেন্ট পদে পরিবর্তন আসতে পারে। সেরকম কিছু হলে ইউক্রেইন ও রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ঘন মেঘের ছায়ায় ঢাকা পড়তে পারে, কারণ রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে থাকা ডনাল্ড ট্রাম্প কিইভের প্রতি মার্কিন সমর্থনের ঘোর বিরোধী।
তেমন কিছু হলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বাধীন রাশিয়া বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হবেন, আর তখন তারা ইউক্রেইনের সীমান্তে থেমে নাও থাকতে পারে বলে নভেম্বরের সফরে মার্কিন রাজনীতিকদের সতর্ক করেছেন জেলেনস্কি। তার এই সতর্কবাণীতে মার্কিন রিপাবলিকান রাজনীতিকরা কতোটা উদ্বিগ্ন হয়েছেন তা সময়ই বলে দেবে।
তবে পুতিন জেলেনস্কির এসব দাবিকে বাজে কথা হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছেন। পুতিন এই যুদ্ধকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বৃহত্তর সংগ্রামের অংশ হিসেবে বিবেচনা করেন। আর ক্রেমলিনের অভিজাতদের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে একঘরে করতে চায়। তাই ইউক্রেইনকে নিষ্ক্রিয় করে পশ্চিম অভিসন্ধির লাগাম টেনে ধরতে চায় মস্কো।
বিপরীতে পশ্চিমারা রাশিয়ার আক্রমণকে নির্লজ্জ আগ্রাসন হিসেবে গণ্য করে এটি প্রতিহত করা কর্তব্য মনে করে।
আরও পড়ুন:
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা
রাশিয়ার দ্বিতীয় গোয়েন্দা বিমান ধ্বংসের দাবি ইউক্রেইনের
সমাহিত করতে হবে ‘গোপনে’, নাভালনির মাকে ৩ ঘণ্টার আলটিমেটাম